করোনাকালের গল্প প্রকাশবৃত্তান্ত ॥ তাশরিক-ই-হাবিব


চ্যালেঞ্জই ছিল, কাজটা করে ওঠা। এ কাজে স্বয়ং করোনাই ছিল প্রতিপক্ষ। এর সংক্রমণের ঝুঁকি এখনো আছে, যদিও ভ্যাকসিন গ্রহণ কার্যক্রম সরকারিভাবে শুরু হয়েছে। ২০২০ সালের ৮ মার্চ বাংলাদেশে তিন জন করোনায় আক্রান্ত হন। আর ২৬ মার্চ (২০২০) থেকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে লকডাউন শুরু হয়।সারা বিশ্বেই এর সংক্রমণে অদ্যাবধি চব্বিশ লক্ষাধিক মানুষ মৃত্যুবরণ করেছেন। এই যখন ‘করোনার দিন-কাল’ এর চালচিত্র, তখন বুঝতেই পারা যায়, করোনার মতো বিষয়কে নিও প্যানডামিক জীবনধারার সঙ্গে মিলিয়ে নেওয়া মানুষের জন্য অনাকাঙ্ক্ষিত অথচ অবধারিত বাস্তবতা বৈকি!

এ সময়ে কাউকে গল্প লিখতে বলা- দৃষ্টিকটু ব্যাপারই হয়ত হত, যদি না কেউ এ ব্যাপারে নিজে থেকে আগ্রহী হতেন। বরং পরিবর্তিত জীবন ব্যবস্থা, পারিপার্শ্বিক সমাজের চালচিত্র অবলোকন ও পর্যবেক্ষণ, এমনকি নিজের বোধে সংবেদনার যে নবতর স্পন্দন, একে লেখায় তুলে ধরা অনেক গল্পকারের সহজাত কর্মকাণ্ডের অন্তর্গতই ছিল, যা তাদের সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে আলাপের মাধ্যমে জেনেছি। কাজেই করোনাবিষয়ক প্রথম সংকলন গ্রন্থের কাজ করার পরিকল্পনা এভাবেই ক্রমশ যৌক্তিক ও সহায়ক পরিসরে বাস্তবায়িত হয়েছে।

করোনাকাল বাংলাদেশে শুরু হওয়ার পর এক বছর পূর্ণ হতে আরও সাত দিন বাকি। সোমবার (১ মার্চ) ‌করোনাকালের গল্প বইটি প্রকাশিত হয়েছে বাংলাদেশ, ভারত ও আমেরিকায় বসবাসকারী ৩৭ জন বাঙালি গল্পকারের গল্প নিয়ে। এটি যৌথভাবে সম্পাদনা করেছি স্বনামধন্য কবি-কথাশিল্পী-গবেষক ও কথাকাব্য সম্পাদক শ্রদ্ধেয় সপ্তদ্বীপা অধিকারীর সঙ্গে। ভারতের গল্পগুলো তাঁর সৌজন্যে ও নির্বাচনের মাধ্যমে চূড়ান্ত হয়েছে। তাঁর প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাই।

এ আয়োজনের পরিকল্পনা করেছিলাম বেশ আগেই। গত বছরের মাঝামাঝি পরানকথা সাময়িকীর ফেসবুক পেজে বাংলাদেশের ১২ জন গল্পকারের গল্প নিয়ে প্রথমে আয়োজনটি করি। তখন থেকেই সপ্তদ্বীপা দিদির সঙ্গে এ পরিকল্পনা নিয়ে যোগাযোগ চলছিল। এর আগে দিদির সঙ্গে পরানকথা সাময়িকীর দুই বাংলার তরুণ গল্পকার সংখ্যা ২০২০ সম্পাদনাপূর্বক প্রকাশ করেছিলাম। ফলে এ নতুন আয়োজনের ব্যাপারে আমাদের বোঝাপড়া স্পষ্ট ছিল।

এরপর বই হিসেবে তা প্রকাশের ঘোষণা ফেসবুকে দিই। গল্পকারদের অনেকেই ফেসবুকে প্রকাশিত করোনা বিষয়ক গল্পের ব্যাপারে পরানকথার আয়োজনের প্রতি কৌতূহলী, এমনকি আগ্রহী ছিলেন। ফলে বই হিসেবে বড় পরিসরে আয়োজনের ব্যাপারে তাদের উৎসাহ ও স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ এ আয়োজনকে বেগবান করেছে। এমনকি, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে গল্প পাঠানোর ঘোষণাও চার দফায় নতুন করে দিতে হয়েছে, পরবর্তী দেড় মাসের মেয়াদে । আমি হতবাক হয়েছি কখনো কখনো। যখন এ বইয়ের চূড়ান্ত প্রচ্ছদ প্রেসে ছাপা হয়ে গেছে, এমনকি পাণ্ডুলিপি মেকআপ করেছি পরদিন সকালে ছাপানোর জন্য, সেই রাতেও নতুন গল্প ইমেইলে পেয়ে মানসম্মত গল্প হিসেবে বিবেচিত হওয়ায়। এভাবেই নতুন করে পাণ্ডুলিপি সংযোজনের মতো অতি নাটকীয় পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে। এমনকি, কেউ হয়ত ফেসবুকে করোনা বিষয়ক একটি গল্প লিখেছেন, তার ফেসবুক বন্ধু হিসেবে সেটি চোখে পড়ায় আগ্রহবশত গল্পটি পড়ে প্রাসঙ্গিক বিবেচনা করেছিলাম, তারপর গল্পকারের সম্মতি পেয়ে সেটিকে এ বইতে যুক্ত করেছি। এমন নানা অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার আমাকে ঋদ্ধ করেছে। বিশেষ করে, আমার একাধিক সহপাঠী জীবনে প্রথমবার গল্প লিখেছে আর তা এতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, এমন স্মরণীয় ঘটনাও বারবার মনে পড়ছে।

গত দুই মাস যাবত এ বইটির পাণ্ডুলিপি গ্রন্থনা থেকে আজ একে হাতে পাবার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত আমি প্রচণ্ড উদ্বিগ্ন ছিলাম। কারণ যে প্রত্যাশা নিয়ে কাজটি করেছি, তা বাস্তবায়নে সবচেয়ে বড় ঝুঁকি ছিল আর্থিক ব্যবস্থাপনা। বিশাল বাজেটে কাজটি করতে পরানকথা এগিয়ে এলেও এটি একটি নবীন প্রকাশনা। ফলে এর প্রথম সংস্করণে মাত্র ১০০ কপি বই মুদ্রিত হয়েছে।

আমার জানামতে, বিভিন্ন গল্পকারের লিখিত করোনা বিষয়ক গল্পের এটিই এখন পর্যন্ত সম্পাদিত ও সংকলিত একমাত্র বই। বাংলা ভাষায় তো বটেই, বিশ্বের অন্য ভাষাতেও এ ধরনের বইয়ের সুলুক সন্ধান করে এখনো।

বাংলাদেশ, ভারত ও আমেরিকার ৩৭ জন বাঙালি গল্পকারের গল্প নিয়ে বাংলা সাহিত্যে করোনা বিষয়ক প্রথম গল্প সংকলন ‘করোনাকালের গল্প’ ভুক্ত গল্পকারগণ যথাক্রমে- আরাফাত কবির, এম মনিরুজ্জামান মল্লিক, কাজী লাবণ্য, কেদারনাথ দাস, তাশরিক-ই-হাবিব, দিলারা মেসবাহ, দেবদ্যুতি রায়, নাসিমা আনিস, নীহার চক্রবর্তী, প্রত্যয় হামিদ, প্রদীপ আচার্য, ফারজানা সুরভী, বাপ্পাদিত্য জানা, বাসুদেব সেন, মনি হায়দার, মহি মুহাম্মদ, মাহফুজ পারভেজ, মোহাম্মদ হোসেন, রোমেল রহমান, রুখসানা কাজল, রেদওয়ান খান, লাইজু বাহার, শবনম রুবি, শরিফুল ইসলাম, শাহান আরা জাকির, শিল্পী নাজনীন, সন্তোষ কুমার শীল, সপ্তদ্বীপা অধিকারী, সবিতা বিশ্বাস, সাইফ বরকতুল্লাহ, সাব্বির হোসাইন শোভন, স্বাতী চৌধুরী, সুজাউদৌলা, সুলতানা আজীম, সোলায়মান সুমন, হামীম কামরুল হক।