সাহিত্য চর্চা শুরু হতে পারে অনলাইনে ॥ সাইফুল্লাহ সাইফ


প্রতিশ্রুতিশীল গল্পকার সাইফুল্লাহ সাইফ। পড়েছেন প্রকৌশল বিদ্যায়। এ পর্যন্ত দুটি গল্পগ্রন্থ ( কয়েকটি ডানাকাটা প্রজাপতির উড়ে যাওয়ার স্বপ্ন ও মৃত ও জীবিতের জীবনগুলি) বের হয়েছে। এবারের সাক্ষাৎকার পর্বে পড়ুন তার লেখালেখি নিয়ে।

আপনি তো এতদিন ঢাকার বাইরে থেকে সাহিত্য চর্চা করেছেন। ঢাকার বাইরে থেকে সাহিত্য চর্চা করতে গিয়ে কোনো প্রতিবন্ধকতা হয়েছে কি না?
সাইফুল্লাহ সাইফ : হ্যাঁ, প্রতিবন্ধকতা তো অবশ্যই আছে। যারা ঢাকায় থেকে লেখালেখি করছেন, তাদের সব পত্রিকার সম্পাদক কিংবা সাহিত্যঙ্গনের প্রত্যেকের সঙ্গে সার্কেলটা ভালো থাকে। আর আমরা যারা ঢাকার বাইরে থেকে লেখালেখি করছি তারা এরকম কোনো সার্কেল পাচ্ছি না। নিজেদের মতো করে লেখালেখির চর্চাটা চালিয়ে যেতে হয়। এতে করে মফস্বলের লেখকদের মধ্যে কখনো কখনো লেখার গতি ভালো থাকে, আবার কখনো আগ্রহ হারিয়ে যায়। আর ঢাকায় থেকে যারা লেখালেখি করেন, সেই সার্কেলের কারণে লেখকদের মধ্যে একটা তাগাদা থাকে।তাতে লেখার চর্চাটা আরো বেশি হয়। লেখক সার্কেলের মধ্যে থাকলে হতাশার জায়গাটা বেশি কাজ করে না।

আপনি তো গল্প লিখছেন, গল্প নিয়েই তো আপনার লেখালেখির জগৎ?
সাইফুল্লাহ সাইফ : গল্প নিয়েই লেখালেখির প্ল্যান আমার। গল্প নিয়েই আমার সামনে পথচলা।

আরেকটা বিষয় জানতে চাইব, আমরা যারা সারা বছর সাহিত্যের খোঁজখবর রাখি, আমরা দেখি যে সময়কাল নিয়ে সাহিত্য রচনা কম হচ্ছে…
সাইফুল্লাহ সাইফ : প্রত্যেকটা দেশে সাহিত্যের মেইন স্তম্ভ দাঁড়িয়ে থাকে সমকালীন ঘটনা প্রবাহে। সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজৈনতিক, এই যে কাঠামো, মূলত এর ওপর ভিত্তি করেই মৌলিক লেখার স্তম্ভ তৈরি হয়। সমকালীন চর্চাটা হয়। আমরা যদি আমাদের লেখার মধ্যে পুরনো ঘটনা নিয়ে ঘুরপাক খাই, তাহলে আমাদের লেখার নতুন যে ধারাটা, সেটা তৈরি হবে না। টেকনোলজির এ যুগে সময়কাল নিয়ে লেখা জরুরি। বিশেষ করে যারা তরুণ লেখক, তাদের অবশ্যই সময়কাল নিয়ে লেখা উচিত।

আপনি আপাদমস্তক একজন গল্পকার, কথাশিল্পী। আপনার গল্পের প্রধান উপজীব্য বিষয় কী?
সাইফুল্লাহ সাইফ : উপজীব্য বিষয় হচ্ছে, এখনকার সমাজে আমাদের মধ্যে বড় সমস্যা হচ্ছে অস্তিত্বের সংকট। যেমন আমি থেকেও একটা নেই। ব্যাপারটা এরকম যে, আমার চারপাশে অনেক অনেক মানুষ। কিন্তু ঘরে ফিরলেই আমার কাছে মনে হয় এরা কেউ আমার না। প্রকৃতপক্ষে আমি একা। এরকম একটা শূন্যতাবোধ। আর আমরা আধুনিকতার দিকে যাচ্ছি, আমাদের মাঝে অস্তিত্বসংকট প্রকট হয়ে উঠছে। অস্তিত্বসংকটের যে বোধ, এই বোধটা থেকেই মূলত আমার লেখাগুলোর সৃষ্টি হয়।

এখন তো ডিজিটাল যুগ। দেখা যাচ্ছে যে ফেসবুকে অনেকেই সাহিত্যচর্চা করছেন। সেখানে অনেকেই ভালো ভালো লেখা দিচ্ছে, সেটা ছোট হোক, এখানেও কিন্তু বাংলা সাহিত্যের একটা উন্মেষ হচ্ছে। এ বিষয়টা কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

সাইফুল্লাহ সাইফ : আমি এটাকে পজিটিভ দেখি। কারণটা হচ্ছে দৈনিক পত্রিকাগুলোর পাতা সীমিত। নতুন যারা লিখছেন, একেবারেই নতুন যারা লিখছেন, তাদের অনেক সময় পত্রিকার পাতায় জায়গা দেওয়া সম্ভব হয়ে উঠে না। সেক্ষেত্রে নতুনদের জন্য সাহিত্য চর্চাটা শুরু হতে পারে অনলাইন মাধ্যম দিয়ে। যেমন অনলাইন নিউজ পোর্টাল, ফেসবুক, টুইটার, ব্লগ। আমি মনে করি নতুন লেখকদের, তরুণ লেখকদের লেখালেখির চর্চার জন্য অনলাইন মাধ্যম একটা বিরাট ভূমিকা রাখছে। আমি নিজেও লেখালেখির শুরুর দিকে বিভিন্ন অনলাইনে কিংবা ব্লগে লিখতাম। এরপর যখন মনে হলো আমার লেখার একটা মানে গিয়ে দাঁড়াচ্ছে কিংবা পরিপক্কতা পাচ্ছে, তখন আমি বড় বড় পত্রিকাগুলোতে লেখা পাঠাতে শুরু করি। তবে বলব, অনলাইনে যে লেখাই প্রকাশিত হোক, তা যেন মানটা একটু বজায় থাকে।