ক্রান্তিকাল ॥ ফারহানা রহমান


অন্ধকার থাকতেই সালেহা চুপিচুপি উঠে আসে বিছানা ছেড়ে। ঘরের বাতি জ্বালালেই পাশের ঘরে শুয়ে থাকা শাশুড়ির ঘুম চটে যায়। লাইট না জ্বালিয়ে চোখ সয়ে যাওয়া আঁধারে সে আলনা থেকে গামছা আর র‍্যাক থেকে সাবানের কেসটা হাতে নেয়। সাবান কেসের পাশেই ব্রাশ ও পেস্ট রাখা ছিল, সাথে দাঁতের মাজন। কিন্তু কিছুদিন থেকে মাজন মুখে দিতেই তার উগলিয়ে বমি আসে। মাজনের বদলে সে ব্রাসপেস্টই হাতের মুঠোয় নিয়ে নিঃশব্দে দরজা খুলে পা টিপে টিপে বের হয়ে আসে ঘর ছেড়ে সামনের উঠোনে।

আকাশে ভরা পূর্ণিমার সোনার থালার মতো চাঁদ থেকে রূপোলী আভা ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে। পরিবেশের এমন উথাল-পাথাল মাদকতায় কিছুক্ষণ আচ্ছন্ন হয়ে থাকে সালেহা। দূরের মসজিদ থেকে ফজরের আযান ভেসে আসছে। কামরা ছেড়ে বের হয়েই সামনের বারান্দার মতো যে পাকা জায়গাটা আছে সেখানে সালেহার শাশুড়ি একটি ছোট খাট বিছিয়ে রেখেছে। দুপুরে খাওয়ার পর মুখে পান নিয়ে তিনি সেখানে দেড়দুই ঘণ্টা এলিয়ে থাকেন। সালেহা খাটে না বসে কয়েক মুহূর্তের জন্য সামনের সিঁড়িতে গিয়ে বসে। দিগন্তে ধীরে ধীরে আঁধার সড়ে গিয়ে কেমন এক মায়াবি আলো ছড়িয়ে পড়ছে।

চারদিক ভরে আছে পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ। ভোরের নির্জন কোলাহল মুক্ত এই সময়টা তার খুব প্রিয়। সারাদিনের মধ্যে এই এক টুকরো সময়ই শুধু তার একান্ত নিজের। পৃথিবীর দিকে চোখ মেলে তাকানোর মতো সারাদিন আর কোনো সময় সে পায় না।

শরীরের ভেতর বিচিত্র অস্বস্তি নিয়েও বাইরের রাস্তার দিকে হেঁটে যায় সে। টিনের দরজা ঠেলে দূরের ধান ক্ষেতের দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে সালেহা। সে সময় আবারও তার গা গুলিয়ে ওঠে। শাশুড়ি ওঠার আগেই কলপাড়ে এসে দু হাঁটু এক করে মুড়ে জড়ো হয়ে বসে সে। বাম হাতে তলপেট চেপে ধরে হড়হড় করে খুব সাবধানে উগড়ে ফেলতে থাকে পেটের ভেতর লুকিয়ে থাকা পিত বমিটুকু। দাঁত-মুখ খিঁচিয়ে ডানহাত দিয়ে এমনভাবে মুখ চেপে ধরে যেন কোনো শব্দ কারো কানে না যায়। অন্তত শাশুড়ি যেন শুনতে না পায় এই বমির শব্দ। এদিকে তার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলছে নিঃশব্দে শকুনের দৃষ্টি নিয়ে শাশুড়ি ঠিকই পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে।

চমকে পিছনে ফিরে সালেহা। দেখে কানের কাছে মুখ এনে খুব ধীরে অথচ তীক্ষ্ণ ছুরির ফলা বুকে বিঁধিয়ে দেওয়ার মতো করে রিনরিনে সুরে শাশুড়ি তাকে হুমকি দিচ্ছে –‘এইবার যদি আবার একটা মাগী বিয়াইছস তাইলে আল্লার কসম দিয়া কইতাসি তোরে তোর পাঁচ মাগীসহ জ্যান্ত কবর দিমু আমি’। কথাটা শুনে সালেহা এক মুহূর্তের জন্য আতঙ্কে কেঁপে উঠলো। পরক্ষণেই ধাতস্থ হয়ে উঠে এগিয়ে যায় পুকুর পাড়ের পাশের টয়লেটের দিকে।

মাসিকের তারিখ চলে গেছে তাও তিন সপ্তাহ হয়ে গেলো। হিসাব মতো সালেহা এখন প্রায় দুমাসের মাসের গর্ভবতী। দিন নাই রাত নাই সারাক্ষণ শুধু গা গুলায় তার। সাথে ঘন ঘন পাতলা পায়খানা। এর আগে সে আরও পাঁচ মেয়ের জন্ম দিয়েছে কিন্তু এবারের মতো এত কষ্ট তার কখনো হয়নি। কিছু তো সে খেতে পারছেই না বরং সবকিছু থেকে এমন ভয়াবহ দুর্গন্ধ পাচ্ছে যেন মনে হয় নাড়িসহ পেটের মধ্যে যা কিছু আছে গলা দিয়ে বের হয়ে আসবে। শরীরের ভেতরে কেমন যেন অন্যরকম লাগে।

পরপর চার মেয়ের জন্মের পর দুলাল অনেকবার সালেহাকে অনুরোধ করেছিল ডাক্তার আপার কাছে দিয়ে লাইগেশন করিয়ে আসতে। সে দেখেছে একেকটা মেয়ের জন্মের পর সালেহার ওপর তার মার অমানবিক সব অত্যাচারের নানা দৃশ্য। আর সেসব অন্যায় প্রতিহত করার মতো বিন্দুমাত্র ক্ষমতা তার নেই। তাই প্রথম দুই মেয়ে হওয়ার পরেই সে সালেহাকে আর বাচ্চা নেবে কিনা সে কথা ভাবতে বলেছিল। কিন্তু সালেহার মনে কোথাও একটা বিশ্বাস ছিল হয়তোবা পরেরটা ছেলেই হবে। কিন্তু সেবারও মেয়ে হলো এমনকি পরেরবারও। তখন ডাক্তার আপা মাথায় হাত বুলিয়ে অনেক বুঝিয়েছে, ‘সালেহা এবার লাইগেশনটা করে ফেলো। শোন আর বাচ্চা নিও না লক্ষ্মী বোন আমার। তোমার শরীরের যা অবস্থা! শুকিয়ে তো একেবারে কাঠ হয়ে গেছো। তাছাড়া তোমার শরীরে কিন্তু রক্ত অনেক কম। বুঝলা? এরপর বাচ্চা হলে কিন্তু তোমাকে আমি আর বাঁচাতে পারবো না। এবারই কিন্তু প্রায় মরতে বসেছিলে।’

কিন্তু সালেহা লাইগেশন করতে কিছুতেই রাজি হয় না। তৃতীয় বাচ্চাটাও যখন মেয়ে হলো আর তারপর শাশুড়ির কাছে মার খেয়ে বেহুঁশ হয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে দুলালের গৃহত্যাগ আর সালেহার বাবার মৃত্যু! সবকিছু মিলেই সালেহার মধ্যে কোথা থেকে এক দুর্দমনীয় জেদ এসে চেপে বসলো। ছেলে তাকে জন্ম দিতেই হবে। দরকার হলে পোয়াতি হতে হতে সে মৃত্যুবরণ করবে কিন্তু বেঁচে থাকলে তাকে ছেলে সন্তান জন্ম দিতেই হবে। তাই পাঁচ মেয়ের পর আবারও সে এই দুর্বল ফ্যাঁকাসে শরীরেই গর্ভবতী হয়েছে। আর শেষমেশ তার সমস্ত দুঃখকষ্টের অবসান হয়ে তার কোলজুড়ে এলো ফুটফুটে জমজ দুই ছেলে সন্তান।

মাত্র পনের বছর বয়সে কাকবন্ধ্যা মায়ের একমাত্র ছেলে দুলালের সাথে বিয়ে হয়ে এ বাড়িতে পা দিয়েছিলো সালেহা। দুলালের বয়স তখন উনিশ কি কুড়ি হবে। দেখতে শুনতেও মন্দ ছিল না সে। কয়েক কানি জমি আর থাকার জন্য বেশ বড় একখানা বাড়িও ছিল তার বাবার। প্রাইমারি স্কুল পাস করার পর বাবার সাথে চাষাবাদে লেগে গিয়েছিল দুলাল। ভালোই চলছিলো সবকিছু। হঠাৎ একদিন তার বাবার জন্ডিস ধরা পড়লো। তখন দুলালের বাপ দুলালের বিয়ে দেওয়ার জন্য একেবারে বদ্ধ পরিকল্প হয়ে উঠলো। ফলে সালেহার বাবা কিছুদিন গাইগুই করে তারপর বিয়েতে রাজি হয়েছিলো।একরকম তাড়াহুড়ো করেই সালেহার সাথে দুলালের বিয়েটা হয়েছিলো তখন।

বিয়ের বছর দেড়েকের মাথায় দুলালের বাপ মারা গেলো। তখন সবে সালেহা আর দুলালের প্রথম মেয়ে শেফালির তিন মাস বয়স। জ্যৈষ্ঠ মাসের এক সকালে নাতনিতে কোলে নিয়ে দাদা আম-দুধ দিয়ে ভাত খেতে বসেছে। কয়েক লোকমা মুখে তুলেই সালেহার শশুর নাতনিকে পাটিতে শুইয়েই ছুটে যায় কলপাড়ে। সেখানে বমি করতে করতে বেহুঁশ হয়ে যায়।

গ্রামের ডাক্তার বলে ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে যেতে। মাইক্রো ভাড়া করে দুলাল ঢাকা মেডিক্যালে এনে ভর্তি করেছিলো ঠিকই কিন্তু তিনদিনও আর টিকলো না তার বাপ।

স্বামী মারা যেতেই দুলালের মা ধীরে ধীরে চণ্ডাল রূপ ধারণ করলো। শেফালীর জন্মের পরেই শাশুড়ির অনেক মুখ ঝামটা শুনতে হয়েছিলো সালেহাকে। তাই পরের বাচ্চা পেটে আসার পর থেকেই সালেহা দিনরাত নামাজের পাটিতে পড়ে থেকেছে। সারাক্ষণ একটাই দোয়া, ‘আল্লা এইবার যেন ছেলে হয় আমার, দেইখো আল্লাহ তুমি! ছেলের জন্ম দিতে না পারলে তো বুড়ি আমারে মাইরাই ফেলবো।’ কিন্তু দেখা গেলো সেবার এমনকি পরপর আরও তিনবার সালেহার মেয়েই হলো।

তৃতীয় সন্তানটিও মেয়ে হয়েছে দেখে দুলাল একেবারে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো। ছেলে তার মাকে হাড়েহাড়ে চেনে। হেন কাজ নেই দুলালের মা করতে পারে না। এরি মধ্যে দফায় দফায় অশান্তি, গালাগালি, মারামারি সবই হয়েছে। ফলে প্রথমেই সে সিদ্ধান্ত নিলো গৃহ ত্যাগের। তিন মেয়েসহ স্ত্রীকে ফেলে রেখে সে বন্ধুদের সাথে শলাপরামর্শ করে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হলো। সে সময় তার শেষ শিশু কন্যাটির বয়স ছিল মোটে সাতদিন।

এদিকে সেরাতে ছেলে বাড়ি ফেরেনি। সকাল থেকেই তুমুল অশান্তি করে একটু বেলা হতেই সালেহাকে মারতে মারতে রক্তাক্ত অবস্থায় অজ্ঞান করে ফেলে রাখল শাশুড়ি। খবরটি সালেহার বাপের বাড়িতে সময় মতো পৌঁছে গিয়েছিল। এরপর সালেহার বাবা এসে একরকম জোর করেই তিন নাতনি সহ মেয়েকে নিজের কাছে নিয়ে গেলো।

সালেহার বাপের বাড়ির আর্থিক অবস্থা বেশ ভালোই ছিল। প্রথম চার মেয়ের সবাই সুখে শান্তিতে সংসার করছিলো। শুধু ছোট মেয়ে সালেহাকে নিয়েই বাবামার চিন্তার শেষ ছিল না। সালেহার শাশুড়ির অত্যাচারের কথা সবার মুখে মুখে ঘুরে বেড়াত। অনেকবার সালেহার বাপ-চাচারা গেছে সালেহাকে বাড়িতে নিয়ে আসতে। কিন্তু সালেহা কখনোই আসেনি। তার পছন্দ ছিল চাচাতো ভাইকে অথচ বাবা-মার জোরাজুরিতে বিয়ে করতে হয়েছিলো দুলালকে। ফলে সে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো বাপের বাড়িতে আর না আসার। এবার এতদিন পর সালেহাকে কাছে পেয়ে সবাই খুব খুশি হলো। নানানানির চোখের মনি সালেহার ফুটফুটে তিন মেয়ে। মেয়েরা খুব খুশি নানানানির আদর-আহ্লাদ পেয়ে। কিন্তু সালেহার কোনো হেলদোল নেই। বাবামা অনেক করে বোঝাল যাতে সে আর অত্যাচারি বুড়ির কাছে ফিরে না যায়। দরকার হলে সে যেন স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে মেয়েদের নিয়ে এখানেই থেকে যায়। বাপের যা কিছু সম্পত্তি আছে সব তিনি সালেহার মেয়েদের লিখে দেবেন বলে জানান। সালেহা কোনো কথাতেই রা করে না।

এদিকে দুমাস না গড়াতেই একদিন সকালে দুলাল এসে হাজির হয়। দুলালকে দেখেই সালেহা নিঃশব্দে তার ও মেয়েদের জিনিসপত্র গুছিয়ে নেয়। দুলালকে কিছু আর বলতে হয় না।

বাবা-মার শত বাধার মুখেও সালেহা দুলালের সংসারে ফিরে আসে। তিন মাস পর দেখা গেলো সে আবারও পোয়াতি হয়েছে। তার কিছুদিন পরই দুলাল আবারও ঢাকায় ফিরে গেলো।

ছোট মেয়ের সংসারের সীমাহীন অশান্তির শোকে সালেহার বাবার প্রাণ অকালেই ঝরে গেলো। মাও এখন শয্যাসঙ্গী। এদিকে সালেহার অযাচিত গোঁয়ার্তুমি আর একের পর পোয়াতি হওয়ার মূর্খতায় বোনরা আর তার সাথে সম্পর্ক রাখে না। দুলালও ঢাকায় গিয়ে তেমন কিছু সুবিধা করে উঠতে না পেরে বাড়িতে এসে কিছু জমি বিক্রি করে দিয়ে টাকা নিয়ে আবারও ঢাকায় ফিরে গেলো। ঢাকায় তার এখন অনেক বন্ধুবান্ধব জুটেছে। সেসব বন্ধুদের সাথে দুলালের জুয়া খেলা আর এদিক সেদিক যাওয়ার কথাও সালেহার কানে আসে। পাঁচ ছয় মাস অন্তর অন্তর বাড়িতে এসে দুলাল বর্গা দেওয়া জমিগুলো একে একে বেঁচে শহরে গিয়ে টাকা ওড়াতে লাগলো। ফলে সালেহার সংসারে নিত্যনতুন অভাব দেখা দিতে লাগলো।

জীবন-মৃত্যুর সাথে লড়ে লড়ে ফ্যালাসে হাড্ডিসার সালেহার শেষ পর্যন্ত দুটো জমজ ছেলে সন্তান হলো ঠিকই। কিন্তু অভাবের সংসারে একসাথে সাত ছেলে মেয়ে আর শাশুড়িকে নিয়ে সংসার চালাতে রীতিমত হিমসিম খেতে হয় সালেহাকে। জমজ ছেলে দুটো হওয়ার পরপরই একবার মাত্র দুলাল বাড়িতে এসেছিল। এরপর আরও দেড় বছর কেটে গেছে। সালেহার ছেলেরা এখন নিজে নিজেই একা একা ঘরময় হেঁটে বেড়ায়। শাশুড়িও নাতিদের কোলে নিয়ে নিয়ে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে বেড়ায়। নাতনিরা তার দুচোখের বিষ। দাদির ধারে কাছেও তারা কখনো ঘেঁষতে পারে না।

সালেহার জীবনের এ পর্যায়ে এসে দেখা গেলো সারা দুনিয়াজুড়ে কী একটা করুনা নামের ছোঁয়াচে রোগ এসেছে। ছেলে-জোয়ান-বুড়ো যাকেই ধরছে রোগটা সেই কাশতে কাশতে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে মরে পরে থাকছে। এদিকে সালেহার শাশুড়ি পাড়া না বেড়িয়ে থাকতে পাড়ে না। সকালে নাস্তা করেই সে বেড়িয়ে পরে গ্রামের এর ওর বাড়ির খবর নিতে। বাড়িতে ঢুকেই সে নাতিদের কোলে নিয়ে বসে বসে পান চিবায়। পরে গোসল করে এসে ভাত খেয়ে ঘুমায়। সালেহা শুনেছে রোগটা খুবই ছোঁয়াচে। সে বারবার শাশুড়িকে বাড়ির বাইরে না যেতে অনুরোধ করে। কিন্তু বুড়ি কোনো কিছুতেই কান দেয় না। ফলে ইদানীং সালেহা তার শাশুড়ি বাড়িতে ঢুকলে তার ছেলেদেরকে দাদির কাছে যেতে দেয় না। আর বুড়ি নাতনিদের সহ্য করতে পাড়ে না বলে তারাও দূরে দূরে থাকে। কিন্তু বিপদটা হলো যেদিন বুড়ি বাড়িতে এসে জ্বর আর কাশিতে ভুগে বিছানায় পরে কাৎরাতে লাগলো।

এদিকে সারা দেশে কী যেন এক লকডাউন না কী হওয়াতে বারবার ফোন দিয়েও দুলালকে আনা গেলো না। জ্বর যত বাড়তে লাগলো বুড়ি ততই নাতনিদেরকে আকুতি মিনুতি করে কাছে ডাকতে লাগলো। সালেহা কিছুতেই ছেলে মেয়েদের দাদির কাছে ঘেঁষতে দেয় না। সে শাশুড়ির রুমের বাইরের ছিটকিনি আঁটকে তাতে তালা ঝুলিয়ে দিলো। শুধুমাত্র তার ঘরে খাওয়া পৌঁছে দেওয়া আর টয়লেটে যাওয়া ছাড়া সারাক্ষণ সে ঘরে আঁটকে রইলো। কিন্তু এত সাবধানতার পরেও দাদির সাথে সাথে জমজ দুই নাতিরও হুহু করে জ্বর বাড়তে লাগলো সাথে বুক ভাঙা কাশি। ছেলেদের অবস্থা দিনদিন খারাপ হওয়াতে সালেহা গ্রামের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বাচ্চাদের নিয়ে অনেক ছুটাছুটি করেও কোনো ডাক্তারের সন্ধান পেলো না। জমজ ছেলে দুটো সারারাত কাশতে কাশতে দমবন্ধ হয়ে ভোরের দিকে নিস্তেজ হয়ে গেলো। মেয়েরা বারবার করে দাদির কথা বলাতে সালেহার মনে পড়লো গত দুইদিনে বুড়ির দরজার তালাটা পর্যন্ত খোলা হয়নি। সবাই মিলে ছুটে গিয়ে দরজা খুলেই দেখতে পেলো বুড়ি উপর হয়ে দরজার কাছে পরে আছে। অথচ সালেহা ও তার পাঁচ মেয়ের কারোই আর জ্বর বা সর্দিকাশি কিছুই হয়নি।

অলঙ্করণ: নূরুল আসাদ