[সম্পাদকীয় নোট: বিশ্ব কবিতা দিবস ২১ মার্চ। বিশ্বব্যাপী কবিতা পাঠ, রচনা ও প্রকাশনাকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো এই দিনটিকে বিশ্ব কবিতা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।এবারের কবিতা দিবসে যোগসূত্রের পাঠকদের জন্য আয়োজন সমকালীন পাঁচ কবির কবিতা ]
আমার অন্যায্য আসা
রকিবুল হাসান
কী অদ্ভুতভাবে নতুন সূর্যের বুক জুড়ে তোমার সুঘ্রাণ নাম
এই প্রথম অন্যরকম কবিতার শিরোনাম
নদী উপচানো জলের মতো তোমার লাবণ্য
আমার দুচোখ ভরে স্রোতের সুনন্দা রেখা এঁকে যায়
সূর্যও দেখে তোমাকে মুগ্ধতার তৃষ্ণায়
এতটা সুন্দর নেশার মতো সূর্যকে কে কবে করেছে দখল
সাধাসিধে এক দোয়েল গহিন তৃষ্ণায় যে ডুবে থাকে
কোনো সন্ন্যাসী কী কোনদিন পুড়েছে এমন সাধনার অগ্নিকাণ্ডে
সূর্যের বুকজুড়ে সূর্যের চেয়ে বেশি উজ্জ্বলতা তুমি
তোমার ঠোঁটের কোণে ঢেউখেলা মধুবাঁক
ভোরের লাবণ্য আছড়ে পড়ে কবিতার লাল শাড়ি প্রিয়তমা
মুগ্ধতায় পাগলা ঢেউয়ে পেতে চাই নির্লজ্জ চুম্বনে
আজ যে নতুন সূর্য উঠেিেছল-নিভে গেছে তোমার আলোয়
তোমাকে চিনি না যদিও-অচেনা নগরে অচিন পাখির মতো
আমার অন্যায্য এই আসা ফিরে যাবে উজানে স্রোতের মতো
তবুও নতুন কবিতা হয়ে ফুটে উঠবে অদ্ভুত লাবণ্যআগুনে
পরাণরমণী তুমি।
ঝুলছে দুপুর
মোহাম্মদ নূরুল হক
ঝুলছে দুপুর চার দেয়ালে, ঝুলছে দুপুর মনে
উড়ন্ত মেঘ থমকে তাকায় হঠাৎ তারার বনে।
দুরন্ত রোদ উড়ছে এখন
কারও কি মন পুড়ছে ভীষণ
কেউ কি আবার জ্বলছে প্রেমে কোথাও সংগোপনে?
যায় পুড়ে যায় স্মৃতির নদী সাগর ভুলে যায়
হাওয়ায় হাওয়ায় ভাসলো কি চাঁদ মোমের জোছনায়?
গাছের পাতায় স্বপ্ন দেখে
প্রজাপতি কী দেয় এঁকে
কী উড়ে যায়, কী রেখে যায় কারা সযতনে?
মন ভেসেছিল
ফরিদা ইয়াসমিন সুমি
মন ভেসেছিল প্রেমে
প্রেম ভেসেছিল পলে
পল ভেসেছিল হিমে
হিম ভেসেছিল জলে।
বিধবা
আরিফুর রহমান
নদীটির দী-র্ঘ-শ্বা-সে-র প্রান্তে পা-জোড়া নামিয়ে আড়াআড়ি হেঁটে পেরিয়ে এলাম দিগন্তে হারানো মাঠ! আমার পথ হারানোর ভয় ছিল না গো, হাতে সময় কম ছিল। অবাধ্য মনের দাসত্ব মেনে চোখ দুটোও খুব জ্বলছিল, আর গোধূলির পেছনে চলছিল বিষণ্ণ সান্ধ্যপাঠ!
দেখা হলো—
শস্যবতী রাইয়ের সাথে, সবুজ ডগায় নাচছিল, থামল হঠাৎ!
দেখা হলো—
সদ্য প্রসূতি-গাইয়ের সাথে, এঁড়েটিকে চাটছিল, থামল হঠাৎ!
নিঃসঙ্গ বীজতলাটি
আলগা হওয়া শুকনো মাটি
ঘাসফুলের রঙিন মুখ….
সবাই কেমন চমকে উঠে করুণ চোখে আমার ফেরা দেখছিল! কেবল আমিই তখনো বিশ্বাস করে উঠতে পারিনি, তোমার দুচোখ বন্ধ ছিল! চিরতরে!
স্থির জলে ভাসমান চিত্রকল্প
তাহমিনা শিল্পী
শিশিরের আয়নায় প্রতিবিম্ব এঁকে যায় আকাশ।
স্থির জলে সশব্দে পাখা নেড়ে সাঁতার কাটে বালিহাঁস।
বাতাসের গায়ে কান পাতি
শুনি, তাদের বুকের ভেতর গাঢ় ব্যথা।
কোথায় কোন হ্রদে রেখে এসেছে মায়া।
সোনালি গাছের আড়াল থেকে কুঁয়াশা ভেঙে
উঁকি দিয়ে চলে গেছে আলো।
জুবুথুবু আমি অনন্ত ঘুম শেষে জেগে উঠে দেখি
বদলে গেছে ঋতু।
অথচ, জীবন চলমান।