বিশ্বজুড়ে চলছে কোভিড-১৯ এর দ্বিতীয় ঢেউ। নতুন রোগী শনাক্তের হার বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি সমানতালে বেড়ে চলেছে মৃত্যুর সংখ্যা।স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে ইতোমধ্যে দশ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। করোনায় বদলে গেছে বিশ্ব। বদলেছে মানুষের জীবনযাপন। শিল্প-সংস্কৃতিতেও এর প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে। এ নিয়ে যােগসূত্রের এ আয়োজন। এবারের সাক্ষাৎকার পর্বে পড়ুন কথাসাহিত্যিক নূরুদ্দিন জাহাঙ্গীরের লেখালেখি নিয়ে।
যোগসূত্র : লকডাউনে কী পড়ছেন, কী লিখছেন?
নূরুদ্দিন জাহাঙ্গীর: লকডাউনে পড়ছি কিছু স্বনির্বাচিত ইতিহাস ও নৃতত্ত্বের বই। পরবর্তী লেখার প্রস্তুতির জন্য। বিশেষ করে, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ইতিহাস। এ অঞ্চলের জাতিগত ও ধর্মীয় বিরোধের প্রেক্ষাপট, ইতিহাস, সমাজ মানস এবং নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী সম্পর্কে জানতে বুঝতে চেষ্টা করছি। এসব পঠনপাঠনের ফাঁকে ফাঁকে ইতোপূর্বে পরিকল্পিত দু-একটা লেখা শেষ করার চেষ্টা করব। একটা ইতিহাসআশ্রিত প্রবন্ধ লেখার ইচ্ছা আছে, আরাকানের রোহিঙ্গা সংকট-এর অতীত ও বির্তমান প্রেক্ষাপট নিয়ে।
যোগসূত্র: কীভাবে কাটাচ্ছেন লকডাউনের দিনগুলো?
নূরুদ্দিন জাহাঙ্গীর : লকডাউনের দিনগুলোতে অনলাইনে অফিসের কাজ করছি। বাসায় পরিবারের কাজে সময় দিতে পেরে ভালো লাগছে। অবসরে বই পড়ছি, আগেই বিষয় উল্লেখ করেছি। পড়ে শেষ করেছি শহীদুল জহীরের উপন্যাস ‘সে রাতে পূর্ণিমা ছিল’ নতুন করে পড়লাম। এবার গল্প নতুন মনে হয়নি, ভাষাটা, বিশেষ করে চিত্রকল্প ও প্রকাশভঙি আলাদা মনে হয়েছে।
যোগসূত্র: কোভিড-১৯ শিল্প-সংস্কৃতিতে কী প্রভাব ফলেছে?
নূরুদ্দিন জাহাঙ্গীর : নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বেশি। পারফর্মিং আর্ট তো হচ্ছেই না। ভালো নাটক, সিনেমার কাজ হচ্ছে না। গত কদিনেই আমরা আমাদের প্রথিতযশা বেশ কজন শিল্পী আর সংস্কৃতির পুরোধা ব্যক্তিত্বকে হারিয়েছি, যা জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। তবু আমাদের মনোবল হারালে চলবে না। দুঃসময়টা উত্তরণের জন্য সতর্কভাবে জীবনযাপন করতে হবে। যারা লিখেন তাদের লিখতে হবে। আমি নিজেও সে চেষ্টা করি। গত বছর লকডাউন হলে দুটো উপন্যাস লিখেছিলাম, সোলেমন আর আদম সুরত। যেগুলো এবার প্রকাশিত হয়েছে। এবার লকডাউনের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলাম না। এখন সময়টা কাজে লাগাতে চাই। লেখকরা অলস সময় না কাটিয়ে পড়বেন, লিখবেন এমনটাই মনে করি। বিশেষ করে নতুনরা বেশি লিখবেন, বেশি করে পড়বেন। শ্রদ্ধেয় হাসনাত আবদুল হাইকে আমরা মনে রাখতে পারি। তিনি লিখছেন।
যোগসূত্র: কীভাবে করোনা থেকে উত্তরণ সম্ভব?
নূরুদ্দিন জাহাঙ্গীর : হয়তো করোনাকে সঙ্গে নিয়েই আমাদের অনেক বছর কাটাতে হবে। এ সংকট থেকে উত্তরণের জন্য বিজ্ঞানের আশীর্বাদ ছাড়া আর কোনো উপায় দেখি না। তবে সচেতনতা এ সংকট ব্যবস্থাপনায়, জীবনরক্ষায় সহায়ক হবে। ভোগবাদী জীবন থেকে সমাজবাদী সংযমী জীবনবোধ আমাদের জন্য কল্যাণকর হবে মনে করি।
যোগসূত্র: ধন্যবাদ সময় দেওয়ার জন্য।
নূরুদ্দিন জাহাঙ্গীর: যোগসূত্রকেও ধন্যবাদ।