বিশ্বজুড়ে চলছে কোভিড-১৯ এর দ্বিতীয় ঢেউ। নতুন রোগী শনাক্তের হার বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি সমানতালে বেড়ে চলেছে মৃত্যুর সংখ্যা।স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে ইতোমধ্যে দশ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। করোনায় বদলে গেছে বিশ্ব। বদলেছে মানুষের জীবনযাপন। শিল্প-সংস্কৃতিতেও এর প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে। এ নিয়ে যােগসূত্রের এ আয়োজন। এবারের সাক্ষাৎকার পর্বে পড়ুন কবি ও গল্পকার ফরিদা ইয়াসমিন সুমির লেখালেখি নিয়ে।
যােগসূত্র: লকডাউনে কী পড়ছেন, কী লিখছেন?
ফরিদা ইয়াসমিন সুমি: এই মুহূর্তে পড়ছি কবি সরকার আমিনের কবিতার বই ‘মৃদুবেদনার হাসপাতালে’। ভালো লাগছে। কবিতাগুলোতে একটা ঘোর-লাগা, আবেশিত ব্যাপার আছে। মাত্র পড়ে শেষ করলাম, নির্ঝর নৈঃশব্দের আত্মজৈবনিক রচনা ‘বনভাঙা গান’। ঝরঝরে, মেদহীন লেখার মধ্য দিয়ে কতকটা জানলাম নৈঃশব্দ্যকে। সবকিছুর ফাঁকে ফাঁকে লেখক ও অনুবাদক জি এইচ হাবিবের অনুবাদে ইয়েস্তেন গার্ডারের ‘সোফির জগৎ’ আবারও পড়ছি নতুন করে। লেখক ফারুক মঈনুদ্দীনের ‘হেমিংওয়ের নারীরা’ অর্ডার করেছি, হাতে পাইনি এখনও। বইটি পড়ার জন্য মুখিয়ে আছি। ব্যক্তিগতভাবে আমি ছোটগল্পের অনুরাগী। তাই, সম্প্রতি পড়া একটি বইয়ের কথা না-বললেই নয়। প্রিয় কথাসাহিত্যিক মোজাফফর হোসেনের ‘মানুষের মাংসের রেস্তোরাঁ’র গল্পগুলোর মধ্যে মুগ্ধ হবার পাশাপাশি ভাবনা-চিন্তা ও দর্শনের বহু উপাদান ছিল। চমৎকার সব গল্পগুলো পাঠককে ভাবাবে নিশ্চিতভাবে।
সত্যি কথা বলতে, এই মুহূর্তে আসলে কিছুই লিখছি না বা বলা যায় লিখতে পারছি না। মহামারি আর পারিপার্শ্বিক অবস্থার দরুন মনটা ভীষণ বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে।
যােগসূত্র: কীভাবে কাটাচ্ছেন লকডাউনের দিনগুলো?
ফরিদা ইয়াসমিন সুমি: চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সহকারী অধ্যাপক পদে কর্মরত রয়েছি, তাই সেই অর্থে আমার কোনো ছুটি বা লকডাউন নাই। প্রতিদিন অফিস করছি। আবার যেহেতু প্রসূতি, স্ত্রীরোগ ও বন্ধ্যাত্বরোগের চিকিৎসা করি তাই চাহিদামতো চেম্বারও খোলা রাখতে হচ্ছে। কারণ, মৃত্যুর মতো মানুষের জন্মও কিছুটা অনির্দেশ্য! প্রথম প্রথম নেটফ্লিক্সে মুভি দেখতাম, এখন তা-ও ভালো লাগছে না। বড় কোনো বই পড়ার বা মুভি দেখার ধৈর্য্য রাখতে পারছি না। দুঃসহ সময়কাল যেন মাথায় জুড়ে থাকছে সারাক্ষণ। দুইদিন আগে মালায়লাম একটা মুভি দেখলাম। ‘ইরুল’ নামের ছবিটি ভালোই লেগেছে।
যােগসূত্র: কোভিড-১৯ শিল্প-সংস্কৃতিতে কী প্রভাব ফেলছে?
ফরিদা ইয়াসমিন সুমি: বিশ্বজুড়ে মহামারি শিল্প-সংস্কৃতিতে স্থায়ী প্রভাব ফেলতে যাচ্ছে এবং ফেলবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। মহামারি আমাদের মানসিকভাবে বিপর্যস্ত, স্থবির করে দেওয়ার পাশাপাশি লিখবার উপাদানও কিছু দিচ্ছে বৈকি! এত আতঙ্ক আর মৃত্যুভাবনার মধ্যে উৎকৃষ্ট শিল্প-সংস্কৃতির চর্চা কতটা সম্ভব তা প্রশ্নসাপেক্ষ। সময়ের কাছেই রয়েছে এর উত্তর।
যােগসূত্র: কীভাবে করোনা থেকে উত্তরণ সম্ভব?
ফরিদা ইয়াসমিন সুমি: অত্যন্ত ইতিবাচক একজন মানুষ আমি।
সেই আমাকেও করোনা অনেকটা কাবু করে ফেলেছে! চারিদিকে মৃত্যুর মিছিল আর অশুভ সংবাদ স্তব্ধ করে দিচ্ছে থেকে থেকে। নিরাশ করবার জন্য বলছি না, এটাই বাস্তবতা যে, করোনা থেকে যাবে পৃথিবীতে। এই কঠিন সত্যটি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব স্বীকার করে নিয়ে সচেতনতা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাগুলো অভ্যাসের আওতায় নিয়ে আসতে পারলেই কেবল করোনা থেকে উত্তরণ সম্ভব। মানুষের বুদ্ধি-বিবেচনার ওপর অগাধ আস্থা আমার! আশা করি, অন্যান্য বিদ্যমান রোগসমূহের মতো করোনাকে সাথে নিয়ে চলবো আমরা, করোনা থেকে মৃত্যুকে জয় করে!
যােগসূত্র: আপনাকে ধন্যবাদ।
ফরিদা ইয়াসমিন সুমি : যোগসূত্রকে অসংখ্য ধন্যবাদ।