ধ্বংস করে দাও আমাকে ঈশ্বর/ আমার সন্ততি স্বপ্নে থাক … শঙ্খ ঘোষ
চলে গেলেন শঙ্খ ঘোষ। কবি প্রাবন্ধিক চিন্তাবিদ নাকি একজন আমার দেখা এক অন্যরকম ব্যক্তিত্বকে নিয়ে ভাবব এই প্রশ্নটা যখনই কোন এই মাপের মানুষ চলে যান ভাবতে বসি। আরও বিব্রত বোধ করি এই নিয়ে কিছু লিখতে হলে। লেখালিখি ও সম্পাদনার সূত্রে যোগ একরকম হয়, আবার ব্যক্তিগত যোগাযোগের পরিসর- সেটা অনেক ক্ষেত্রেই পারিবারিক হয়ে ওঠে। আমার ক্ষেত্রে বিদগ্ধ মানুষদের সঙ্গে সম্পর্কগুলো দুভাবেই এসেছে। বলা যেতে পারে এটা বাড়তি পাওনা।
ভাষা সংসদ ও অনুবাদ পত্রিকার সম্পাদক আমার বাবা শ্রী বৈশম্পায়ন ঘোষাল এবং শঙ্খ (ঘোষ) জ্যেঠুর মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কটা শ্রদ্ধার এবং এই শ্রদ্ধা দুজনের চোখেই আজীবন ছিল। কিন্তু আমি জ্যেঠুকে চিনেছি প্রথমে তাঁর লেখায়, পরে ব্যক্তিগতভাবে এবং মজার বিষয় এটা বাবার মাধ্যমে হয়নি।
বুদ্ধদেব বসুর মেয়ে মিনাক্ষী দত্ত ও জ্যোতির্ময় দত্ত আমেরিকা থেকে কলকাতায় এলেই কঙ্কাবতী দত্ত মানে তাঁদের মেয়ের গলফগ্রীণের বাড়িতে সারাদিন রাত নানা অনুষ্ঠান, হই হট্টোগোল, আড্ডা, খাওয়া ও বই প্রকাশের উৎসব চলত। তাতে উপস্থিত থাকতেন দুই বাংলার অজস্র কিংবদন্তী মানুষ। আর আশ্চর্যজনক ভাবে আমিও জুটে যেতাম সেখানে কঙ্কাবতীদির ডাকে। তিনি আমাকে সন্তানতুল্য স্নেহ করার কারণে আমার একটা গুরূত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকত এই ক্ষেত্রে। সেটা হল সল্টলেক অঞ্চলের বাসিন্দা এইসব বিখ্যাত মানুষদের গাড়িতে করে গলফগ্রীণে নিয়ে যাওয়া। কঙ্কাবতীদি এই কাজটি আমার ওপর পরম নিশ্চিন্তে ছেড়ে দিতেন। আমার ধারণা এর দুটো কারণ ছিল। এক- আমি তখনো সাহিত্য জগতের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হইনি, ফলে বিখ্যাত মানুষদের সংস্পর্শে এলে নবাগত লেখক-লেখিকাদের যে উৎসাহ ও ক্যালকুলেসন চলে তা আমার মধ্যে ছিল না, আর একটা অবশ্যই যেটা তিনি চাইতেন, এনাদের সঙ্গে আলাপচারিতার মধ্যে দিয়ে আমার একটা স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্ব ও পরিচয় গড়ে উঠুক, যা শুধুমাত্র বৈশম্পায়ন ঘোষালের নিরিখে বিচার্য হবে না।
তিনি যাই ভেবে থাকুক না কেন আমি সব অর্থেই লাভবান হলাম। পৌঁছে গেলাম সেলিব্রিটিদের অন্দর মহলে কোনও দাবি ছাড়াই। এভাবেই আমার দায়িত্ব এসে পড়ল বিদ্যাসাগর আবাসন থেকে শঙ্খ জ্যেঠু, তারপর অম্লান দত্ত, ও শেষে শিবনারায়ণ রায়কে নিয়ে আসা ও পৌঁছে দেওয়ার। এখন যাওয়া মাত্রই যে তাঁরা গাড়িতে বসে পড়বেন এটা তো হয় না। হয়তো জ্যেঠিমা রেডি হচ্ছেন, আমি তখন জ্যেঠুর সঙ্গে গল্প করছি। তখন তো আমি নেহাতই কলেজ শেষ করেছি। ফলে সেই নিয়েই আলোচনা, পড়াশোনার ফাঁকে কি করি, বই পড়ি কিনা এসব প্রসঙ্গ। আমি ছোটো বেলা থেকেই বইয়ের পোকা। ফলে জ্যেঠুর বাবরের প্রার্থনা, নিভন্ত এই চুল্লীতে মা একটু আগুন দে..এসব কবিতা মুখস্থ। নিভন্ত এই চুল্লী কবিতার সঙ্গে লোপামুদ্রার গান তখন আমার কোরিওগ্রাফিতে অনেকবার মঞ্চস্থ। জ্যেঠুকে সে কথা বলতেই তিনি বললেন- এই কবিতার তুমি নাচ করেছ? দেখিও তো কেমন করলে?
ততক্ষণে জ্যেঠিমা রেডি হয়ে এসে গেছেন। আমি বললাম, ওখানে গিয়ে দেখাব। এখন চলো। অম্লান জ্যেঠু, শিবনারায়ণ জ্যেঠু অপেক্ষা করছেন।
শুনেই উঠে পড়লেন তিনি। শিবনারায়ণ রায় ও অম্লান দত্তের সময় জ্ঞান মারাত্মক। দেরি হলে আমিই বকা খাব। তাই আমার তাড়া। চার জনকে কখনো বা শিবনারায়ণ জ্যেঠুর স্ত্রী জ্যেঠিমাকেও গাড়িতে তুলে চললাম প্রথমে যেখানে বই প্রকাশ অনুষ্ঠান সেখানে। এই সময় অম্লান জ্যেঠু আর শিবনারায়ণ জ্যেঠুর মধ্যে কোনও না কোনও বিষয়ে মতান্তর হতই, আর দুজনেই শঙ্খ জ্যেঠু এবং আমার থেকে মতামত চাইতেন কার বক্তব্য সঠিক বলার জন্য। আমি তো একেবারেই নবীশ। যা নিয়ে তাঁরা আলোচনা করছেন তা নিয়ে বক্তব্য রাখব কি! অন্য দিকে শঙ্খ জ্যেঠু মুচকি মুচকি হাসছেন, আর বলছেন বিতস্তা এখনকার জেনারেশন। তার মন্তব্য শোনা প্রয়োজন।
একবার হঠাৎ জ্যেঠু বললেন, তুমি বৈশম্পায়নবাবুর মেয়ে?
আমি বললাম, হ্যাঁ। (এই প্রসঙ্গে একটা কথা বলি, বাবা কখনোই চাইতেন না আমি নিজে থেকে কোথাও তাঁর পরিচয় দিই। কারণ আমি যখন সাহিত্য জগতে পা রাখছি তার বহু আগে তিনি এই সমস্ত জগত থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে মগ্ন অধ্যাত্ম সাধনায়। সেখানে তিনি নির্জন সাধক। চাইতেন না কোনও সেলিব্রিটিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে। তাই ছোটোবেলা থেকে যেসব বিখ্যাত মানুষদের দেখে বড় হয়েছি তাঁদের জন্য বাবার ঘরের দরজা বন্ধ হয়ে গেছিল)।
তিনি বললেন, আমি অনুমান করেছিলাম। আমি হাসলাম। তিনিও হাসলেন। কিন্তু কি ভাবে অনুমান করলেন জিজ্ঞেস করলাম না। তিনিও আর কিছু বললেন না।
এরপর তাঁর সঙ্গে অন্য আরেক প্রসঙ্গ ধরে সম্পর্ক গভীর হল। ততদিনে আমি পত্রিকা দপ্তরে আসা-যাওয়া শুরু করেছি। এর আগে অনুবাদ পত্রিকায় তাঁর একাধিক অনুবাদ লেখা ছাপা হয়েছে। বাবার সময় বাদ দিলেও অনুরাধাদি (মহাপাত্র) যখন দায়িত্বে ছিলেন তখনো। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর সেটাই বৃদ্ধি পেল। তবে এবার কঙ্কাবতীদির মাধ্যমে নয়। ততদিনে আমি ওনার ও জ্যেঠিমার স্নেহের পাত্রী হয়ে উঠেছি। তবে সম্পাদক হিসেবে আমি লেখা চাইতে গেলাম প্যাপিরাসের কর্ণধার অরিজিত কাকু (কুমার) এর সঙ্গে। কাকু তখন আমাকে হাতে কলমে পত্রিকা প্রকাশনার কাজ শেখাচ্ছেন। শঙ্খ জ্যেঠুর অনেক গ্রন্থের প্রকাশক তিনি এবং দুজনের মধ্যে সম্পর্কের গভীরতা দেখার মতো।
ফলে আমি এই দুইয়ের সংস্পর্শে এসে ক্রমশ মানুষ-কবি, প্রাবন্ধিক শঙ্খ ঘোষের পাশাপাশি একজন শিক্ষককেও পেলাম। প্যাপিরাস থেকে আমার প্রথম গ্রন্থ প্রকাশিত হলো- একা এবং রঙিন হলুদ বিকেলের গল্প। কাকু যে বই-ই প্রকাশ পেত তাঁর প্রকাশনা থেকে সে সবই পাঠাতেন জ্যেঠুকে। এটিও পাঠালেন। আমি তা জানতাম না। তাছাড়া আমার মনে হতো আমি কে! যে ওনারা আমার লেখা পড়ে মন্তব্য করবেন! এমন কিছুই লিখি না আমি।
কিন্তু তাঁর ফোন এলো। বিতস্তা তোমার সব গল্পগুলো ভালো হয়েছে একথা বলব না। তবে ‘একা’ গল্পটা অসাধারণ। বিষয়ের বর্ণনা চমৎকার। আরেকটি গল্পের উল্লেখ করলেন- ‘আত্মজ’। তারপর লেখার বিন্যাস নিয়ে পরামর্শ দিলেন। আরও লিখতে বললেন।
আমি সেদিন বিস্মিত হয়ে গেছিলাম। এমন বিখ্যাত কবি আমার লেখা পড়েছেন?
২০১২ তে প্যাপিরাস থেকে প্রকাশিত হলো আমার দুটি গ্রন্থ। একটি উপন্যাস, অন্যটি কর্তার সিং দুজ্ঞলের গল্পের অনুবাদ। উপন্যাসের বিষয় নিয়ে কাকু দ্বিধায় ছিলেন। তিনি সেই পাণ্ডুলিপি পাঠিয়ে দিলেন জ্যেঠুকে। পড়ার পর জ্যেঠু ফোন করলেন। এই লেখা কিন্তু তোমাকে বিতর্কিত করে তুলবে। প্রকাশ্যে তুমি নানা সম্পর্কের কথা বলছ, আর বৈশম্পায়ন বাবুর নানা আইডিওলজি ব্যবহার করেছ। তাই ওনার অনুমতি নিও। কারণ উনি এখন এসব বাহ্যিক আলোচনা থেকে বহু যোজন দূরের মানুষ। কিন্তু লেখাটা ভালো। আমি অরিজিতবাবুকে নোট দিয়ে ফেরত পাঠিয়েছি। কিছু এডিট করতে হবে।
আমি চুপ করে শুনছি। বুঝতে পারছি না বইটা কাকু করবেন কিনা! খানিক বাদে আবার বললেন, বাবার সঙ্গে কথা বলে নিও। আর কর্তার সিং দুজ্ঞলের গল্পের অনুবাদ বেশ ভালো হয়েছে। অরিজিতবাবু বললেন, এটাই তোমার প্রথম অনুবাদ। ভালো অনুবাদ হচ্ছে। এতক্ষণ ভয় লাগছিল। এবার মনটা হঠাৎ খুশিতে ভরে গেল। লেখক যদি নাও হতে পারি অনুবাদক তো হতে পারব ভেবেই।
লিখতে বসে কত টুকরো টুকরো স্মৃতি মনে পড়ছে। অনুবাদ পত্রিকা প্রকাশিত হলে তাঁর বাড়ি যেতাম নিজে হাতে প্রণাম করে দেব বলে। চা বিস্কুট সিঙাড়া মিষ্টি একের পর এক আসতেই থাকত। তিনি পত্রিকা হাতে নিয়ে ভালো করে চোখ বুলিয়ে বলতেন, তুমি তো ভালোই কাজ করছ, অনেক বিষয় বৈচিত্র্য।
অনুবাদ নিয়ে এক আলোচনা প্রসঙ্গে জানতে চেয়েছিলাম ইকবাল অনুবাদ করেছেন এতদিন ধরে কেন? তাঁর উত্তরে বললেন-‘সর্বোচ্চ চূড়ার সর্বোচ্চ প্রাসাদ, আরামবিলাসের অন্ত নেই, আর তার সঙ্গে উপচে-পড়া প্রাকৃতিক সম্ভার। সেইখানে বসে, হঠাৎ একবার মিলিয়ে দেখবার ইচ্ছে হলো রবীন্দ্রনাথ আর ইকবালের মতো প্রায়-সমকালীন দুই কবি-প্রতিভাকে। কাজটি কঠিন ছিল, কেননা মধ্যে ছিল ভাষা ও সংস্কৃতির এমনকী ধর্মবোধের ব্যবধান এবং ইকবাল সম্পর্কে শীর্ণ ধারণা ও তথ্যগত জ্ঞানের অপরিসরতা। তবু আরব্ধ কাজটি সম্পন্ন হল, তবে একটানা নয়, থমকে থমকে।’
প্রথমার্ধ সিমলায় ঘটলেও পরের অংশটি সম্পন্ন করলেন ,‘১৯৯৪-এ এক চা-বাগিচার নিরালায় এবং ’৯৫-এ বেতলার জঙ্গলে। তবু ভরিল না চিত্ত, যেহেতু অপরার্ধের রূপান্তর কর্মে মূল ফার্সি বয়ানের সঙ্গে তাঁর কাজটি মিলিয়ে দেখা হয়ে ওঠেনি’।
২০০৮-এ সে কাজ শেষ হওয়ার পরেও আরও চার বছর পার করে তবে ২০১২-য় এই বই তাঁর অনুমোদন পেল মুদ্রণের। ইকবাল থেকে গ্রন্থটির ভূমিকাতেও তিনি এটাই লিখেছিলেন।
অনুবাদ পত্রিকায় ওনার প্রকাশিত অনুবাদগুলো নিয়ে একটি গ্রন্থ করার ইচ্ছে হল। ওনাকে সে কথা বললাম। বললেন, বেশ। যতগুলো লেখা প্রকাশ পেয়েছে অনুবাদ পত্রিকায়, চেয়ে পাঠালেন। তারপর জানলাম, সেগুলো নিয়ে প্যাপিরাস একটা গ্রন্থ করছে। একটু অভিমান হল। কিন্তু ভেবে দেখলাম, যোগ্য প্রকাশকের হাতেই হচ্ছে। তাঁর বেশিরভাগ বিখ্যাত গ্রন্থগুলো তো প্যা্পিরাসই করেছে।
বেশ কিছুদিন ধরেই অসুস্থতায় ভুগছিলেন। ২০২০ এর একদম গোঁড়ায় অনুবাদ পত্রিকায় অনুবাদ সংক্রান্ত একটি সাক্ষাৎকার নেওয়ার অনুমতি চাইলাম। দিলেন। তবে তখন তাঁর গলার স্বর ভালো করে শোনা যাচ্ছিল না। কিছু কিছু জিনিস লিখে দিচ্ছেলেন কাঁপা হাতে। আমার সঙ্গে সুখেন্দু ছিল, উনিই এই সাক্ষাৎকার পর্বটি দেখেন। উনি লিখে নিচ্ছেলেন যেগুলো বুঝতে পারছিলেন। তারপর মহামারী শুরু হল। গিয়ে নেওয়া আর সম্ভব হলো না। শারদীয়ায় অনুবাদ কবিতা দিলেন। তবে ওনার নিরাপত্তার কথা ভেবে নিজে গিয়ে দিয়ে আসিনি পত্রিকা। পাঠিয়ে দিলাম। প্রাপ্তি স্বীকার করে ফোনে জানালেন সে কথা।
আসলে জ্যেঠুর সান্নিধ্য যে অর্থে সম্পাদক বা লেখক হিসেবে অন্যরা পেয়েছেন, আমি সেভাবে কখনো মিশিনি। ওনার বাড়ির রবিবারের আড্ডাতেও কখনো যাইনি। কিন্তু যে মুহূর্তগুলো পেয়েছি তাতেই সমৃদ্ধ হয়েছি। দেখেছি বিভিন্ন ঘটনায় প্রতিবাদী একটা মানুষে মুখ,যা কখনো পথে নেমে সোচ্চার, কখনো কলমের মাধ্যমে। দেখেছি চরম অপমানিত, আঘাত পেয়েও নিরুত্তাপ একটা মুখ। ভেতরে ভেতরে রক্তাত্ব হয়েছেন, কিন্তু প্রকাশ্যে একটি খারাপ কথা বা অভিযোগ করেননি, যাতে কোনও প্রকার অশান্ত পরিবেশ, বিতর্ক তৈরি হতে পারে। আমি এই নিয়ে দু’একবার জিজ্ঞেস করেছি। উনি শান্ত স্বরে বলেছেন, তুমি বৈশম্পায়নবাবুর মেয়ে। এসব তুচ্ছ আলোচনা থেকে দূরে থেকো। আঘাত এলে সহ্য করার মতো মন তৈরি করতে হয়। শান্ত স্থির থাকতে হয়।
খুব বেশি মতামত দিতেন না, সবাই বলে যাচ্ছেন, আর উনি নীরব শ্রোতা। অথচ আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু উনিই। হয়তো সব শোনার পর একটা প্রতিক্রিয়া দিলেন, কিংবা চুপ থাকলেন। এই সব সময় আমি তাঁর ‘শব্দ আর সত্য’ নামে গ্রন্থের একটি প্রবন্ধ পড়ছিলাম।
যাতে তিনি লিখেছেন-‘শব্দবাহুল্যের বাইরে দাঁড়িয়ে, ভুল আস্ফালনের বাইরে দাঁড়িয়ে সত্যিই যদি নিজেকে, নিজের ভিতর এবং বাহিরকে, আগ্নেয় জীবনযাপনের বিভীষিকার সামনে খুলে দিতে পারেন কবি, সেই হবে আজ তাঁর অস্তিত্বের পরম যোগ্যতা, তাঁর কবিতা।’
জ্যেঠুকে নিয়ে লিখতে বসে এসব কথাই মনে হচ্ছে। কবির তো মৃত্যু হয় না। কবিতায় বেঁচে থাকেন। বার বার মনে হচ্ছে এই মহামারির সময় তিনি যেন নিজেকে আত্মাহুতি দিয়ে বলে গেলেন-
‘এই তো জানু পেতে বসেছি, পশ্চিম
আজ বসন্তের শূন্য হাত—
ধ্বংস করে দাও আমাকে যদি চাও
আমার সন্ততি স্বপ্নে থাক।…
…
আমারই হাতে এত দিয়েছ সম্ভার
জীর্ণ ক’রে ওকে কোথায় নেবে ?
ধ্বংস করে দাও আমাকে ঈশ্বর
আমার সন্ততি স্বপ্নে থাক।’
অজস্র পাঠকের, লেখকের মনে ও স্বপ্নে থাকবেন জ্যেঠু তথা কবি প্রাবন্ধিক অনুবাদক শব্দের কারিগর শঙ্খ ঘোষ। আর আমি একা বসে লিখব তাঁকে নিয়ে কিছু মুহূর্তের লেখা।