তারপরও দেখা হয়ে গেল ॥ রওশন রুবী


অলঙ্করণ: লংরিড

তারপরও দেখা হয়ে গেল

তোর আর আমার দেখা হবে না জেনেই উল্টে গেল ঋতু
বদলে গেছে সবুজ, নদীগুলো বিষধর সাপের অবিকল,
না তুই, না আমি অসতর্ক ছিলাম; ডাকিনি কেউ,
আমাদের মাঝে বিনা নোটিশে ঢুকে পড়েছে সে।

আমি আর তুই আমাদের নাম লিখতে লিখতে যেদিন
মার্বেল হয়ে গিয়ে ছিলাম, সে-ই সেদিন শপথ ছিল
ছুটি নেই, তবু আজ ঘণ্টা বাজে সাদা সাদা জোছনার;
আমাদের দেখা হবে না জেনেই যত্রতত্র লকডাউন।

তারপরও অজস্র চোখ ফাঁকি দিয়ে দেখা হয়ে গেল
অতন্দ্রবোধের অণুতে তখনো ফুটেছিল বকুল।

মুছে দিয়েছি ক্রন্দন
এরকম সন্ধ্যায় কখনো তুমি ছড়াওনি বারুদের আস্তিন
তাই বলে তুমি নও ক্যামেলিয়া হেরাগুহা কিংবা জমজম।
লাবণ্যের ধারাপাত ছুঁয়ে যে মুখ, তার বিশুদ্ধতা দেখনি
বুঝনি, সিঁদুর মুছে গেলে রমণীরা চিতাও গিলে নিতে পারে।

আগ্নেয়াস্ত্রের মুখে ধেয়ে আসা টাইফুন কতবার থেমে গেছে
অবিশ্বাসের বানে বিস্ফোরিত চোখও একদিন ঘুমিয়েছে।
তুমি রাখনি তখনও খবরের কাগজে ঘুম ঘুম চোখ
গুডমর্নিং ‘টি’ এর মধ্যে ডোবাওনি সল্টস্বাদের ঠোঁট।

মজ্জা, পাঁজরে, তারও ভেতর আরও মোহের জগত
সেই জগতে এফোঁড় ওফোঁড় আমার দেশের আকাশ।
সীমান্তের চিহ্ন তুলে দেখ বহুবার পৃথিবী হতে চেয়েছি
উদ্যম ভালোবাসায় মানুষের কাছে হারিয়ে যেতে চেয়েছি।

তুমি তো জাননি বাঁচার লোভে কতটা কাঙ্গাল মন
কতটা অনিহায় আঙুল থেকে মুছে দিয়েছি আঙুলের ক্রন্দন।
জাননি বলেই তুমি সন্ধ্যাতারায় দেখে নিতে পারনি পথ
শুকতারা চেননি বলে, চিনতে পারনি শৈল্পিক সমাদর।

 আমরা দুজন
আমরা দুজন অনাবাদি রঙতুলিতে মেশা
আমাদেরই খুদকুঁড়োতে অন্যরকম নেশা

আমরা দুজন বিকেল ভেঙে একটি সেতু গড়ি
আকাশ ছুঁতে দিনদুপুরে কারুমইয়ে চড়ি

আমাদের নেই গোলাপ বাগান অঢেল কাঁটার ঘাত
এক মোহনায় ভিড়াই তরী এক মোহনায় প্রভাত।