নির্দ্দিষ্ট ঠিকানা
মনে হয় বাড়িঘর ছিলো আমারও এক সময়—
ছিলো নির্দ্দিষ্ট ঠিকানা,
দলিজে ছনের চালে ঘাসফড়িংয়ের লাহান
ছিলো লতানো লাল ফুল,
চুনসুরকি ঝুরঝুরে হয়ে ঝংকারে এখনো বাজে পুরানো দিনের বীণা,
কড়িকাঠে ঘুনপোকার ক্রমাগত কারসাজি-
পিঞ্জিরায় দানা খুটতো বুলবুল।
জনপদে হতো যুদ্ধ,
রাত-বিরাতে নারিকেল পাতার নকশা আঁকা উঠানে দাঁড়িয়ে
গুনেছি করতলে গ্রহের আঁক—
আংগুরির কোমল হীরায় দেখেছি সপ্তর্ষির প্রতিফলন,
পানাপুকুরে ফুটেছে পদ্ম—
গন্ধে সুরভিত হাওয়াটাকে ধরতে চেয়েছি হাত বাড়িয়ে,
হয়নি সৃজন, ভেবেছি চলে যাবো অন্য কোথাও,
খুঁজেছি ভিন্ন রাজ্যে নির্বাসন।
স্বপ্নের শিথানে বসে বাড়িটি শুধায় —
বাস কী তোমার হালফিল সরাইখানায়?
সবুজ কলমী থেকে চয়ন করো কী খাদ্যপ্রাণ
পুষ্টি জোগায় চিত্রাপাকরা গাই,
দেখো কী মোরগফুলের নকশা আঁকা তসবির
কখনো অভাল শেপের আয়নায়?
যেখানে বাস করো অধূনা,
আছে কী আমলকির তরুছায়া— পেয়েছো কী সিগ্ধ ঠাঁই?
ইস্পাতের সাঁকো
ইস্পাতের সাঁকো—যমুনায় দীর্ঘতর এ সেতু
রেলিং এ হেলান দিয়ে ভাবা যেতে পারে
উপখ্যানের কথকথা—ফুল্লরার বাচনিকে কালকেতু;
অশোভন হবে না কিছু—
যদিও লোককথায় স্থবির ব্যথিত ব্যঞ্জনায় অন্য সময়,
পুঁথির ভাববিগ্রহে রূপসলিলের হয়েছিলো বন্য পরিণয়;
ইনসান অতিক্রম করে গেছে অবিরের রূপালি শান
বয়ে যায় নাও-শুঁশুকের পাল-পরাণী পুরানো নদী,
গ্রীবায় জড়িয়ে সাপ ভেসেছে বেদে.. ভাটির প্রণয়
ভেসে গেছে জনপদ.. থিতু মানুষের সংসার সমাধি;
পাড়ে ঘাস.. ঝিঙেমাঁচা.. এসেছে ঋতু শিমুলে তীব্র লাল,
সাপের ঝাঁপি মাথায়…সর্ষে খেতে উড়েছে ফড়িং
দাঁড়িয়ে দেখেছে কে নিসর্গের ভাববিনয়… সুরতহাল;
জালে ছলকে রোহিত… স্রেফ রূপালি দৃশ্যমান,
সেতুর ছায়া কেটে ভেসে গেছে কলসি ভরা গয়না
ভাটিয়ালী পালে প্রসারিত হৃদয়ের পরিত্রাণ;
উদ্বেগ রহিত বাতাসে দোলেছে কাশফুল বালুতটে,
শিশুরা হয়েছে স্মৃতির কারিগর.. প্রণয়ে দিশেহারা
শুঁশুকের বিশাল বুঁজকুড়ি মাথা কুটে বহমান জলপটে।