নিষিদ্ধ রোদ ॥ সীমা শামীমা


পুনর্জন্ম
কোথাও নড়েচড়ে উঠে ছায়া দেবাক্ষ অভিমান,
হাওয়ার তুমুলে জাগে দেবালয়, পর্ণমোচী গানে কুয়াশার সেতার।
প্রবীন সন্ধ্যা, বাসন-ভাঙা চাঁদের মতো হেলে থাকে পুরানো চাতাল, কিশোরী চাঁদের আলোয় বাজে বিস্মৃত ঘুঙুর, নাচের মুদ্রায় বশীভূত অপ্সরী পা, ধূপছায়া শরীর, রুদ্র নৃত্যে জাগে পূর্বজন্মের শোক, আবছায় সহচর । স্মৃতি-বিস্মৃতির ধোঁয়ায় মূর্ত হয় বিমূর্ত কায়া, গতসঙ্গ প্রীতম , ঝড় হয়ে আসে সম্মোহিত পুরুষ, প্রাচীন বিগ্রহ ভেঙে, স্থির হয় ছায়ার বিপরীতে ! ধ্যান ভাঙে রাতের তমসা, জন্মান্তর প্রেমিকের ঘ্রাণে!

জড়তা ভাঙা নাগপঞ্চমী রাতে জাগে কামিনীগন্ধা প্রেম,নিভৃত আলাপন; সন্তপর্ণে মেলে আঙুলের ভাঁজ, হাতের তালুতে আঁকা পূর্বজন্মের নাগ! ললাটজুড়ে ঠিকরে পড়া আলোর বিচ্ছুরণ, দৃষ্টিতে লেখা নবজন্মের উপাখ্যান , বিগত প্রণয়ের।

বাঘবন্দি চাল
হয়তো ভিড়িয়েছো তরী আর নদী-চরে
যে চরের কচি ধানে দুধের মতোন
ব্রীড়া নত সাদা মাইজ রয়েছে গোপন
চিঁউ চিঁউ সাঝে-প্রাতে ডাকো মিঠা স্বরে।
আনোখা আনকোরা মৃদু জওয়াব ছওয়ালে
বুঝিবা ধানের বুকে জাগে শিহরণ
তারেও কি শিখিয়েছ আদি ব্যাকরণ?
পড়েছে কি ধরা সেও বাঘবন্দি চালে?

রূপের কোড়ক তার মেলছে কি আড়াল ?
চাঁদের আলোয় তার নদী উঠে ফুলে?
তুমিও তরীর পাল তুলো কি, কৌশলে?
ফসলিয়া গন্ধে তার হও কী মাতাল?

তোমার মৌসুমি প্রেম জোয়ারের রেশে
চরের ফসল ফুল তলাবে কি শেষে?

নিষিদ্ধ রোদ
কিছু চিরকুট, ছেঁড়াগদ্যের মতো উড়িয়ে দিলেই কি নিভে যায় দহনকাল?
ভেজা কুয়াশার ভারী কান্নায় ঝরে যাওয়া রাতের মতো নিঃসঙ্গতা বাকরুদ্ধ করে রাখে এক নামহীন সম্পর্কের আত্ম-চিৎকার। কখন নিভে গেছে শুকতারা, নিভে গেছে আলো ছায়াকাল, হিসেবের গড়মিলে ভুল ছিল চন্দ্রতিথি। তবু জাগে প্রেম, নিষিদ্ধ রোদ, ছলকে উঠা হাসির গোপন!

হাওয়ার কাঁপণে জেগে উঠা প্রবীণ জলাশয়ের মতো গহীনে জেগে উঠে পুরানো সাময়িক!

সীমানা পেরিয়ে আসা প্রবল মায়ায় গচ্ছিত আত্মবঞ্চনার বীজ! রূপের সমস্ত ঐশ্বর্যে বিম্বিত হয়ে সূর্যের প্রস্থানে নুয়ে থাকা সূর্যমুখী জানে কতটা আগুন নির্বাপিত হয়ে আছে প্রতিটি পাপড়ির আড়ালে!