একটি কুকুরের মৃত্যু
মূল: পাবলো নেরুদা
ভাষান্তর: ফখরুজ্জামান চৌধুরী
মারা গেল আমার কুকুরটি
তাকে আমি সমাহিত করি বাগানে
পুরনো মরচে ধরা একটি যন্ত্রের পাশে।
একদিন আমিও হবো তার অনুগামী
তবে এখন সে পরলোকে তার বিচ্ছিরি কোটটিসহ
খারাপ ব্যবহার আর ঠান্ডা নাক নিয়ে
আর আমি এক বস্তুবাদী যে কখনও করেনি বিশ্বাস
আকাশে প্রতিশ্রুত স্বর্গে, যার প্রত্যাশায় আছেন অনেকে।
আমার বিশ্বাস, স্বর্গে কখনও হবে না আমার যাওয়া
তবে হ্যাঁ আমার আস্থা আছে কুকুরকুলের স্বর্গে
যেখানে অপেক্ষায় আছে আমার কুকুর
আমার যাওয়ার, পাখাসদৃশ লেজ নেড়ে নেড়ে।
এই পৃথিবীতে দুঃখের কথা আর না-ই বা বলি
একজন সঙ্গী হারানোর বেদনার কথা
যে ছিল না আমার ভৃত্যসুলভ
তার বন্ধুতা আমার সাথে ছিলো সজারুর উষ্ণতার মতো
তার বন্ধুত্বে ছিলো না কোনো রকম বাড়াবাড়ির আমেজ
আমার পোশাক বেয়ে কখনও ওঠেনি সে
এমনই চমৎকার ছিলো তার ব্যবহার!
কখনও সে আমার হাঁটুতে ঘষেনি মুখ
যৌনতা-কাতর অন্য সারমেয়র মতো।
না। আমার কুকুর থাকতো তাকিয়ে আমার দিকে
আমার প্রতি দরকারি খেয়াল রেখে
আর মনোযোগ খুবই জরুরি ছিলো
আমার মতো ফাঁপা এক মানুষের জন্য
কুকুরের ওই যে সময়ের অপচয়
কিন্তু তার চোখ যা ছিলো আমার চেয়েও মনোহর
তাকিয়ে থাকতো আমার দিকে অবিরাম,
যা ছিল একান্ত আমারই পাওয়া
তার চাহনিতে কখনও অস্বস্তি ভোগ করিনি
এবং ছিলো তা মধুরতা আর মায়ামোহে ঘেরা।
কতবার আমি ঈর্ষা করেছি তার লেজকে
একসাথে সাগরতীরে একসাথে ভ্রমণের কালে
নেগরা দ্বীপে শীত শীত আর আবহাওয়ার মাঝে
যেখানে শীতের পাখিরা ছেয়ে রাখতো আকাশ
আর পশমে ঢাকা কুকুর আমার লাফ দিয়ে উঠতো
সাগরের সান্নিধ্যে বলীয়ান হয়ে
সাগর বরাবর তার সোনালি মুখ নিয়ে থাকতো তাকিয়ে
আহা কী আমুদে ছিলো আমার কুকুরটি!
আমার পরলোকগামী কুকুরের জন্য নেই কোনো বিদায় অভিবাদন
আমরা কোনোদিন মিথ্যা বলিনি একে অন্যে
তাই এখন এটাই সারকথা,
আমার কুকুরটি আর নেই, আর আমি তাকে করেছি সমাহিত।