স্মৃতিতে ভয়াল আগস্ট ॥ মুহম্মদ নূরুল হুদা


অভয়দাশ লেনে থাকতাম। চাকরি করতাম বাংলা একাডেমির অনুবাদ বিভাগে। কী অদ্ভুত মিল। ১৯৭৫ সালেও বাংলা একাডেমিতে চাকরি করেছিলাম, অনেক সময় পেরিয়ে বাংলা একাডেমিতে পুনরায়। মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করছি। যাই হোক, প্রতিদিনই ভোরে ঘুম থেকে উঠতাম।

১৫ আগস্ট, সেদিনও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। উঠেই রেডিও শোনার অভ্যাস ছিল। কিন্তু সেদিনের সংবাদ বিশ্বাস করার মতো না। বঙ্গবন্ধু নেই, এটা কী করে সম্ভব!

কিছুক্ষণ থ হয়ে বসে থেকে, বাংলা একাডেমির নিরাপত্তা বিভাগে টেলিফোন করি। তারা জানায়, নিজেরাও এমনটা শুনেছেন। বিস্তারিত কিছু জানে না। মন খারাপ করে বাহিরে গেলাম। না, পরিস্থিতি স্বাভাবিক দেখলাম না। মানুষজন কম, হাঁটাচলায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। দোকানপাট খুব খুলছে না।

গাড়ি নেই, রিকশা আছে। থেমে থেমে চলছে মানুষ। বলাবলি করছে, যেখানে বঙ্গবন্ধুর নিরাপত্তা হয়নি। সেখানে আমরা তো সাধারণ মানুষ। আমাদের কী হবে!

দিনের সময় যত যাচ্ছে, ততই বড় কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে—এমনটা আঁচ করা যাচ্ছে। তারপর একটা রিকশা নিয়ে বাংলা একাডেমির দিকে রওয়ানা হলাম। কিন্তু মন ভীষণ খারাপ। আজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠান, এখানে বঙ্গবন্ধুর আসার কথা। অথচ তিনি আর নেই। মানা যায় না, গতকালও ঘাতকরা তার পাশেই ছিল। তার বিশ্বাস, আন্তরিকতা উদারতাই কাল হলো।

মনে পড়ে, রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে গণভবনে সাক্ষাৎ করেন এবং জাতীয় স্বাধীনতা সংহতকরণে বঙ্গবন্ধুর নির্ভুল নেতৃত্বাধীনে নতুন সমাজ গঠনের সংগ্রামে বাংলাদেশের জনগণের বিরাট সাফল্যের প্রতি উত্তর কোরিয়ার গভীর শ্রদ্ধা প্রকাশ করেন। একই দিনে ‌‘বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লব বাস্তবায়নে বেসরকারি শিল্পের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে ভাষণ দেন উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম।

বিশ্ব নন্দিত এমন মানুষটাকেই শেষ করে দিল নিজ দেশের মানুষ। এই মানুষটার কারাজীবন ছিল অনন্ত আলোকায়নের পথে সোচ্চার অভিযাত্রা। কারান্তরাল থেকে জাতীয় স্বাধীনতার বিষয়ে তার উপলব্ধি আরও দৃঢ় ও প্রগাঢ় হয়।

নোট: এই লেখাটি গত ৬ আগস্ট (২০২১) ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের অনলাইনে ‘চার কবির স্মৃতিতে ভয়াল আগস্ট’ শিরোনামে প্রকাশিত লেখা থেকে সংকলিত