ভয় আর ভাবনা এক না। আলাদা। গতরাতে মৃত্যুভাবনা আঁকড়ে ধরলো। সেটা ভয় বা আতঙ্ক না। ডাক্তারের কাছে থেকে আসার পর সবগুলো রিপোর্ট ছবি তুলে আমার নিয়মিত চিকিৎসককে পাঠালাম। একটা টেক্সট ম্যাসেজ দেখে তড়িঘড়ি রিপোর্টগুলো আবার খুঁটিয়ে দেখলাম। সমস্যা চিহ্নিত রিপোর্ট দেখে চিন্তায় পড়ে গেলাম। এতো আসলেই খারাপ। স্বাভাবিক না।
কিছুই যেনো করার নেই। চুপচাপ ভাবলাম কিছুক্ষণ। ক্ষুধা প্রায় নেই বললেই চলে। কী যেনো একটু খেলাম মনে নেই। একটা রিল্যাক্সের টেবলেট খেয়ে বালিশে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়লাম। মনে হলো শূন্য হয়ে আছে শরীর। দেহের কাছে মনের অসহায়ত্ব অথবা মনের কাছে দেহের। এই দুটো জিনিসই শুধু আমার আপন। আর কেউ ভাববার নেই, তাই কারোর অসহায় হবার কারণ নেই। ছেলেকে সবকিছু বলি আবার অনেক কিছু বলি না। এও সবটুকু বললাম না। ও ভালো থাকুক।
ঝিম মেরে সুয়ে আছি। অনেকক্ষণ। কতক্ষণ ঠিক মনে নেই।
তারপর ধীরে ধীরে মনে হলো, ঠিক আছে। বাঁচবো না। কিন্তু এই রোগে হুট করে হয়তো মরে যাবো না। ভুগে ভুগে মারা যাবো। তো, মারা যাবার আগে কিছুদিন সময় পাওয়া যাবে। যতদিন পর্যন্ত বাঁচার সময় পাবো কিছু কাজ করতে পারা যাবে। কিছু লেখা লিখতে পারবো হয়তো।
তারপর ভাবনা হালকা হলো। আস্তে আস্তে ঘুমিয়ে গেলাম। খুব ভোরে ঘুম ভেঙে গেলো। ইদানিং যে সমস্যাটি হচ্ছে তেমনি অস্বস্তিতে কিছুক্ষণ কাটলো। এদিক ওদিক করে আরেকটু ঘুমানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু ওই ছোট ছোট শুকনো কাশিটা ভীষণ কষ্টদায়ক। ঘুমিয়ে থাকলেও জাগিয়ে তোলে। তাই আর ঘুমানো গেল না, উঠে পড়লাম।
এখন বেশ সকাল। খুব ধীরে কিছু কাজ করলাম। আগে তাড়াহুড়ো করতাম। আজ নিজেকে বোঝালাম, নো। আর তাড়াহুড়ো করা চলবে না। সেই শক্তিটা নেই। যেটুকু সময় আছে খুব ধীরে ধীরে কিছু কাজ করতে পারলে করতে পারো। না হলে চলবে না।
আদা গরম জল ফুটিয়ে খেলাম। মৃত্যু ভাবনা এখন নেই। আমি এতোটা পারবো ধারণা ছিল না। নিজের উপর নির্ভর করে চলতে চলতে নিজের উপর কনফিডেন্স বেড়েছে। এখনও তাই-ই।
নান্দিকের জন্যে কয়েকটি দরকারি কাজে পুরোনো ঢাকা যেতে হবে। সবরকমের ভাবনাচিন্তা একপাশে সরিয়ে রেখে প্রস্তুতি নিয়ে বের হলাম।
সবাই জমি কেনে। বাড়ি করে। গাড়ি কেনে টাকা জমায়। আমি বড় জোর কয়েকটা পছন্দের সুতি কাপড় কিনতে চেয়েছি। তাকে সৌখিনতা বলা যায়, বিলাসিতা না। একটা ভালো বই অথবা একটা সাধারণ সুন্দর কলম উপহার পেলেই আমার উৎসব মুখর সময় গড়িয়ে পড়ে। আমার হৃদয় হাসিতে বাঁশিতে ফুঁ দিয়ে জানান দেয়, সে খুশি।
আমার থাকার জায়গা নেই। অনেক টাকা নেই। অথচ আমি চাই প্রতিষ্ঠান গড়তে। নান্দিক পাঠাগার গড়ে তুলতে আমার শেষ শক্তিটুকু উজাড় করে দিয়ে যাচ্ছি।
আমার মৃত্যুর পর আপনারা দেখবেন। সেই আশায় আমার শান্তি লাগে। বই নিয়ে একটা উৎসব করার খুব ইচ্ছে ছিল। হবে কিনা জানিনা। সে পর্যন্ত বেঁচে থাকা হবে কিনা জানিনা। সবার বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের সহযোগিতা থাকে, আমার নেই।
আজকে খুব ক্লান্ত লাগছে। কোনোকিছুই খেতে ইচ্ছে করছে না। কিছু খেলে অস্বস্তি লাগছে। গুলিস্তান হয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে কাজ সেরে আর চলতে পারছিলাম না। ছেলেটা সঙ্গে ছিল। তাই রক্ষা। আমি কখনো ইতিহাস গড়তে চাইনি। হতে চাইনি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ মানুষ। তাই বলে সবার অবহেলা পাবো এরকমই কী চেয়েছি! না, চাইনি। এতোটা অযোগ্য তো আমি নই!
অচিরেই ফেলে রাখা শব্দগুলো কথা বলে উঠবে। আমার মৃত্যু হবে যখন! সূর্যোদয় হবে নতুন করে।