রক্তে আঁকা ভোর উপন্যাসে বাংলাদেশের গৌরবোজ্জ্বল একটা সময়কে তুলে আনার চেষ্টা করেছি ॥ আনিসুল হক


মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ছয় খণ্ডের উপন্যাস ‘রক্তে আঁকা ভোর’ প্রসঙ্গে কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক বলেছেন, ২০০৯ সাল থেকে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক এই উপন্যাসের কাজ শুরু করি। এই উপন্যাসে বাংলাদেশের গৌরবোজ্জ্বল একটা সময়কে যতটা পেরেছি তুলে আনার চেষ্টা করেছি।

বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর ২০২১) স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় টরন্টোয় পাঠক, ভক্ত, শুভানুধ্যায়ীদের সঙ্গে এক লেখক আড্ডায় তিনি এ কথা বলেন।

আনিসুল হক বলেন, নতুন প্রজন্মের সিংহভাগই নিজেদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সুষ্পষ্ট ধারণা এবং পরিকল্পনা নিয়েই বড় হচ্ছে। দেশের মানুষও একটি নির্দিষ্ট সময়ান্তরে ভালো কিছুর স্বপ্ন নিয়েই সামনে এগিয়ে যাচ্ছে।

কানাডার বাংলা পত্রিকা ‘নতুনদেশ’ এর প্রধান সম্পাদক শওগাত আলী সাগরের সঞ্চালনায় টরন্টো ফিল্ম ফোরামের মাল্টিকালচারাল সেন্টারে অনুষ্ঠিত এই লেখক আড্ডায় কবি আসাদ চৌধুরী সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। টরন্টো ফিল্ম ফোরামের সভাপতি এনায়েত করীম বাবুল এতে সমাপনী বক্তব্য রাখেন।

আনিসুল হক তার বক্তব্যে নিজের লেখক হয়ে ওঠার কাহিনি বর্ণনার পাশাপাশি সম্প্রতি সমাপ্ত উপন্যাস, সমসাময়িক কবি-লেখকদের সাহিত্যকর্ম সম্পর্কে নিজের ভাবনা, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং বিশ্লেষণ তুলে ধরেন।

খান আদিব আল আশিকের গিটারের সঙ্গে ফাতমা সুমাইয়া খান বিদুর কণ্ঠে আনিসুল হকের লেখা কবিতা আবৃত্তি দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। টরন্টোর শুভানুধ্যায়ীদের পক্ষে আতিকুর রহমান কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক এবং কবি আসাদ চৌধুরীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।

নতুন প্রজন্ম সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক বলেন, ‘তরুণদের বড় একটি অংশই বই এবং অন্যান্য টেক্সট পড়েন। বিভিন্ন ফোরামে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরাও অত্যন্ত বুদ্ধিদীপ্ত প্রশ্ন করেন। এর মাধ্যমে তাদের পড়াশোনা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।’

কবি আসাদ চৌধুরী তার বক্তব্যে কথাসাহিত্যিক আনিসুল হকের মেধা এবং প্রতিভার প্রশংসা করে বলেন, ‘লেখক হিসেবে আনিসুল হক জনপ্রিয় কিন্তু তার সবচেয়ে বড় গুণ তার বিনয়। অকপটে অন্য লেখকের প্রশংসা করা এবং অগ্রজদের সম্মান করার ক্ষেত্রে তিনি অকৃপণ।’

আনিসুল হকের ‘রক্তে আঁকা ভোর’ উপন্যাসকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে অসাধারণ কাজ হিসেবে অভিহিত করে কবি আসাদ চৌধুরী বলেন, ‘ইতিহাসকে আশ্রয় করে উপন্যাস লেখার ক্ষেত্রে আনিসুল হক ইতিহাসের প্রতি সত্যনিষ্ঠ থেকেছেন।’

‘নতুনদেশ’ এর প্রধান সম্পাদক শওগাত আলী সাগর বলেন, ‘সাহিত্য এবং সাংবাদিকতায় দাপটের সঙ্গে বিচরণের মাধ্যমে আনিসুল হক নিজেকে স্বতন্ত্র স্বত্ত্বা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন। মুক্তিযুদ্ধে ভাবধারায় নাগরিকদের মানস গঠনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।’

কথাসাহিত্যিক আনিসুল হকের ৬ পর্বের উপন্যাসের শেষ পর্ব রক্তে আঁকা ভোর (প্রথমা প্রকাশন, সেপ্টেম্বর ২০২১)। এক দশক আগে ২০১১ সালে ‘যারা ভোর এনেছিল’ দিয়ে যে উপন্যাসধারার সূচনা, তা আরও চারটি উপন্যাস- উষার দুয়ারে, আলো-আঁধারের যাত্রী, এই পথে আলো জ্বেলে, এখানে থেমো না–এর ধারাবাহিকতায় সমাপ্ত হয় রক্তে আঁকা ভোর-এর বিপুলায়তন ক্যানভাসে। স্বাধীন স্বদেশের জন্য বাঙালির মহাকাব্যিক মুক্তিযুদ্ধকে ১২৪টি অধ্যায়ে ধারণ করা হয়েছে এই উপন্যাসে। ৫০ বছর আগে একাত্তরের মার্চে পাকিস্তানি বাহিনী কর্তৃক বাঙালির মুক্তির মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে গ্রেপ্তার, তাঁর স্বাধীনতা ঘোষণা এবং এই বাংলায় ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম গণহত্যার চিত্র দিয়ে যে উপন্যাসের সূত্রপাত; তা শেষ হয় ১৯৭২-এর ১০ জানুয়ারি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর অশ্রুসিক্ত আনন্দ-আগমনের মধ্য দিয়ে।