ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। তাকে বলা হয় ভাষা আন্দোলনের প্রথম সৈনিক। ১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসে দেশভাগের পর নতুন রাষ্ট্র পাকিস্তানে ভাষা নিয়ে তিনিই সর্বপ্রথম সরব হয়েছিলেন।
পাকিস্তান সৃষ্টির ছয় মাস পর করাচীতে পাকিস্তান গণপরিষদের প্রথম অধিবেশনে পরিষদের ব্যবহার্য ভাষা কী হবে, সে-সম্পর্কে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়-১৯৪৮ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি। প্রাথমিক চিন্তা ছিলো, গণপরিষদের ব্যবহার্য ভাষা হবে উর্দু ও ইংরেজি। পূর্ব বাংলার কংগ্রেস দলীয় সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত এ অধিবেশনে ভাষা আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক সূত্রপাত ঘটান।
অধিবেশনের শুরুতে আলোচনার সূত্রপাত করে পূর্ব বাংলার কংগ্রেস দলীয় সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত বলেন, Mr. President, Sir, I move: “That in sub-rule (1) of rule 29, after the word ‘English’ in line 2, the words ‘or Bengalee’ be inserted.”
ধীরেন্দ্রনাথ দত্তর ১৩৬তম জন্মদিন ২ নভেম্বর। ১৮৮৬ সালের ২ নভেম্বর তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রামরাইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা জগবন্ধু দত্ত ছিলেন কসবা ও নবীনগর মুন্সেফ আদালতের সেরেস্তাদার।
তিনি ছিলেন একাধারে আইনজীবী, সমাজকর্মী ও রাজনীতিবিদ। তার জীবন ছিল বর্ণাঢ্য ও বৈচিত্র্যময়। তিনি ১৯০৭ সালে ত্রিপুরা হিতসাধনী সভার সেক্রেটারি নির্বাচিত হন । ১৯৩৬ সালে ত্রিপুরা (বর্তমানে কুমিল্লা) জেলা বোর্ডের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৪২ সালে ভারত ছাড় আন্দোলনে যোগ দেন। ব্রিটিশ বিরোধী কার্যকলাপের জন্য তিনি বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তার হন। ১৯৪৬ সালে কংগ্রেস দলের পক্ষে বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার সদস্য নির্বাচিত হন। পাকিস্তানের সংবিধান রচনার জন্য ঐ বছর ডিসেম্বরে পূর্ববঙ্গ হতে তিনি পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৪৮ সালে পাকিস্তান গণপরিষদে তিনি অধিবেশনের সকল কার্যবিবরণী ইংরেজি ও উর্দুর পাশাপাশি বাংলাও অন্তর্ভুক্ত রাখার দাবি উত্থাপন করেন। ১৯৫৪ সালের জুন মাসে পাকিস্তান গণপরিষদের অধিবেশনে তিনি পূর্ব পাকিস্তানে গভর্নরের শাসন প্রবর্তনের বিরুদ্ধে একটি ছাঁটাই প্রস্তাব উত্থাপন করেন। ১৯৫৬ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর পর্যন্ত আতাউর রহমান খান-এর মন্ত্রিসভায় তিনি পূর্ব পাকিস্তানের স্বাস্থ্য ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় তাকে গৃহবন্দি করা হয়। ১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ রাতে পুত্র দিলীপকুমার দত্তসহ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তাদেরকে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে অমানবিক নির্যাতন করে হত্যা করা হয়।