কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক সোমবার (১৫ নভেম্বর) রাতে রাজশাহী শহরে মারা গেছেন।
রাজশাহী থেকে সাংবাদিক আনোয়ার আলি জানিয়েছন, শহরের বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় নিজ বাসভবনে তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮২। তিনি বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে তিন দশক ধরে অধ্যাপনার পর ২০০৪ সালে অবসর নেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্মানসূচক ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
অধ্যাপনার পাশাপাশি তিনি বহু লেখালেখি করেছেন। একাধারে গল্প, উপন্যাস ও প্রবন্ধ লিখেছেন তিনি। বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, একুশে পদক ও স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছেন।ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও তিনি আনন্দ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন।
হাসান আজিজুল হক ১৯৩৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার যবগ্রামে সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মোহাম্মদ দোয়া বখশ্ এবং মা জোহরা খাতুন। জীবনের অধিকাংশ সময় রাজশাহীতে কাটিয়েছেন হাসান আজিজুল হক। ১৯৫৪ সালে যবগ্রাম মহারানী কাশীশ্বরী উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ১৯৫৬ সালের খুলনার ব্রজলাল কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। যৌবনে ছাত্ররাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন তিনি। রাজনীতি করার কারণে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে নির্যাতন ভোগ করেন। ১৯৫৮ সালে রাজশাহী সরকারি কলেজ থেকে দর্শনে সম্মানসহ স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন হাসান আজিজুল হক। ১৯৬০ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
হাসান আজিজুল হক ১৯৬০ থেকে ১৯৭৩ পর্যন্ত রাজশাহী সিটি কলেজ, সিরাজগঞ্জ কলেজ, খুলনা সরকারি মহিলা কলেজ এবং সরকারি ব্রজলাল কলেজ অধ্যাপনা করেন। ১৯৭৩ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৪ সাল পর্যন্ত অধ্যাপনা করেন।
২০০৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু চেয়ার পদের জন্য মনোনীত হন এবং দায়িত্ব পালন করেন এ খ্যাতিমান কথাসাহিত্যিক। ২০১৪ সালের আগস্টে তিনি বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘের সভাপতি নির্বাচিত হন।
হাসান আজিজুল হকের উল্লেখযোগ্য বই
গল্পগ্রন্থ: সমুদ্রের স্বপ্ন শীতের অরণ্য (১৯৬৪), আত্মজা ও একটি করবী গাছ (১৯৬৭), জীবন ঘষে আগুন (১৯৭৩), নামহীন গোত্রহীন (১৯৭৫), পাতালে হাসপাতালে (১৯৮১), নির্বাচিত গল্প (১৯৮৭), আমরা অপেক্ষা করছি (১৯৮৮), রাঢ়বঙ্গের গল্প (১৯৯১), রোদে যাবো (১৯৯৫), হাসান আজিজুল হকের শ্রেষ্ঠগল্প (১৯৯৫), মা মেয়ের সংসার (১৯৯৭), বিধবাদের কথা ও অন্যান্য গল্প (২০০৭)।
প্রবন্ধ: কথাসাহিত্যের কথকতা (১৯৮১), চালচিত্রের খুঁটিনাটি (১৯৮৬), অপ্রকাশের ভার (১৯৮৮), সক্রেটিস (১৯৮৬), অতলের আধি (১৯৯৮), কথা লেখা কথা (২০০৩), লোকযাত্রা আধুনিক সাহিত্য (২০০৫), একাত্তর : করতলে ছিন্নমাথা (২০০৫), ছড়ানো ছিটানো (২০০৮), কে বাঁচে কে বাঁচায় (২০০৯), বাচনিক আত্মজৈবনিক (২০১১), চিন্তন-কণা (২০১৩), রবীন্দ্রনাথ ও ভাষাভাবনা (২০১৪)।
উপন্যাস: আগুনপাখি (২০০৬), সাবিত্রী উপাখ্যান (২০১৩), শামুক (২০১৫)।