ধারাবাহিক গল্প (পর্ব-৫)
আল্লাহই জানেন চা নিয়ে এসে কী কথা শুনতে হয়! আকলিমা খানম উঠে গেলে তন্ময় তার পিছে পিছে গিয়ে বললো, মা, তোমার হাতের চুড়ি দুটোয় চারভরি সোনা!
: সোনা? এই দেখ, রূপোলি ঝিলিক! সোনা এমন হয়? সোনা হলে ও দিতো?
: ওটা ওইভাবে মিনা করা। যেন ছিনতাইকারীরা সোনা চিনতে ভুল করে!
: না, না, তাহলে এ চুড়ি আমি রাখবো না! ওকে ফিরিয়ে দিস!’ বলে আকলিমা খানম চুড়ি দুটো খুলে ফেললেন।
তন্ময় বললো, মা আমার যা ফেরত দেয়ার তা আমি কীভাবে দিয়েছি, তুমি দেখেছো! কিন্তু তোমারটা ফেরত দেয়ার সাধ্য আমার নেই। আর তোমারও ও প্রসঙ্গ না তোলাই ভালো। ও দুটো যে সোনা তা সে সিএনজি ছাড়ার সময়ে বলেছে। বলেছে, বললাম এজন্য, নাহলে লিমা আন্টি হেলাফেলা করে রাখবে। আর যারা ওটা চিনবে তারা নিয়ে যাবে…।
: মেয়েটা আমাকে একটা নামও দিয়ে গেলো এ বয়সে!
: শোনো যার কাছে যা থাকে সে তো তাই দেবে। আমরা না জেনে সব বড়লোককে খারাপ বলি!
: বড় লোক মানে বড় মানুষও। যার শুধু টাকা আছে, কিন্তু খরচ করার মন নেই। তাকে টাকাওয়ালা বলা যেতে পারে। বড় মানুষ বলা যাবে না। তুই মেয়েটার নাম্বার দে। আমি ফোন করে মেয়েটাকে বকা দিই!
: আমার ফোনটা আসলে হারিয়ে গেছে। তোমাদেরকে তা বলিনি। আর ওর কাছে সে কথা বললে ওর আরেকটা ফোন ও আমাকে গছিয়ে যেতোই।
পল্লব বুবলির বন্ধু। যদিও বুবলি ওদের ক’জনের ভেতর সব থেকে ছোট। পল্লবই বলেছিলো, তো অর্ধসমাপ্ত অনার্স দিয়ে যখন কোনো চাকরিই পাচ্ছিস না, দেখি তোকে একজায়গায় নিয়ে।তোর মাপে কিছু আছে কি না!’ বলে পল্লব বুবলিকে ফোন করে তন্ময় সম্পর্কে সব বললো। শেষ কথা ঠাট্টা করে বললো, তন্ময় দেখতে একেবারে নায়কের মতো। ডায়ালগও আওড়াতে পারে ভালো। চাকরি দিতে পারিস না পারিস দেখে রাখিস। বলা তো যায় না, আমরা যদি কখনো কেউ ছবিটবি বানাই ও কে দিয়ে বিনা টাকায় নায়কের রোলটা করিয়ে নিতে পারবো!
ওপাশ থেকে মোবাইলের স্পিকারে ভেসে আসা উত্তরটি তন্ময়ের কানেও পৌঁছে গেলো, ‘খালি চেহারা সুন্দর হলেই নায়ক হওয়া যায় না, জনিস না!’
: আরে লুকও ভালো বলে পল্লব ফোন রেখেই তন্ময়কে বললো, চল বুবলি যেতে বলেছে। ও ওদের বাসা ধানমণ্ডি থেকে রওনা দিচ্ছে। আমরা শাহবাগ থেকে বাসে উঠে বনানী যাই!
: বনানী কেন যাবো?
: বুবলিদের আইটি ফার্মে। বিরাট ফার্ম ওদের বুঝলি!
: আইটি ফার্মে আমার কী কাজ?
: দেখি, যদি বিড়ালের ভাগ্যে সিকে ছেড়ে!
পল্লব, তমাল, শাকিল ও তন্ময় চারজনে মিলে বনানী পৌঁছে বুবলিকে পল্লব ফোন দিলো। সে তখনো জ্যামে। কিছুক্ষণ ওরা অফিসের বাইরে ঘোরাঘুরি করতেই বুবলি এসে পৌঁছুলো। গাড়ি থেকে নেমে কোনো ধরনের ভূমিকা না করেই পল্লবের দিকে তাকিয়ে বললো, আগে ওকে ইন্টারভিউটা দিইয়ে আনি। এমডি চাচার সাথে কথা বলে এসেছি।
কিন্তু বুবলি তন্ময়কে রেখে নিজে অফিস থেকে নেমে এসে বিরস বদনে বললো, হবে না। যার সহকারী দরকার তিনিই ইন্টারভিউ নিয়েছেন। ও পারবে না তার সহকারী হতে। তার কিছুটা কাজ জানা থাকলে বাকিটা কাউকে দিয়ে ওকে বিশেষভাবে ট্রেনিং দিয়ে করিয়ে নিয়ে যেতো। কিন্তু এখানে যেসব কাজ হয়, সেসব সম্পর্কে ওর কোনো ধারণাই নেই! আর এটা তো প্রাইভেট কোম্পানি। এদের ইনকাম দিয়েই এদের বেতন দেওয়া হয়। তাই সহকারী দুর্বল হলে কাজের মান পড়ে যায়।
তন্ময় ফিরে এসে বুবলির কথা নিজেই শুনতে পেলো। তাতে তার কিছুটা ভাবান্তরই হলো। বুবলি সেদিকে নজর না দিয়ে বললো, তা এখন তোরা কে কি করবি?
পল্লবই বললো, কি আর করবো? ফিরে যাই। জাদুঘরে আজ একসাথে কয়েকজন বিখ্যাত শিল্পীর গানের অনুষ্ঠান আছে। সেজন্যই আমরা ওখানে একত্র হয়েছিলাম।
বুবলি বললো, সে
তো বিকেল থেকে শুরু হবে?
হ্যাঁ! কিন্তু তাই বলে তো আর এখন ঘরে ফিরে যাওয়া যাবে না। একেকজন একেকদিক থেকে এসেছি। তুই বরং আমাদের কিছু খাওয়া!
: চল, তোদের সাথে আমিও গান শুনি। আমারও চারুকলায় কাজ আছে। আমি একছাত্রের কাছে ছবি আঁকা শিখবো। কথা হয়েছে।
: ছবি যদি আঁকা শিখতে হয়, ছাত্র কেন, তুই চারুকলার কোনো টিচারের কাছে শেখ। তোদের তো আর টাকার অভাব নেই!
: টাকা থাকলেই বুঝি খরচ করতে হয়? আর বাচ্চার হাতেখড়িতে প্রফেসারের দরকার হয় না!