প্রচ্ছদ চূড়ান্ত হয়েছে। শিল্পী আল নোমান।শিল্পীর কাছে কৃতজ্ঞতা। প্রচ্ছদ আমার ভালো লেগেছে। বইটি প্রকাশ করবে চন্দ্রবিন্দু প্রকাশন।
এবার বইয়ের নামকরণের গল্পটা বলতে চাই।শ্যামশ্রী রায় নামে সত্যিই একজন আছেন যিনি এই বইয়ের নামগল্পের অনুপ্রেরণা। আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের বন্ধু তিনি এবং এক অর্থে সহপাঠী।
স্নাতক হওয়ার পর পার্লিয়া, শ্যামশ্রীসহ সাত বন্ধু একটা সফটঅয়্যার ফার্ম দিয়েছিল যার প্রথম অফিস ছিল মহাখালীর ডিওএইচএস-এ। আমি প্রায়ই যেতাম। তখনও আমি-পার্ল (Jahra Jahan Pearlya ) বিয়ে করিনি।
অফিসে গিয়ে চা খেয়ে একা ফিরতাম।কখনো অফিস-সময় শেষ হওয়ার জন্যে অপেক্ষা করতাম যেন সন্ধ্যাটা আশপাশে হেঁটে বন্ধুরা ক’জন একটা মন হালকা করা সময় পার করতে পারি। যেদিন এমনটা হতো, আমি পার্ল আর শ্যামশ্রী একটা বিশেষ রাস্তা ধরে হেঁটে যেতাম। নির্জন সেই রাস্তা। তার ধারে ছিল এক নিঃসঙ্গ বাড়ি।
বাড়িটা দোতলা। দ্বিতীয় তলায় বড় একটা অর্ধচাঁদ আকৃতির বারান্দা। নান্দনিক, রাজসিক! ভেতরটা কেমন অন্ধকার। আমাদের অবাক করত বাড়ির খোলা ফটক। কিন্তু বহুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পরও কাউকে আমরা ঢুকতে বা বের হতে দেখতে পেতাম না। বাড়িটা যেন শুধু রহস্যেরই আবাস। বুঝি ওখানে কোনো মানুষ থাকে না। এই বাড়ি প্রথম আমাদের দেখিয়েছিল শ্যামশ্রী রায়।
নির্জন রাস্তায় মনের ভেতর অনেক বাক্য জন্ম নিতো। একদিন একটা বাক্য প্রকৃতিদেবী মনে এনে দিলেন। বাক্য অথবা বাক্যের রূহ।
“জাদুকরের গোপন শিশি কাত হয়ে সন্ধ্যা বের হয়ে আসে।”
সন্ধ্যার সেই নির্জন বাড়ি, তার সামনে বিভ্রান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা শ্যামশ্রী রায়, আর সেই বাক্য, সবে মিলে একটা গল্পের আত্মা যেন তৈরি করে দিলো যার শরীর তখনো অনুপস্থিত।
আমি কাগজ কলম নিয়ে মহানিয়মের কৃৃপায় সেই শরীর তৈরি করতে বসলাম। লেখা হলো এক সন্ধ্যায় শ্যামশ্রী রায়।
বইয়ে আরো থাকছে আন্দালুসিয়া, প্রেমিক, শ্রীপুরের যাত্রী, রমনাসহ মোট আটটা গল্প।এক সন্ধ্যায় শ্যামশ্রী রায়কে তাদের নেত্রী মেনে বইয়ের নাম রেখেছি।
আমি প্রকৃতির রহস্যঘন আধ্যাত্মিকতার আজন্ম মোহগ্রস্ত পূজারি। আমার লেখায়, আঁকায় কেবল মোহটুকুই আনতে পারি। মূল অধ্যাত্মিকতা তার রস-রহস্য নিয়ে চিরঅধরা। কোনোদিন কি সে ধরা দেবে?
প্রচ্ছদালাপে আসি।
লেটারিং প্রধান এ প্রচ্ছদ আমার বেশ রকম ভালো লেগেছে। বেশ আপন মনে হয়েছে। কখনো কখনো পুরনো শৈলী নতুন হয়ে আসে। মনে হয়েছে, নোমান এ প্রচ্ছদে তারই নিরীক্ষা করেছেন। এগিয়ে যাওয়ার অংশ হিসেবে খানিক পেছন ফিরে দেখেছেন। আমাকে কৃতজ্ঞ করেছেন।
বাকিটুকু পাঠক-গ্রহীতার হাতে। প্রকৃতির হাতে।
[ লেখাটি লেখকের ফেসবুক থেকে নেওয়া ]