পুরস্কার পেলেন ৮ লিটলম্যাগ সম্পাদক


এই প্রথম জাতীয় পর্যায়ে ৫ জন লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদককে পুরস্কার প্রদান করা হলো। সারা দেশ থেকে লিটল ম্যাগাজিন সংগ্রহ করে নির্বাচিত ৫ জন সম্পাদককে এ পুরস্কার দেয় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। একই সঙ্গে পুরস্কৃত করা হয় জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে শিল্পকলা একাডেমি প্রকাশিত আরো ৩টি পত্রিকাকে। পাশাপাশি রয়েছে এক সপ্তাহব্যাপী সংগ্রহকৃত লিটল ম্যাগাজিনগুলোর প্রদর্শনী। উল্লেখ্য, ইতিপূর্বে বাংলাদেশে এভাবে সরকারি পর্যায়ে কখনো কোনো লিটল ম্যাগাজিনকে পুরস্কৃত করা হয়নি।

শিল্প-সাহিত্য চর্চার বিকাশে লিটল ম্যাগাজিন তথা ছোটকাগজ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।বুদ্ধিবৃত্তিক ও সৃজনশীল চর্চার সাথে সম্পৃক্ত বিভিন্ন সংগঠন বা গোষ্ঠীর মুখপত্র হিসেবেও লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশ পেয়ে থাকে। দেশে ষাটের দশক থেকে একুশের চেতনাকে ধারণ করে লিটল ম্যাগাজিন চর্চা প্রসার লাভ করে।বিশিষ্ট কবি, লেখক, বুদ্ধিজীবীরা কোনো না কোনোভাবে একসময় ছোটকাগজের সাথে যুক্ত ছিলেন।পাড়া-মহল্লা থেকেও বিভিন্ন দিবসে ও আয়োজনে একসময় ম্যাগাজিন প্রকাশিত হতো। আশির দশকে বাংলাদেশে লিটল ম্যাগাজিন চর্চা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। নব্বইয়ের দশকে তা আরো ব্যাপক গতি পায়। লিটল ম্যাগাজিন শুধু তরুণদের মুখপত্র নয়, তারুণ্যের মুখপত্র। যে লেখায় নতুনত্ব ও তারুণ্য আছে, তাকেই প্রকাশ করে লিটল ম্যাগাজিন।লিটল ম্যাগাজিন কখনোই লেখালেখি চর্চার আঁতুরঘর নয়।লিটল ম্যাগাজিন বিকল্প চিন্তাকে উৎসাহিত করে।

গণতন্ত্র, সামাজিক সাম্য ও গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও ছোটকাগজ নতুন প্রস্তাবনা ও পরিকল্পনা উপস্থাপন করে থাকে। এ দেশের গণ-আন্দোলন ও সংগ্রামের ক্ষেত্রেও বিভিন্ন সময় ছোটকাগজকর্মীরা ইতিবাচক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন।শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির নতুন ধারা, নতুন মত এবং মতবাদ চর্চা ও ঘোষণার ক্ষেত্রে ছোটকাগজ সংশ্লিষ্ট মত ও ধারণার সপক্ষে অগ্রগামী ভূমিকা পালন করে থাকে। ছোটকাগজ থেকে শিল্প-সাহিত্যের সমকালীন গতি-প্রকৃতি ও প্রবণতা সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়।শিল্প-সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে ছোটকাগজ প্রকাশের ধারাবাহিকতা অত্যন্ত জরুরি।এ কারণে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি দেশে বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত ছোটকাগজ নিয়ে প্রদর্শনী আয়োজনসহ গুরুত্বপূর্ণ ছোটকাগজকে সম্মাননা জানানোর জন্য, ‘লিটল ম্যাগাজিন প্রদর্শনী ও সম্মাননা-২০২২’ আয়োজন করে।

সম্মাননাপ্রাপ্ত নির্বাচিত লিটল ম্যাগাজিন হলো: কবি ওবায়েদ আকাশ সম্পাদিত ‘শালুক’, আবদুল মান্নান স্বপন সম্পাদিত ‘ধমনি’; শহীদ ইকবাল সম্পাদিত ‘চিহ্ন’; মিজানুর রহমান নাসিম সম্পাদিত ‘মননরেখা’ এবং এজাজ ইউসুফী সম্পাদিত ‘লিরিক’। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে তিনটি লিটল ম্যাগাজিনকে সম্মাননার জন্য নির্বাচন করা হয়। জেলা শিল্পকলা একাডেমি রাজশাহী থেকে প্রকাশিত আসাদ সরকার সম্পাদিত ‘মহাকালগড়’; জেলা শিল্পকলা একাডেমি সিলেট থেকে প্রকাশিত অসিত বরণ দাশগুপ্ত সম্পাদিত ‘সুরমাকপোত’ এবং মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলা শিল্পকলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত ‘আরণ্যক’।ঢাকা থেকে একমাত্র কবি ওবায়েদ আকাশ সম্পাদিত ‘শালুক’কে পুরস্কার দেওয়া হয়। আর বাকি সাতটি পত্রিকাকে ঢাকার বাইরে থেকে বেছে নেওয়া হয়।

সম্মাননার জন্য লিটল ম্যাগাজিন নির্বাচনের বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি বিশিষ্ট লেখক-গবেষক মফিদুল হক, বিশিষ্ট অনুবাদক ও সাহিত্যিক অধ্যাপক আবদুস সেলিম এবং কবি ও অধ্যাপক খালেদ হোসাইন। সম্মাননা হিসেবে কেন্দ্রীয় পাঁচটি লিটলম্যাগ সম্পাদককে পঞ্চাশ হাজার টাকা, ক্রেস্ট ও সনদ প্রদান করা হয়। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নির্বাচিত তিনটি লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদককে পঁচিশ হাজার টাকা, ক্রেস্ট ও সনদ প্রদান করা হয়। লিটল ম্যাগাজিনের আট শতাধিক সংখ্যা নিয়ে ১-৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ জাতীয় চিত্রশালার ৬ নং গ্যালারিতে প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

লিটল ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: আখতারুজ্জামান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন: লেখক সৈকত হাবিব, আলোচনা করেন কবি ও লোকগবেষক সদ্য বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত, ‘অমিত্রাক্ষর’ সম্পাদক আমিনুর রহমান সুলতান, এবং ‘লোক’ সম্পাদক অনিকেত শামীম। স্বাগত বক্তব্য দেন মো: আছাদুজ্জামান, সচিব, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। অনুষ্ঠানে সভাপত্বি করেন জনাব লিয়াকত আলী লাকী, মহাপরিচালক, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কবি সৌম্য সালেক।