হৃদয় ছোঁয়া ॥ শামরুজ জবা


হৃদয় ছোঁয়া

মন-প্রাণ চুরি করছে ভিনদেশী এক ছোড়া,
জাগতিক কাজ ভুল হয়ে যায় সে যে নাটের গোড়া।
মনের ঘরে সিঁদ কেটেছে দেখছি শুধু চেয়ে,
কিছুই করার ছিল না মোর শক্তিহীন মেয়ে।
কাজে কর্মে দিবানিশি ভাবনা করে কাজ,
ধরবো তারে বাঁধবো মনে রাখবো না আর লাজ।
অনেক আগেই সাধ ছিল প্রেমের সঙ্গা জানতে,
এখন আমার ইচ্ছে নেই প্রেমের সঙ্গা মানতে।
অজানা এক মনোকষ্ট তবু অনেক সুখ,
কাছে পাবার বাসনাতে কাঁদে এখন বুক।
ইচ্ছে করে সাদাবকের ডানামেলে উড়ি,
ইচ্ছে করে রংধনু ছুঁই দুজন এখন ঘুড়ি।
ভাত শালিকের কিচিরমিচির খুনসুটিতে মোরা,
সুখেদুখে রেখো বুকে পায়রা পাখির জোড়া।
স্বপ্নগুলো খেলা করে মাথায় কিসের মন্ত্র,
লোকের সামনে গেলে এখন যেন বোবা যন্ত্র।
সর্বনাশ করে গেছে পাড়াগাঁয়ের ছোড়া,
ভালোমন্দ যাচাই ছাড়া এখন তার জোড়া।

ভাবনার কলরোল
হাজার বছর আগে
আশ্চর্য অভিমানে হারিয়ে গেছো তুমি
অথচ এই দেহে মিশে আছে বিমূর্ত প্রেমশিখা!

কত জল গড়ালো গঙ্গায়-
বাতাসের নৌকায় চলে গেল কত সময়!
আমি সেই অবুঝ-
মনের প্রচ্ছদে তোমার অবাক প্রতিবিম্ব,
বুকের পাঁজরে কিশোর স্পর্শের মুখস্ত স্পন্দন।

অতীতের ছায়াগুলো
দৃষ্টির সীমান্তে এখনো জোনাকি,
বাতাসে সারাক্ষণ চিরচেনা সেই শরীরী ঘ্রাণ,
চোখের সৈকতে জল-টলমল, ছলছল!

নীরবে ভাবি-
জীবন এক রহস্যঘেরা আকাশ;
এই কত হাসি-গান,
এই আবার ব্যথার সুরে সংগাহীন দীর্ঘশ্বাস!
স্বপ্নরা ঝরা পাতা-মরুর বুকে, নদীর জলে…

বিস্ময়ে দেখি-
সব আছে, শুধু কোথাও তুমি নেই!
বিধিহীন শোকের তাপে
আমাদের চেনা শহর রোদপোড়া গড়ের মাঠ,
চারপাশের মানুষ যেন প্রাগৈতিহাসিক মুমূর্ষু ঘাস।

একান্ত ভাবনা-
পৃথিবীর বুকে আর না আসুক আলো,
এই সবুজ, এই নদী ঢেকে যাক অন্ধকারে,
তবুও কোন এক ক্ষণে তুমি সূর্য বা কালপুরুষ।

তুমি জানো না,
তোমার জন্য এখনো পথ চাওয়া,
তোমার বসবাস আজো হৃদয়ের গোপন ঘরে;
শুধু তোমার জন্য প্রেম
রঙমাখা ঝর্না হবে সারাটি জীবন ধরে।

লুকোচুরি
বেদনায় সুখগুলো কেবলই পাথর
ভাবনায় মেঘ, দুচোখে অশ্রুর সমাহার,
চেনা- জানা পথ সহসা ঝাপসা
অথবা মেরুশীতল গাঢ় অন্ধকার!

জানি, হারিয়ে যাব একদিন
এই মাটি, এই বিশাল জন অরণ্য ছেড়ে
যেখানে জাগে না সৃর্য বা চাঁদ-
বহুবিধ আলোর সুকুমার হাত নেড়ে।

হয়ত সেদিন আকাশে বুকে
আমাকে ভেবে তাকাবে না কেউ উদাসীন,
কোন এক তারার শরীরে মিশে-
আমি থাকবো তোমার ভাবনায় চিরদিন।

মনে পড়ে-বড় বেশি মনে পড়ে,
একদিন তুমি ছিলে অবারিত নীল আকাশ
কখনো আবীর, কখনো পাখি হয়ে-
তোমার সীমান্তে আমার যাবতীয় উচ্ছ্বাস।

তুমি আজ বদলেছ অনেকখানি,
হও না উদাস যখন- তখন আমার ভাবনায়;
স্বপ্ন ভাঙার ব্যথা সমস্ত সাথে নিয়েই
আমিও ডুবেছি কবিতার মোহনায়।

তবুও মাঝে মাঝে বুকের ভেতর
প্রগাঢ় দাগ কাটে তোমার ফেলে যাওয়া হাসি;
অশ্রু এসে দাঁড়ায় বিদগ্ধ চোখের প্রান্তে
অস্ফুটে বলে মন, ভালোবাসি- ভালোবাসি।