পোস্টমডার্ন গল্প সিরিজ-৪ ॥ নাসরিন জে রানি


চিত্রশিল্পী: কাজী জহিরুল ইসলাম

পোস্টমডার্ন গল্প সিরিজ-৪: প্রায়োরিটি লিস্ট

– কোথায় ছিলা?
– কেন?
– ফোন ধরতে চাও না আজকাল, আমি আর প্রাইয়োরিটি লিস্টে একজিস্ট করি না, টুপ করে ফেলে দিয়েছো আমাকে, আমি বুঝতে পারি খুব।
-ফালতু আলাপ বাদ দাও।
কি বলবা দেড় সেকেন্ডে বল।
-পারব না।
-তাহলে থাকো।
-আচ্ছা।
-তোর আচ্ছার গুস্টি কিলাই আমি।
-কিলা শালার বেটা।
-যা ভাগ শালি।
-গুড।
-গুডের বাচ্চা গুড।
-উফ!
-উফ নাম্বার টু!
-মি টু।
-মি ঠু।
-মি ডাবল ঠু।
-আজকের মতন বাই।

-কেন?
-টাইম আপ তোমার।
-বালের টাইম আপ, ফোন কাটবা না তুমি।
-সরি সোনা, কথা বলতে পারছি না।চুলায় রান্না।যেতে হবে।
-তুমি জানো, এই সময়েই আমরা কথা বলি।তাও তুমি ব্যস্ততা দেখাও। ফালতু একটা মাইয়া মানুষ তুমি।
-তোমার বউ ফালতু! কি বল্লা?
-সরি বউ, তোমারে বলি নাই তো! স্লিপ অফ টাং হইছে।
-নো সরি একসেপ্টেড।
-সরি,সরি,সরি।উম্মম্মম্মম্মমুউউমু।

-শালার বেটা তোর সরিগুলারে গ্রেটার দিয়া কুচি কুচি করে কাটবো এখন।আজ ঘরে পেঁয়াজ নাই, অফিস থেকে ফেরার পথে কিনতে ভুলে গেছি।তার বদলে এত সরির সাপ্লাই এখন।আয়, গ্রেটারে তোর জিভ রাখ শালা৷তোর জিভসহ কুচা কুচা কইরা ফালাবো এখন।
আয়।
-আহা! আমার মিস্টি মিস্টি কিউট সফট সফট বউটা।এত ক্ষ্যাপো করো কেন?
-কে মিস্টি রে! কে তোর বউ? ফালতু মাইয়া মানুষ!
তোর বউ!
-তোমারে বলি নাই।
-তো কারে বলছো! এই সত্য বলো, তুমি কি কারো
প্রেমে পড়েছো?
-আরি! নাহ্! উল্টাপাল্টা ভাবা শুরু কইরা দিয়ো না।তুমি খুব প্যারা দাও কিন্তু!

-পুরুষলোক প্রেমে পড়লে ঘরের বউ যখন দূরে থাকে, তারে ফালতু বলতে সুখ লাগে৷তোর মতন ফস ফস কইরা মজা নিয়া বইলা ফেলে।
-এই সিলি একটা কথা নিয়া এত্তো প্যাচাইতেছো কেন? যাও রান্নাটা শেষ করো।খাবা না? অফিস থেকে কখন ফিরছো তুমি? আমার জান? ও বিউটিফুল ফুল!
-করবো না রান্না।
-কেন?
-খাবো না আজ রাতে।আমি ফালতু মেয়ে।ফালতু বউ।খাওয়া তো হয়েই গেলো, আমার সবকিছু ফালতু।
শুনে পেট ভরে গেছে।
-আল্লাহ! কি আফাল দিলা! ফেরত উঠাইয়া নাও মাওলা! শোনো আমার টুই-মুই বাবুদের মা।আমি খুব খুব সরি।মুখ ফসকে বলে ফেলেছি। এইসব মনে নিয়ো না তুমি।তুমি তো জানো তুমি আমার কী? তুমি আমার মন-প্রাণ-চোখ-রক্ত-চুল-হাত পায়ের নখ-ওয়ালেটের টাকা, ঘরের বাইরের সবখানের শান্তি তুমি।যাও তোমার জন্য বিশাল এক ট্রাক সরি-ফুল পাঠাইয়া দিলাম, সমগ্র আমি আর পাঁচ-টনি ট্রাক সরি, সরি, সরি, সরি আর শুধু সরি।
-হবে না।
-ওকে, আই এম রিয়েলি সরি।
-এত সহজে মাফ করা যাবে না।
-কেন বউ!
-আচ্ছা তুমি এখন কোথায়?
-স্টাডি রুমে।
-কিচেনে যাও।
-কেন?
-যাও।আমি বলেছি তাই যাবে।
-আচ্ছা যাচ্ছি, ফোন কেটো না তুমি।
-গেছো?
-হ্যা।
-এইবার একটা প্লেট হাতে নাও।
-আচ্ছা।
-নিয়েছো?
-হ্যাঁ, নিলাম।কি করবো এটা দিয়ে?
-এইবার স্টাডিরুমে যাও আবার।
-আচ্ছা।
-এসেছো?
-হ্যাঁ।এখন কি করবো?
-প্লেটটাকে ফ্লোরে ছুঁড়ে মারো।
-ওহ! আচ্ছা।
-মেরেছো।
-হ্যাঁ, তুমি বলার সাথে সাথেই মেরেছি৷শব্দ পাওনি।
-হ্যাঁ।এইবার প্লেটটাকে সরি বলো।
-ঠিক আছে।ও প্লেট, তোকে সরি বলছি, আমার বউয়ের অর্ডার।
-এখন তুমি বলো-ত, যে প্লেটটাকে মাত্র ফ্লোরে আছাড় মেরে ভাঙলে, ওইটাকে সরি বলার পরে কি আগের মত আস্ত আছে? ও ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায় নাই?
-নাহ! আগের মতনই আছে।আস্তই আছে।
-মিথ্যা বলবা না তুমি।ফাজিল বেটা।
-না মিথ্যা বলি নাই তো বউ।সত্যিই প্লেটটার কিছু হয় নাই।
-কিভাবে সম্ভব! আমি তো আওয়াজ শুনলাম।ওটা ভেঙে গেছে তাই না?
-আরি! নাহ।আমি একটা প্লাস্টিকের প্লেট নিয়েছিলাম।তোমার বাচ্চাগুলা মা বাসায় নাই এই সুযোগে সব কাঁচের প্লেট আগেই ভেঙে ফেলেছে।

তুমি কি এই খেলাটা ওদের সাথেও খেলছিলা নাকি?
-ফোন রাখছি।
-এই ফোন রাখবা না, খবরদার।
-তোর খবরদারের গুস্টি কিলাই।
-কিলাও, কিন্তু ফোন রাখবা না।

পড়ুন

পোস্টমডার্ন সিরিজ: ১ 
পোস্টমডার্ন সিরিজ: ২

পোস্টমডার্ন সিরিজ: ৩