একক বক্তৃতা ॥ শিক্ষার মাধ্যম যতক্ষণ পর্যন্ত বাংলা না হয় ততক্ষণ সাহিত্যের উন্নতি হবে না: সলিমুল্লাহ খান


বাংলায়ন সভায় একক বক্তৃতা করছেন সলিমুল্লাহ খান। ছবি: যোগসূত্র

শিক্ষাব্যবস্থায় বাংলা ভাষা ও সাহিত্য চর্চা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন লেখক, গবেষক ও চিন্তাবিদ অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান। তিনি বলেছেন, যে জাতির নিজের সাহিত্য নেই সেই জাতির মেরুদণ্ড থাকে না। বর্তমানে দেশে জনসাহিত্য বিরোধী অবস্থা চলছে।শিক্ষার মাধ্যম যতক্ষণ পর্যন্ত বাংলা না হয় ততক্ষণ সাহিত্যের উন্নতি হবে না।

গত ৫০ বছরে শিল্প-সংস্কৃতির সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে মন্তব্য করে সলিমুল্লাহ খান বলেন, দেশে মানসম্পন্ন সাহিত্য পত্রিকা নেই। শিল্পকলা একাডেমিসহ বিভিন্ন একাডেমির বড় বড় বিল্ডিং আপনাকে বস্তুত ধোঁকা দেবে।

শনিবার (২৩ জুলাই) সন্ধ্যায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালার সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত ‘বাংলায়ন সভা’র বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন। বৈঠকে তিনি ‘আধুনিকতার মহিমা: বাহ্লটার বেনিয়ামিন ও কাজী নজরুল ইসলাম’ শীর্ষক একক বক্তব্য রাখেন।

যথার্থ স্বাধীনতার জন্য দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে স্বাধীন করতে হবে মন্তব্য করে এই অধ্যাপক বলেন, আধুনিক যুগ দাস তৈরি করছে। আমরা সবাই দাস হয়ে গড়ে উঠছি, চাকরি করছি। আমরা মাথা নিচু করে থাকি। মাথা উঁচু করে কথা বলতে পারি না।

তিনি বলেন, প্রাথমিক পর্যায়েও শিক্ষার মাধ্যম কেন ইংরেজি করা হয়? এটা নিয়ে কেউ কথা বলে না। এই দেশে পাঠ্যপুস্তক আমদানি করতে হয়। পাঠ্যপুস্তক লেখার মতো লোকও তেমন নেই।

তিনি আরও বলেন, ইংরেজি সাহিত্যের বিরোধিতা করছি না। বাংলা চর্চা করতে চাইলে ইংরেজি বর্জন করতে হবে তা না। ইংরেজি কখনো বাংলার অন্তরায় হতে পারে না।

দেশে ৪৫-৫০টি অবাঙালি জাতি রয়েছে। তাদের ভাষাকে মর্যাদা দিলে আমরা বাংলাকে সম্মান দেই প্রমাণ হবে বলে মন্তব্য করেন সলিমুল্লাহ খান।

‘বাংলায়ন সভা’র এটি ছিল তৃতীয় বৈঠক। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন কবি গিরীশ গৈরিক। উপস্থিত ছিলেন অর্ধশতাধিক শ্রোতা ও লেখক-পাঠক। সভার প্রথম বৈঠকের বিষয় ছিল ‘কথাশিল্পী বুলবুল চৌধুরীসহ কোভিড ১৯ অতিমারিতে হারানো বাঙালি গুণীজন স্মরণ’ এবং দ্বিতীয় বৈঠকের বিষয় ছিল ‘উচ্চশিক্ষা ও উচ্চ-আদালতে বাংলা ভাষা ব্যবহারের অন্তরায় এবং উত্তরণের পথ’।

ভাষা আন্দোলন এবং একুশের চেতনাকে ধারণ করে শিল্প-সংস্কৃতির এই সংগঠন যাত্রা শুরু করে ২০২১ সালের ৪ সেপ্টেম্বর। সংগঠনটির মুখপাত্র কথাশিল্পী শামস সাইদ, সম্পাদক কবি ফারুক সুমন ও সমন্বয়কের দায়িত্বে রয়েছেন গাজী মুনছুর আজিজ। সংগঠনটি ‘বাংলা বিশ্বময়’ শ্লোগান ধারণ করে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের সম্প্রসারণের লক্ষ্যে কাজ করছে।