উপন্যাস: Hear the Wind Sing
মূল : হারুকি মুরাকামি
অনুবাদ : মোহাম্মদ আসাদুল্লাহ
[যোগসূত্রের পাঠকদের জন্য হারুকি মুরাকামির প্রথম উপন্যাস Hear the Wind Sing এর অংশবিশেষ ছাপা হলো ]
বন্ধুত্ব
তিন বছর আগে র্যাটের সাথে আমার প্রথম দেখা।বসন্তকালে।আমরা দুজনেই তখন কলেজের প্রথমবর্ষে।উভয়েই ধ্বংসের ভেতরে নিমজ্জিত। আমার মনে পড়ছে না কিভাবে আমাদের পরস্পরের সাথে প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল।আমি এটাও মনে করতে পারছি না কিভাবে আমি তার উজ্জ্বল ফিয়াট ৬০০ গাড়িতে উঠেছিলাম।ভোর ৪টায়।হতে পারে আমাদের দুজনেরই কোনো মিউচুয়াল ফ্রেন্ড ছিল।
মহাসড়কের পাশের একটা পার্কের ভেতরে নিজেদেরকে আমরা প্রথম আবিস্কার করেছিলাম।সম্ভবত গাড়ি দিয়ে প্রাচীর ভেঙে পার্কের ভেতরে প্রবেশ করেছিলাম আমরা।ঢুকেই পার্কের বাগানের সাজানো এযালিয়া ফুলের গাছগুলোকে মাটির সমান্তরালে মিশিয়ে দিয়েছিলাম।তারপর আমাদের গাড়িটা একটা পাথরের পিলারকে আলিঙ্গন করে থেমে গিয়েছিল।তবে, অদ্ভূত ব্যাপার হলো, দুজনে কেউই বিন্দুমাত্রও আঘাতপ্রাপ্ত হইনি।
সে রাতে দুর্ঘটনার প্রাথমিক ধাক্কা সয়ে যাবার পর আমি পা দিয়ে দরজা ধাক্কা দিয়ে কারের বাইরে বেরিয়ে এসেছিলাম।গাড়ির অবস্থা ছিল আসলেই শোচনীয়।রেডিয়েটরের সামনের চালুনি ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিল।ওপরের সামনের হুডটা আকাশপথে উড়ে গিয়ে অবতরণ করেছিলো একটা বানরের খাঁচার সামনে।ওদের চিৎকার-চেঁচামেচিতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল মধ্যরাতে এরকম অভদ্র ও কর্কশভাবে ঘুম ভাঙানোটা তাদের মোটেই পছন্দ হয়নি।
র্যাট তখনো গাড়ির ভেতরে।স্টিয়ারিঙের ওপরে হাত রেখে ড্যাশবোর্ডের ওপরে মাত্র এক ঘণ্টা পূর্বে খাওয়া পিজার সবটুকুই বমি করছে।আমি হামাগুঁড়ি দিয়ে গাড়ির কাছে গেলাম।সানরুফের মধ্য দিয়ে তার দিকে তাকালাম।
“তুমি কি ঠিক আছো?”, জিজ্ঞেস করলাম তাকে।
“হ্যাঁ, তবে মনে হয় পান করাটা বেশি হয়ে গিয়েছিল।তার কারণেই বমি।”
“তুমি কি বের হয়ে আসতে পারবে?”
“পারব।আমাকে একটু ঠেলা দাও।”
র্যাট ইঞ্জিনের উপরিভাগটা কেটে ড্যাশবোর্ডের ওপরে রাখা সিগারেটের প্যাকেটটি পকেটে ঢুকিয়ে আমার হাত ধরলো।তারপর শান্তভাবে গাড়ির ছাদে উঠলো।আমরা পাশাপাশি বসলাম।তারপর নিঃশব্দে একটার পর একটা সিগারেট ধ্বংস করতে লাগলাম।আকাশ ইতিমধ্যেই ফর্সা হতে শুরু করেছিল।কোনো কারণ ছাড়াই সেই মুহূর্তে আমার রিচার্ড বার্টন অভিনীত একটা যুদ্ধের চলচ্চিত্রের কথা মনে পড়ে গেল।এই ছবিতে তিনি ছিলেন একজন সাঁজোয়া বহরের কমান্ডার।র্যাট ঐ মুহূর্তে কি ভাবছিল তা আমার জানা নেই।
পাঁচ মিনিট পর র্যাট আমাকে বলল, “তোমার কি মনে হয় না যে আমরা দুজনেই ভাগ্যবান? আমার গায়ে একটা আঁচড়ের দাগও পড়েনি।বিশ্বাস করতে পারো?”
আমি মাথা নাড়ালাম।“তবে গাড়িটা খরচের খাতায় চলে গেছে,” বললাম।
“এটা নিয়ে চিন্তা করো না।আমি সব সময়েই নতুন একটা কিনতে পারবো।কিন্তু ভাগ্যকে আমরা কখনোই কিনতে পারি না।”
আমি নিবিড়ভাবে র্যাটের দিকে তাকালাম।“তুমি কি খুব ধনী?”
“বলতে পারো।”
“চমৎকার”, আমি বললাম।
র্যাট অবজ্ঞা ভরে মাথা নাড়ালো।বলল, “যাই হোক, অন্তত ভাগ্য আমাদের পক্ষে আছে।”
“ঠিক।”
র্যাট জলন্ত সিগারেটটা তার জুতার তলায় ফেলে দিয়ে পায়ের গোড়ালি দিয়ে নিভিয়ে ফেললো।তারপর সিগারেটের পুঁতাটিকে তুলে নিয়ে বানরের খাঁচার দিকে ছুঁড়ে মারলো।
“শুনো, আমরা দুজনে মিলে যদি একটা দল গঠন করি, তাহলে কেমন হয়? আমার তো মনে হয় ফাটাফাটি ধরনের ভবিষ্যৎ হবে আমাদের।”
“আমরা এখন কি করবো?”, আমি জিজ্ঞেস করলাম।
“আরো অনেকগুলো বিয়ার খাবো।”
আমরা আধ ডজন বিয়ারের ক্যান কিনলাম পাশের ভেন্ডিং মেশিন থেকে।সেগুলোকে নিয়ে সাগরের তীরে গেলাম।বেলাভূমিতে শুয়ে শুয়ে সেগুলো পান করলাম।শেষ করার পর দুজনেই জলের দিকে তাকালাম। চারপাশের আবহাওয়া তখন চমৎকার হয়ে উঠেছিল।
“তুমি আমাকে র্যাট নামে ডাকতে পারো।”, সে বলল।
“এমন অদ্ভুত নাম তুমি কোত্থেকে পেয়েছো?” অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম।
“আমার মনে নেই।অনেক বছর আগে।প্রথমদিকে নামটা নিয়ে কিছুটা বিড়ম্বনা অনুভব করতাম।তারপর থেকে আর করি না।একজন মানুষ সবকিছুতেই অভ্যস্ত হতে সক্ষম।”
বিয়ারের খালি ক্যানগুলোকে আমরা সাগরের ভেতরে ছুঁড়ে ফেলে দিলাম।পেছনের বাঁধের ঢালুতে হেলান দিয়ে শরীর থেকে জামা খুলে ভাঁজ করে নিজেদের মাথার নিচে রাখলাম।সবশেষে দুজনে মিলে একটা লম্বা ঘুম দিলাম।ঘুম ভাঙার পর নিজেকে প্রবল জীবন্ত ও সজীব মনে হলো।এতোটা জীবন্ত আর সজীব আমি কখনোই বোধ করিনি ইতিপূর্বে।
“আমার মনে হচ্ছে আমি ষাট মাইল দৌড়াতে পারবো,” র্যাটকে বললাম।
“আমিও,” র্যাট বলল।
কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে যা ঘটেছিলো তা হলো, আমাদেরকে দুজনকেই পরবর্তী তিন বছর সময়কাল যাবত চক্রবৃদ্ধিহারে সুদসহ পার্ক মেরামতের সমুদয় টাকা সিটিহল কর্তৃপক্ষকে পরিশোধ করতে হয়েছিলো।