সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ আবু রুশ্দ এর নামে প্রবর্তিত সাহিত্য পুরস্কার পেলেন চার লেখক। তারা হলেন- আনোয়ারা সৈয়দ হক, ওয়াসি আহমেদ, পাপড়ি রহমান ও মাহমুদ আখতার শরীফ।
আবু রুশ্দ স্মৃতি পর্ষদের পক্ষ থেকে শনিবার (২৯ অক্টোবর ২০২২) আনুষ্ঠানিকভাবে এই গুণীজনদের হাতে আবু রুশ্দ সাহিত্য পুরস্কার ২০২১-এর স্মারক, প্রশংসাপত্র ও সম্মানী তুলে দেওয়া হয়।
ছায়ানট সংস্কৃতি-ভবনের রমেশ চন্দ্র দত্ত স্মৃতি মিলন কেন্দ্রে এই পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইদুজ্জামান।
আবু রুশদ প্রসঙ্গে এম সাইদুজ্জামান বলেন, ‘আবু রুশ্দের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল আমাদের। তার সান্নিধ্য আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। তার সাহিত্যকর্ম বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ।’
আনোয়ারা সৈয়দ হক চোখ উপন্যাসের জন্য এ পুরস্কার পেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘পেশায় মনোরোগ বিশেষজ্ঞ হলেও আমি মূলত একজন লেখক। ছোটবেলা থেকেই আমি লেখালেখি করি।যদিও পরিবারের ইচ্ছায় আমাকে ডাক্তারি পড়তে হয়েছে, কিন্তু লেখালেখি থেকে আমি কখনো এতটুকু বিচ্যুত হইনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘লন্ডনে যখন হাসপাতালে কাজ করছি, তখন “সোনার হরিণ” নামে একটি লেখা বাংলাদেশের কাগজে ছাপা হয়। সেই গল্পটি নিয়ে আবু রুশ্দ একটি ইংরেজি দৈনিকে আলোচনা লিখেছিলেন। ব্যাপারটি আমাকে ভীষণ অনুপ্রাণিত করেছিল। আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়েছিল যে, আমি লেখালেখি করতে পারব।’
আনোয়ারা সৈয়দ হক বলেন, ‘আজ অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে তাকে (আবু রুশ্দ) স্মরণ করছি।আমার ভেতরে যে আশার প্রদীপ তিনি জ্বালিয়েছিলেন, সে কারণে আমি তার প্রতি কৃতজ্ঞ।আমার জীবনের একজন দিকনির্দেশক হিসেবে তিনি আমার ভেতরে বেঁচে থাকবেন।’
বরফকল উপন্যাসের জন্য পুরস্কার পাওয়া ওয়াসি আহমেদ বলেন, ‘উপশমের জন্য ও আত্মতাড়না থেকে আমি লেখালেখি করি। সেই লেখা যদি পাঠকের মনোযোগ কাড়ে, সেটা আমার কাছে বাড়তি পাওয়া। পুরস্কারপ্রাপ্তির ক্ষেত্রেও তাই।উপন্যাস শেষ করতে আমার দীর্ঘ সময় লেগে যায়।কিন্তু বরফকল শেষ করেছিলাম মাত্র ৭ মাসে। কাজটি করোনাকালে পাঠক লুফে নিয়েছেন।’
পাপড়ি রহমান নদীধারা আবাসিক এলাকা ও মাহমুদ আখতার শরীফ মানুষ হবার কাল্পনিক গল্প উপন্যাসের জন্য পুরস্কৃত হয়েছেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘আবু রুশ্দ অত্যন্ত ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ ছিলেন। তবে কিছুটা বিচ্ছিন্ন ও গম্ভীর। যারা তাঁর সঙ্গে মিশেছেন, তারা জানেন, তিনি ছিলেন ভীষণ সংবেদনশীল ও স্নেহশীল মানুষ। আজ আমরা কেবল তাকে স্মরণ করছি না, তার নামে পুরস্কার প্রদানের মাধ্যমে তার সাহিত্যকে মর্যাদা দিচ্ছি।’
অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘সাহিত্যকে মূল্য দেওয়া এই সময়ের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, আমরা এমন এক পরিস্থিতির দিকে পতিত হচ্ছি যেখানে বিচ্ছিন্নতা, বিদ্বেষ, আত্মকেন্দ্রিকতা, মুনাফালিপ্সা প্রবলভাবে আমাদের আচ্ছন্ন করে ফেলেছে। আমরা প্রযুক্তির উন্নয়ন দেখেছি, যার প্রতিটি সাহিত্যকে সাহায্য করেছে। কিন্তু ইদানীং সাহিত্য অবমূল্যায়িত হচ্ছে। এ জন্য দায়ী মালিকানা।’
তিনি আরও বলেন, ‘পুঁজির দৌরাত্ম্যে বাণিজ্য প্রধান হয়ে উঠেছে। মানুষের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা বেড়েছে, যা করোনায় চরম রূপ লাভ করেছে। এই সময়ে সাহিত্য অত্যন্ত মূল্যবান।সাহিত্য মানুষকে সংলগ্ন করে, কাছে নিয়ে আসে, অনুভূতিকে পরিশীলিত করে, ইতিহাসের সঙ্গে যুক্ত করে। আজ এই পুরস্কার সাহিত্যের প্রতি আমাদের আনুগত্য ও ভালোবাসার প্রকাশ।’
পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, ‘আবু রুশ্দ অনুবাদক হিসেবে ছিলেন অসাধারণ।কাজী নজরুলের অনুবাদ তিনি খুব ভালো করেছেন।’
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন জ্ঞানতাপস আবদুর রাজ্জাক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক আহরার আহমেদ, শিক্ষাবিদ ফখরুল আলম, আবু রুশ্দ স্মৃতি পর্ষদের সদস্য সমাজকর্মী খুশি কবীর। আবু রুশ্দের পরিবারের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা এ আর মামুন।অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বন্যা লোহানী।