গল্প : Sleep
মূল : হারুকি মুরাকামি
অনুবাদ : মোহাম্মদ আসাদুল্লাহ
পর্ব :৩
[যোগসূত্রের পাঠকদের জন্য হারুকি মুরাকামির গল্প Sleep এর তৃতীয় পর্ব ছাপা হলো ]
স্বামী অফিসে ফিরে যাবার পর আমি স্নানের কাপড় ও তোয়ালে নিয়ে এলাকার এথলেটিক ক্লাবে যাই।গাড়ি চালিয়ে।এক ঘণ্টা সাঁতার কাটি। পরিশ্রান্ত না হওয়া পর্যন্ত।সাঁতার কাটা নিয়ে আমার ব্যক্তিগত কোন উন্মাদনা নেই।আমি শুধু আমার মাংশপেশীগুলোকে সবল রাখতে চাই। আমার নিজের শরীরের গড়নকে আমি সকল সময়েই পছন্দ করে এসেছি।তবে আমার মুখমণ্ডলকে আমি কখনই পছন্দ করিনি।কিন্তু আমার শরীর আমার কাছে অন্য রকমের একটা বিষয়।আমি আয়নার সামনে পরিচ্ছদহীন হয়ে দাঁড়াতে পছন্দ করি।আমি সেখানে আমার শরীরের নরম অবয়বকে নীরিক্ষা করে দেখি।এর মধ্যদিয়ে আমি জীবনের প্রাণশক্তিকে খুঁজে পাই।আমি জানি না আসলে সেটা কি? কিন্তু আমার মনে হয় সেখানে ভেতরগত কিছু একটা আছে, যা আমার জন্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।আমি সেটাকে হারাতে চাই না।
আমার বয়স তিরিশ বছর।আপনি যখন তিরিশে পৌঁছাবেন, তখন বুঝতে পারবেন ৩০ বছরই জীবনের শেষ নয়।যদিও আমি বয়স বেড়ে যাওয়াকে পছন্দ করি না, তবুও আমি জানি যে, এটা আমাদের কিছু কিছু জিনিসকে সহজ করে দেয়।একটা বিষয়ে আমি নিশ্চিত যে, যদি তিরিশ বছরের কোন মহিলা সত্যিকার অর্থেই যদি তার নিজের শরীরকে ভালোবাসে এবং সেটা যেমন থাকা উচিৎ, তেমন রাখতে চায়, তাহলে তাকে তাকে অবশ্যই নির্দিষ্ট পরিমাণে প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।আমার মায়ের কাছ থেকে আমি এটাই শিখেছিলাম।এক সময়ে তিনি স্লিম, সুন্দরী মহিলা ছিলেন।তবে বর্তমানে তিনি আর তেমন নেই।আমার ক্ষেত্রেও তার মতো ঘটুক, তা আমি চাই না।
সাঁতারের পর বিকেলের অবশিষ্ট সময়ে আমি বিভিন্ন ধরনের কাজ করি।কখনও আমি স্টেশন প্লাজায় ঘুরে বেড়াই।উইন্ডো-শপিং করি।
কিছু কিছু সময়ে আমি বাসায় ফিরে সোফার উপরে বিড়ালের মতো জড়ো হয়ে শুয়ে বই পড়ি।এফএম স্টেশন শুনি।অথবা শুধুই আরাম করি।এক সময়ে আমার ছেলে স্কুল থেকে ফিরে আসে।আমি তাকে খেলাধুলার পোষাকে পরিবর্তন করতে সাহায্য করি।তার জন্যে স্ন্যাক তৈরি করি।যখন তার যথেষ্ট খাওয়া-দাওয়া হয়ে যায়, তখন সে তার বন্ধুদের সাথে খেলার জন্যে বাইরে চলে যায়।বিকেলে ক্র্যাম স্কুলে যাওয়ার বয়স তার এখনও হয়নি।তাছাড়া আমরা তাকে কোন পিয়ানো বাজানো বা অন্য কিছু শিখাচ্ছি না। ‘তাকে শুধু খেলাধুলাই করতে দাও,’ আমার স্বামী বলে। ‘তাকে প্রাকৃতিকভাবে বড় হতে দাও।’ ‘আমার ছেলে বাসা থেকে বাইরে যাবার সময়ে আমিও স্বামীর মতো তাকে বলি,’ ‘সতর্ক থেকো,’ এবং সে উত্তর দেয়, ‘চিন্তা করো না। ‘পড়ন্ত বিকেলে আমি ডিনার তৈরি করা শুরু করি। আমার ছেলে ঠিক ছয়টার ভেতরে ফিরে আসে।তারপর টিভিতে কার্টুন দেখে।’
কোনো জরুরি রোগী না থাকলে আমার স্বামীও সন্ধ্যা সাতটার আগেই বাসায় ফিরে আসে।সে কখনই এক বিন্দুও মদ পান করে না এবং বিনা কারণে সামাজিকতা করাও পছন্দ করে না।কাজ শেষে সোজা বাসায় ফিরে আসে।ডিনারের সময়ে তিনজনে মিলে আমরা গল্প করি।বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই সারাদিন আমরা কি করেছি সেগুলো নিয়ে।আমার ছেলেরই সবচেয়ে বেশী বলার থাকে।যা কিছুই তার জীবনে ঘটে তার সবই সদ্য ঘটে যাওয়া এবং রহস্যে পরিপূর্ণ।সে কথা বলে এবং আমরা মন্তব্য করি। ডিনারের পর তার যা করতে ইচ্ছে করে, তাই করে।টেলিভিশন দেখে, পড়ে, অথবা আমার স্বামীর সাথে কোন গেইম খেলে।তার যখন কোনো হোমওয়ার্ক থাকে, তখন সে তার কক্ষের দরজা বন্ধ করে সেগুলো করে। সাড়ে আটটায় সে বিছানায় ঘুমাতে যায়।আমি তাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে তার মাথার চুলের ভেতরে আঙুল দিয়ে নাড়ি এবং তাকে শুভরাত্রি জানাই।তারপর তার কক্ষের আলো নিভিয়ে দেই।
তারপর আমরা স্বামী ও স্ত্রী একত্রে।সে সোফার উপরে বসে এবং খবরের কাগজ পড়ে।মাঝে মধ্যে তার রোগীদের সম্পর্কে অথবা খবরের কাগজের সংবাদ নিয়ে কথা বলে।তারপর সে হেইডন অথবা মোজার্ট শুনে।তার সঙ্গীত শোনাকে আমি অপছন্দ করি না।
তবে কোনক্রমেই আমি এই দুই সঙ্গীতজ্ঞের মধ্যে পার্থক্য খুঁজে পাই না। দুজনের মিউজিকই আমার কাছে শুনতে একই রকমের মনে হয়।যখন আমি আমার স্বামীকে এটা বলি, সে বলে যে, এতে কিছুই আসে যায় না। ‘ওগুলো সুন্দর এবং সেটাই বিবেচ্য।’ ‘ঠিক তোমার মতো,’ আমি বলি।‘ঠিক, আমার মতো,’ সে বিরাট একটা হাসি দিয়ে বলে।তাকে তখন সত্যিকার অর্থেই খুব আনন্দিত মনে হয়।
ঘুমানো বন্ধ করার পূর্বে এটাই ছিল আমার জীবন।প্রতিটা দিনই পূর্বের দিনের পুনরাবৃত্তি।আমি একটা ডায়েরি লিখতাম।কিন্তু কোনো কারণে যদি দুই অথবা তিনদিন লিখতে ভুলে যেতাম, তাহলে কোনদিন কি ঘটেছিলো তার খেই হারিয়ে ফেলতাম।গতকাল হয়ত বা হয়ে যেত পরশুদিন অথবা তার উল্টোটা।আমি অনেক সময়েই অবাক হয়ে ভাবতাম যে, এ কেমন জীবন আমার? এর মানে এই নয় যে, জীবনকে আমার শূন্য মনে হতো।আমি শুধুই অবাক হতাম দিনগুলোর ভেতরে কোন ধরনের পার্থক্য খুঁজে না পেয়ে।অথচ সত্য ছিল যে, আমি এই জীবনেরই অংশ ছিলাম এবং এই জীবন আমাকে সম্পূর্ণভাবে গ্রাস করেছিল।
আমি আরও অবাক হতাম এই ভেবে যে, আমার পদচিহ্নগুলো মুছে যাচ্ছিল, আমি সেগুলোকে এক নজর দেখার পূর্বেই।যখনই আমার এটা মনে হতো, তখন আমি বাথরুমের আয়নায় নিজের মুখ দেখতাম।একনাগাড়ে পনের মিনিট সময় ধরে।সে সময়ে আমার মন সম্পূর্ণই শূন্য থাকত। আমি আমার মুখের দিকে এমনভাবে দেখতাম, যেন সেটা কোনো বস্তু ছিল।আস্তে আস্তে এক সময়ে সেটা আমার অস্তিত্ব থেকে পৃথক হয়ে যেত।এবং আমার অস্তিত্বের সমান্তরালে পৃথক কিছু হিসেবে অস্তিত্ববান হয়ে উঠত।তখন আমার মনের ভেতরে একটা বোধোদয়ের সৃষ্টি হতো যে, এটা ঘটছে, এখন, এই মুহূর্তেই।আমার পদচিহ্নের সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই।বাস্তবতা ও আমি পরস্পরের সমান্তরালে অস্তিত্ববান হয়ে উঠতাম।এটাই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল আমার কাছে।
কিন্তু এখন আর আমি ঘুমাতে পারি না।ঘুমানো বন্ধ করার পর আমি ডায়েরি লিখাও বন্ধ করে দিয়েছি।আমার স্পষ্ট মনে আছে সেই রাতটির কথা, যে রাতে আমি ঘুমানোর সামর্থ হারিয়েছিলাম।সে রাতে আমি একটা দুঃস্বপ্ন দেখছিলাম।একটা অন্ধকার, ঘর্মাক্ত স্বপ্ন।মনে নেই স্বপ্নটা কী নিয়ে ছিল।কিন্তু মনে আছে আমার অনুভূতিটা কেমন ছিল।তা ছিল অশুভ এবং ভয়ংকর।উত্তেজনার চরম মুহূর্তে আমার ঘুম ভেঙে গিয়েছিল।একটা চমক দিয়ে।আমার মনে হচ্ছিল কিছু একটা শেষ মুহূর্তে আমাকে মারাত্মক কোনো সন্ধিক্ষণ থেকে ফিরিয়ে এনেছিল।আমি যদি আর এক মুহূর্তও ঘুমের ভেতরে নিমজ্জিত থাকতাম, তাহলে আমি চিরকালের জন্যে হারিয়ে যেতাম।ঘুম থেকে জাগার পর, কিছুক্ষণ আমার নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল।আমার হাত ও পাগুলোকে মনে হচ্ছিল অবশ হয়ে গেছে।আমি অসাড় হয়ে শুয়ে আমার নিজের ক্লান্তিকর শ্বাসপ্রশ্বাসের শব্দ শুনছিলাম।মনে হচ্ছিল আমি একটা গুহার ভেতরে লম্বালম্বি শুয়ে আছি।
‘এটা স্বপ্ন,’ আমি নিজেকে বলেছিলাম এবং অপেক্ষা করছিলাম আমার শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক হয়ে আসার।পিঠের উপরে নিশ্চল হয়ে আমি অনুভব করেছিলাম যে, আমার হৃদপিণ্ড অস্বাভাবিকভাবে কম্পিত হচ্ছে।আমার ফুসফুস হাপরের মত ধীরে ধীরে সংকুচিত হয়ে নিজের ভেতরে রক্ত টেনে নিচ্ছিল।আমি বোঝার চেষ্টা করছিলাম যে, ঘড়িতে তখন কয়টা বাজে।বালিশের উপরের ঘড়ির দিকে তাকানোর চেষ্টা করেছিলাম।কিন্তু আমার মস্তককে বেশী ঘুরাতে পারছিলাম না। ঠিক এই সময়ে আমি বিছানার শেষপ্রান্তে কিছু একটার ছায়া দেখতে পেয়েছিলাম।শূন্য ও কালো ছায়ার মতো কিছু।ভয়ে আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল।আমার হৃদপিণ্ড, ফুসফুস, আমার ভেতরের সকল কিছুই সেই মুহূর্তে স্থির হয়ে গিয়েছিল।আমি প্রাণপণে চেষ্টা করেছিলাম কালো ছায়াটিকে দেখতে।যে মুহূর্তে আমি সেটার উপরে দৃষ্টিকে কেন্দ্রীভূত করার চেষ্টা করেছিলাম, তখনই সেটা একটা নির্দিষ্ট আকার ধারণ করতে শুরু করেছিল।ঠিক যেন সেটা আমার লক্ষ্য করার জন্যেই অপেক্ষা করছিল।ওটার অবয়ব স্পষ্ট হবার পর সেটা বস্তু দিয়ে পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছিল।এবং তারপর সেটার বিস্তারিত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ স্পষ্ট হতে শুরু করেছিল।
ওটা ছিল একটা বৃদ্ধ লোক।পরনে চামড়ার সাথে এঁটে থাকা কালো শার্ট। তার চুলগুলো ছিল বাদামি ও ছোট।তার গাল দুটো চুপসে ছিল।সে আমার পায়ের কাছে দাঁড়িয়েছিল।একদম স্থির হয়ে।কিছুই বলছিল না। কিন্তু তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল।তার চোখদুটো ছিল খুবই বড়।আমি সেখানে শিরার জাল দেখতে পাচ্ছিলাম।বৃদ্ধ লোকটির মুখে কোনো অনুভূতির প্রকাশ ছিল না।সেই মুখ দিয়ে আমাকে সে কিছুই বলছিল না।তার মুখটিকে দেখতে মনে হচ্ছিল অন্ধকারের ভেতরে একটা খোলা গর্ত।তবে এটা স্বপ্ন ছিল না।আমি জানতাম।স্বপ্ন থেকে আমি আগেই জেগে উঠেছিলাম।শুধু জেগে উঠা নয়, আমার দুই চোখই তখন খোলা ছিল।এবং আমি নিশ্চিত ছিলাম যে, ওটা ছিল বাস্তব।তবে এই বৃদ্ধকে আমি ইতিপূর্বে দেখিনি, আমার বিছানার শেষপ্রান্তে দাঁড়ানোর পূর্বে।
আমি ভেবেছিলাম আমার কিছু করা উচিৎ।যেমন আলো জ্বালানো, স্বামীকে ডাকা, চিৎকার করা।আমি নড়ার চেষ্টা করেছিলাম।সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করেছিলাম আমার অঙ্গগুলোকে সক্রিয় করতে।কিন্তু আমার কোন প্রচেষ্টাই সার্থক হয়নি।আমার একটা আঙুলও আমি নড়াতে পারছিলাম না।যখন আমার কাছে স্পষ্টভাবে মনে হয়েছিল যে, আমি আর কোনদিনই নড়াচড়া করতে সক্ষম হবো না, তখন একটা আশাহীন ভয় আমাকে আক্রান্ত করেছিল।এটা ছিল এমন একটা আদিম ভয়, যার অভিজ্ঞতা আমি ইতিপূর্বে কখনই অর্জন করিনি।শীতলতার মতো যা স্মৃতির তলাহীন কুয়া থেকে নিঃশব্দে উঠে এসেছিল।আমি চিৎকার করার চেষ্টা করেছিলাম।কিন্তু শব্দ উৎপাদন করতে সক্ষম ছিলাম না। এমনকি আমার জিহ্বাও নাড়াতে পারছিলাম না।
শুধুমাত্র আমি একটা জিনিস করতে সক্ষম হয়েছিলাম। তা হল বৃদ্ধ লোকটির দিকে তাকিয়ে থাকতে।আমি দেখতে পেয়েছিলাম যে, সে কিছু একটা ধরে আছে –একটা লম্বা, সরু, গোলাকার ধরনের উজ্জ্বল সাদা কোন জিনিস।আমি যখন এই বস্তুর দিকে তাকিয়েছিলাম, ভাবতে ভাবতে যে এটা কী হতে পারে, তখন সেটা একটা নির্দিষ্ট আকার ধারণ করছিল। ঠিক আগের ছায়াটার মতো।সেটা ছিল একটা কলস।পুরনো আমলের পোর্সেলিনের তৈরি।কিছুক্ষণ পর লোকটা কলসটিকে উপরে উঠিয়ে সেটা থেকে আমার পায়ে জল ঢালতে শুরু করেছিল।কিন্তু আমি জলকে অনুভব করতে পারছিলাম না।শুধু দেখতে ও শুনতে পাচ্ছিলাম জলের ছিটা আমার পায়ের উপরে পড়ছে।সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার ছিল সে যতই ঢালছিল না কেন, কলসটা কখনই খালি হচ্ছিল না।আমি উদ্বিগ্ন হওয়া শুরু করেছিলাম যে, শেষ পর্যন্ত আমার পা পচে ও গলে যাবে।পায়ে জল ঢালা ছাড়া সে আর কী করতে পারে? এই কথা ভাবতেই আমার পা পচে গলে যেতে শুরু করেছিল।আমি আর সহ্য করতে না পেরে চোখ বন্ধ করে শরীরের সমস্ত শক্তি একত্রিত করে সুতীব্র চিৎকার দিয়েছিলাম।
কিন্তু সেই চিৎকার আমার শরীর ছেড়ে কোথাও যায়নি।আমার ভেতরেই ধ্বনিত–প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল।আমাকে ছিন্নভিন্ন করে।আমার হৃদপিণ্ডকে স্তব্ধ করে।যখন আমার চিৎকার আমার প্রতিটি কোষের ভেতরে প্রবেশ করেছিল, তখন আমার মস্তকের ভেতরের সবকিছুই মূহুর্তের ভেতরে সাদা বর্ণ ধারণ করেছিল।এবং আমি অনুভব করেছিলাম যে, আমার ভেতরের কিছু একটা মরে এবং কিছু একটা গলে গিয়ে মিলিয়ে গেছে।কম্পমান একটা শূন্যতাকে রেখে।তারপর একটা বিস্ফোরক আলোর ঝলকানি আমার অস্তিত্বের সবকিছুকেই পুড়িয়ে ছাই করে দিয়েছিল। আমি যখন চোখ খুলেছিলাম, তখন বৃদ্ধ লোকটি সেখান থেকে চলে গিয়েছিল। কলসটাও সেখানে ছিল না। বিছানার প্রান্তগুলো ছিল শুষ্ক। এবং আমার পায়ের কাছে কোনকিছুই ভেজা ছিল না।
যদিও আমার শরীর ঘামে ভেজা ছিল।ভয়ংকর ধরনের ভেজা।এত ঘাম যে মানুষের শরীর তৈরি করতে পারে সে সম্পর্কে আমার কোন ধারণাই ছিল না।কিন্তু সত্য যে, এই ঘামগুলো আমার শরীর থেকেই নির্গত হয়েছিল।আমি প্রথমে একটা আঙুল নেড়েছিলাম।তারপর অন্যটা, এবং আরেকটা, এবং পরিশেষে অবশিষ্টগুলো।অতঃপর আমার হাত ও পা’কে ভাঁজ করেছিলাম।আমার পা দুটোকে ঘুরিয়েছিলাম এবং হাঁটু ভাঁজ করেছিলাম।কোনকিছুই আর আগের মতো ছিল না, তবে তারা নড়ছিল।যখন আমি দেখতে পেয়েছিলাম যে, আমার শরীরের অঙ্গগুলো কাজ করছে, তখন আমি বিছানার উপরে বসেছিলাম।এবং স্ট্রীটল্যাম্পগুলো থেকে আসা অস্পষ্ট আলোতে আমি পুরো কক্ষ তন্ন তন্ন করে খোঁজ করে দেখেছিলাম।বৃদ্ধ লোকটি সেখানে ছিল না।আমার বালিশের উপরের দেয়াল ঘড়িতে তখন বাজছিল ১২টা বেজে ৩০ মিনিট।শুধুমাত্র দেড় ঘণ্টা সময়ের জন্যে ছিল আমার এই ঘুম।
চলবে…