কথাসাহিত্যিক মিলান কুন্ডেরা প্রয়াত হয়েছেন।তার বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর।
গত বুধবার (১২ জুলাই ২০২৩) মিনাল কুন্ডেরা গ্রন্থাগারের মুখপাত্র আন্না রাজোভার বরাত দিয়ে এ খবর প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান ও বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
তিনি জানান, দীর্ঘদিন রোগে ভোগার পর মিলান কুন্ডেরা মৃত্যুবরণ করেছেন।
কুন্ডেরার স্যাটায়ার ও কবিতার মতো গদ্য লেখনী জীবনের বিভিন্ন চিত্তাকর্ষক দিককে পাঠকের সামনে উন্মোচন করেছে।ভিন্নমত প্রকাশের জন্য চেক নাগরিকত্ব হারিয়েছিলেন তিনি।এই অভিজ্ঞতার বিষয়টি তার লেখনীকে প্রভাবিত করেছে।
তার সমালোচনামূলক গ্রন্থ ‘আর্ট অব নোভেল’ (১৯৮৬) এ তিনি জীবন সম্পর্কে বলেন, ‘(এটি) একটি ফাঁদ, যা আমরা সব সময়ই জেনে এসেছি: আমাদের সম্মতি না নিয়েই আমাদের জন্ম দেওয়া হয়, আমরা এমন এক দেহে আটকা পড়ি যা আমরা নিজেরা পছন্দ করে বাছাই করিনি এবং আমাদের একমাত্র নিয়তি হচ্ছে অবধারিত মৃত্যু।’
১৯২৯ সালে তৎকালীন চেকোস্লোভাকিয়ার বেরনো শহরে জন্ম নেন কুন্ডেরা। তার বাবা ছিলেন একজন প্রখ্যাত পিয়ানোবাদক। প্রাগে অধ্যয়ন করেন তিনি।সে সময় তিনি সমাজতান্ত্রিক দলে যোগ দেন এবং ফরাসি কবি অ্যাপোলিনেয়ারের কবিতা অনুবাদের পাশাপাশি নিজেও কিছু কবিতা লেখেন।
এছাড়া, একটি স্কুলে শিক্ষার্থীদের চলচ্চিত্র নির্মাণ বিষয়ে পাঠদান করেন তিনি।তার ছাত্রদের মধ্যে ছিলেন পরবর্তীতে অস্কার বিজেতা পরিচালক মিলোস ফোরম্যান।কুন্ডেরার প্রথম উপন্যাস ছিল ‘দ্য জোক’।এই ডার্ক হিউমারভিত্তিক উপন্যাস ১৯৬৭ সালে প্রকাশিত হয়।একদলীয় শাসন ব্যবস্থা নিয়ে লেখা এই উপন্যাস চেকোস্লোভাকিয়ায় নিষিদ্ধ করা হলেও তিনি এ লেখার জন্য খ্যাতি অর্জন করেন।১৯৭৫ সালে তিনি ও তার স্ত্রী ভেরা ফ্রান্সে স্বেচ্ছা নির্বাসনে যান।সেখানে তারা রেনেঁ বিশ্ববিদ্যালয়ে চার বছর সহ-অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেন।
১৯৭৯ সালে তাদের চেক নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়।তার সবচেয়ে বিখ্যাত লেখা ‘দ্য আনবিয়ারেবল লাইটনেস অফ বিয়িং’ ১৯৮৪ সালে প্রকাশিত হয়।১৯৮৭ সালে এ লেখার ভিত্তিতে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ হয়।এতে অভিনয় করেন জুলিয়েট বিনোশ ও ড্যানিয়েল ডে-লুইস।এই উপন্যাসটি নৈতিকতা বিষয়ের ওপর লেখা।এতে ব্যক্তিগত ও সামগ্রিক পর্যায়ে স্বাধীনতা ও আবেগ নিয়ে বলেছেন লেখক।২০১৩ সালে ১৩ বছর বিরতির পর আবারো নতুন এক উপন্যাস প্রকাশ করেন কুন্ডেরা।দ্য ফেস্টিভাল অব ইনসিগনিফিকেন্স বইটি মিশ্র প্রতিক্রিয়া অর্জন করে।
২০১৯ সালে চেক প্রজাতন্ত্র কুন্ডেরার নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেয় এবং ২০২৩ সালে তার আদি নিবাস বিরনোতে মিলান কুন্ডেরা পাঠাগার স্থাপিত হয়।