‘উড ইউ লাইক টু বি মাই উইডো?’ এই বাক্যেই পঞ্চান্ন’তে পা দেয়া তিনি প্রপোজ করেছিলেন। কারণটা হয়তো পঁচিশের জয়া ও তাঁর বয়সের ব্যবধান।
সে রাতে তখন প্যারিস কনফারেন্স শেষ। ক্যাটাকম্ব ডিস্কো’র ডায়মন্ড দ্যুতির নিচে নাচ থামিয়ে হাঁটু ভেঙে নিজের সল্ট-এ্যান্ড-পেপার কালার কেশগুচ্ছ কপাল থেকে সরিয়ে, সরাসরি তাকিয়েই বলেছিলেন। সেদিন যদি সে বলতো, ‘ইয়েস আই উড’, আজ তাহলে সে তাঁর আইনসিদ্ধ বিধবা স্ত্রী হতো এবং বিনা দ্বিধায় তাঁর অন্তিম ইচ্ছেটি সবার সামনে বলে দিতে পারতো। তা’হলে প্রয়াত অধ্যাপকের মরদেহের ক্রেমেশন হতো, তাঁর আত্মা শান্তি পেতো। কথাটা মনে হতেই ফুঁপিয়ে জেগে ওঠে জয়া। এখনো এ ফ্ল্যাটে তাঁর গন্ধ, টেবিলে পুরু কাচের চশমা!
কাল তাঁর জানাজা শেষে যে কজন প্রবীণ জয়ার উপস্থিতিতে বিরক্ত ছিলেন তারা ভাবছিলেন তার বয়স কম। কিন্তু এখন তারই বয়স পঞ্চান্ন। জয়া তাদের অবজ্ঞা উপেক্ষা করে মসজিদের বারান্দা থেকে তাকিয়ে ছিলো শববাহী চলিষ্ণু কালো গাড়িটির দিকে। গাড়িটি লাল-সবুজ পতাকা ঢাকা কফিনে করে নিয়ে যাচ্ছে তার প্রাণ। গাড়িটি ধিরে ধিরে গেট থেকে বেরিয়ে গেল লন্ডনের মুসলিম গ্রেভ-ইয়ার্ড, গার্ডেন অব পীস এর উদ্দেশ্যে।
মনেপড়ে মাত্র তিনদিন আগের কথা।তাদের মার্বেল আর্চের ফ্ল্যাটে বিকেলে। অধ্যাপকের হুইলচেয়ারে পিচরঙা আলো এসে পড়েছে। জয়া চামুচে করে চা খাওয়াচ্ছে। প্রতিবার তাঁর মুখ থেকে চা ছলকে পড়ছে আর প্রতিবারই সে তাঁর থুতনির নিচে হাত পেতে দিচ্ছে। তিনি হো হো করে হেসে উঠে বলেছিলেন, ‘মাটির উপরেই এই মুসলিম, খৃষ্টান, ইহুদীদের মধ্যে দেয়াল। তারচেয়ে বরং ক্রেমেশনের পর তুমি আমার ছাই টেমসের জলে ভাসিয়ে দিও। একদিন তা ঢেউয়ে ঢেউয়ে আমার দেশের বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পৌঁছলেও পৌঁছতে পারে।’
পরিস্থিতি হাল্কা করার জন্য জয়া বলেছিলো হেসে, ‘আর যদি সী-গ্যালরা খেয়ে ফেলে?’ তিনি হাসেননি, একটু গম্ভীর হয়েই বলেছিলেন,’ তা’লে তুমি আমার ভষ্ম পাত্রের মধ্যেই জলে গুলে তারপর ঢেলে দিও।’
কিন্তু তাকে সে সুযোগ কেউ দিলো না। সে পারলো না জলের উপর বিছিয়ে দিতে মহামহোপাধ্যায়ের বিদায়-বিছানা।