গত ৫ জুলাই ২০২৪ ঐতিহ্যবাহী বাংলাদেশ লেখিকা সংঘের ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনব্যাপীসুবর্ণজয়ন্তী উৎযাপন, সাহিত্যপদক ও স্বর্ণপদক প্রদান এবং গুণীজন সংবর্ধনার আয়োজনটি অত্যন্ত বর্ণাঢ্য ছিলো।এই মহতী ও মোহনীয় পর্বে লেখিকা সংঘের সাহিত্যপদক গ্রহণের জন্যে প্রথমেই আমার নামটি ঘোষণা করা হয়।
বিশ্বাস করুন, মঞ্চে ওঠার সেই অভূতপূর্ব মুহূর্তে সবাইকে প্রণতি জানানো ছাড়া মুখে আমার অন্য কোনো ভাষা সরছিলো না। মনে হলো কোনো কোনো আনন্দ মুহূর্ত হয়তো এমনি নির্বাক করে দেয় যে, অলৌকিক সে আনন্দভার থেকে সহসাই ভাষাময় কোনো শব্দ ফুটে বেরুতে পারে না।
তবে এরকম মায়াময় সময় কবি সাহিত্যিকের জীবনে খুব কমই আসে।কেননা, কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক জেনে শুনেই-ভাষাশিল্পীর গহণ এই নির্জন পথটি তিনি বেছে নেন।
দূর থেকে দূরে-বহু দূরে-সচল সমুদ্র বটে, অচল পাহাড় ঘুরে তাকে যেতে হয় অরণ্যের গভীর থেকে আরো গভীরে!
-সে পথে এত উজ্জ্বল আলো সব সময়ে পৌঁছুতে পারে না।তবু হঠাৎ আলোয় এসে সে খুলে দেয় শিল্প ও শিল্পীর মুখ ও মুখোশ।
গতকাল আমার জন্যে এমনি এক বিমূর্ত সময় ছিলো প্রাণময়, পরম প্রতীক্ষিত।এজন্য আমি এবং আমার পরিবারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ লেখিকা সংঘের কর্মকর্তাদেরকে সাদর সম্ভাষণ, ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
মঞ্চ এবং মঞ্চের সমুখভাগে যারা উপস্থিত ছিলেন এবং যারা ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও আসতে পারেননি-তাদের সবার প্রতি ভালোবাসা ও শুভকামনা আমার নিরন্তর রইবে জেগে।
-যেকোনো পুরস্কার গ্রহণ করা মানেই এক ধরনের অলিখিত অঙ্গীকারে শপথ নেওয়া। আর এ কথা তো বলাই বাহুল্য যে, এ জাতীয় পুরস্কার একজন কবি বা সাহিত্যিককের জন্যে এক ধরনের স্বীকৃতি-অনুপ্রাণিত এবং উৎসাহিত করতে যার কোনোই বিকল্প নেই।
অর্ধ শতাব্দী বয়সী এই লেখিকা সংঘের স্বপ্নদ্রষ্টা প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ইডেন কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ খোদেজা খাতুন, সাধারণ সম্পাদক শামস রশীদ-এই দুই মহতীজন শুধু নন, এই কর্মযজ্ঞ এগিয়ে নিয়েছেন যথাক্রমে কবি সুফিয়া কামাল, ড. নীলিমা ইব্রাহিম, অধ্যাপক আখতার ইমাম, জোবেদা খানম, সৈয়দা লুৎফুন নেসা, নুরজাহান বেগম, কথাসাহিত্যিক মুকবলা মঞ্জুর, ড. খালেদা সালাহ উদ্দিন, নয়ন রহমান ছাড়া আরও যারা আছেন-এই স্বপ্ন জাগানিয়া নারী ব্যক্তিত্বের প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
মঞ্চে উপস্থিত প্রধান অতিথি, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এমপি, সম্মানিত বিশেষ অতিথি দেশের বরেণ্য নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ, দৈনিক ইত্তেফাক ও পাক্ষিক অনন্যার সাহিত্যপ্রেমী সম্পাদক তাসমীমা হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক প্রিয়জনেষু ড. ভীষ্মদেব চৌধুরী।
অনুষ্ঠানের সভাপ্রধান বাংলাদেশ লেখিকা সংঘের সভাপতি অধ্যাপক অনামিকা হক লিলি।যার সঙ্গে দীর্ঘকালের সম্পর্ক।বিশেষভাবে দুজনেই আমরা পেশাগত কারণেই ইডেন কলেজের স্বর্গোদ্যানে পাশাপাশি থেকে জাতির মেরুদণ্ড প্রযত্নের যে কাজ-সেই অধ্যাপনায় ব্রতী ছিলাম।
সাধারণ সম্পাদক ও নাট্যব্যক্তিত্ব লিপি মনোয়ার , সাবেক সভাপতি বেগম রিজিয়া হোসাইন-এই গুণীজনদের প্রতি প্রাণময় ভালোবাসা, কৃতজ্ঞতা ও শুভ কামনা নিরন্তর।
আমার সন্তানেরা প্রবাসে কিন্তু আমার ও কবি রফিক আজাদের ভালোবাসার ভাতিজি-ভাই-বোন-ভাগনে-ভাগনী-তাদের সন্তানেরা এবং আমার ভক্ত প্রিয় পাঠকেরা, কবিবৃন্দ, হৃদয়ের মানুষেরা আমার চারপাশ ঘিরে ভালোবাসার যে সিম্ফনি তুলেছিলো—আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ ও চিরঋণী হয়ে রইলেম।
কেবল শূন্য ছিলো হৃদয়মন্দির!
তুমি নেই,তবু বিশ্বাস করতে চাই—সবই দেখছো তুমি,
দূরগামী নক্ষত্র যেভাবে দেখে!