স্মরণসভায় বক্তারা ॥ ‍‍‍‌‌বিন্দুতে সিন্ধু ধারণে সিদ্ধহস্ত ছিলেন হাসান আজিজুল হক


বাংলা সাহিত্যের নন্দিত লেখক হাসান আজিজুল হক তাঁর অনন্য সৃষ্টিশীলতায় সাহিত্য জগতে অগণিত পাঠক তৈরি করেছেন। তিনি কোনো পৃষ্ঠপোষকতার তোয়াক্কা করেননি। লেখার গুরুত্বের কারণেই খ্যাতিমান লেখক হিসেবে পরিগণিত হয়েছেন।সারাজীবন প্রান্তে বসবাস করে সাহিত্যের নতুন কেন্দ্র তৈরি করেছেন।সামান্য দৃশ্যকে বৃহৎ ক্যানভাসে তুলে ধরার কৃতিত্বে তিনি অসাধারণ; বিন্দুতে সিন্ধু ধারণে ছিলেন সিদ্ধহস্ত।

সোমবার (১৮ নভেম্বর ২০২৪) বাংলা একাডেমিতে আয়োজিত সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। গত ১৫ নভেম্বর ছিল হাসান আজিজুল হকের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। এ উপলক্ষ্যে সেমিনারের আয়োজন করা হয়।

এতে আলোচনায় অংশ নেন কথাসাহিত্যিক মশিউল আলম ও কথাসাহিত্যিক ওয়াসি আহমেদ।সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম। ‘হাসান আজিজুল হক: দেশভাগের অন্ধ সুরকার’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন সাহিত্যিক-সাংবাদিক এহ্সান মাহমুদ।

বক্তারা বলেন, হাসান আজিজুল হককে বৃত্তবন্দিভাবে বিচার করা যাবে না। তিনি বারবার বৃত্ত ভেঙেছেন। শৈশব-কৈশোরের রাঢ়বঙ্গের স্মৃতির রঙে যেমন তাঁর গল্প রাঙা হয়েছে, তেমনি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বাংলাদেশের খেটে খাওয়া মানুষের মরণপণ জীবনসংগ্রাম তাঁর মতো সার্থকভাবে খুব কম কথাশিল্পীই সাহিত্যে ধারণ করতে পেরেছেন।সংকটের ছবি এঁকেছেন বারবার, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি অনিঃশেষ আশাবাদেরই মানুষ।

অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেন, হাসান আজিজুল হকের সাহিত্যে সমাজতান্ত্রিক বাস্তবতাবাদ যেমন আছে, তেমনি তার আড়ালও আছে। কোনো সরল তত্ত্বরেখায় তাঁকে ব্যাখ্যা করে চটজলদি সিদ্ধান্তে আসা যায় না। তিনি আশির দশক পর্যন্ত তাঁর শিল্পচর্চাকে যেভাবে পাঠকের সামনে হাজির করেছেন, পরবর্তী রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক অবস্থানের কারণে হয়তো সে মাত্রায় থাকেননি। কিন্তু অবশ্যই তিনি আমাদের গুরুত্বপূর্ণ গল্পকার।

মূল প্রবন্ধে বলা হয়, হাসান আজিজুল হক দেশভাগের অন্ধ সুরকার। তিনি ১৯৪৭ সালে ভারত উপমহাদেশের দেশভাগের ফলে মানবিক ও সামাজিক যে বিপর্যয় তৈরি হয়েছে, প্রায় গোটা জীবন ধরে তাঁর শিল্পিত বিবরণ লিখে গেছেন।তাঁর লেখায় দেশভাগের আগেকার যে রাঢ়বঙ্গের দেখা পাওয়া যায়, তারপরের বাংলাদেশের ঠিক ততখানি দেখা মেলে না। হাসান আজিজুল হক তাঁর গোটা লেখকজীবনে দেশভাগকে করুণ সুরে লিখে গেছেন।