রবীন্দ্রনাথ ও চাঁদপুরের মানুষেরা ॥ মুহাম্মদ ফরিদ হাসান


রবীন্দ্রনাথ হাজার বছরের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাঙালি। তাঁর হাত ধরে বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতি সমৃদ্ধ ও প্রসারিত হয়েছে। বৈশ্বিকভাবে তিনি আমাদের জন্যে বয়ে এনেছেন গৌরব ও সম্মান। তাঁর জীবন ও কর্মের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছেন চাঁদপুরের মানুষেরা। তিনি মাত্র একবার চাঁদপুরে এলেও তাঁর স্নেহে-সান্নিধ্যে-কর্মে এ ভূমির মানুষ ওতপ্রোতভাবে দীর্ঘসময় যুক্ত ছিলেন।

বিশেষত শ্রীনিকেতনের রূপকার কালীমোহন ঘোষ, রবীন্দ্রসংগীত বিশেষজ্ঞ শান্তিদেব ঘোষ, শান্তিনিকেতনের শিল্পবিভাগের প্রথম নারী অধ্যাপক চিত্রনিভা চৌধুরী, দেশ সম্পাদক সাগরময় ঘোষ, আল্পনাশিল্পী সুকুমারী দেবী, সওগাত সম্পাদক মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন—এঁরা প্রত্যেকেই চাঁদপুরের সন্তান। তাঁদের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের ঘনিষ্ঠতা উল্লেখ করার মতো। এঁদের কেউ রবীন্দ্রনাথের একনিষ্ঠ সহকর্মী, কেউ তাঁর সরাসরি ছাত্র, কেউ নিখাদ অনুরাগী। কবি চাঁদপুরে আয়োজিত তাঁর ৭৩তম জন্মোৎসবে আশীর্বাদবাণী হিসেবে একটি কবিতাও পাঠিয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথ ও পূর্ববঙ্গ বিষয়ে উল্লেখযোগ্য গবেষণা হলেও অজ্ঞাত কারণে চাঁদপুরের মানুষের সঙ্গে কবির সম্পর্ক-সংযোগের বিষয়টি দীর্ঘকাল অনালোকিত রয়ে গেছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোকপাত করার উদ্দেশ্য নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ও চাঁদপুরের মানুষেরা গ্রন্থ প্রকাশের প্রয়াস।

এ গ্রন্থে রবীন্দ্রনাথের সরাসরি সান্নিধ্যপ্রাপ্ত চাঁদপুরের মানুষদের কথা, স্মৃতিভাষ্য ও পত্রালাপ তুলে ধরা হয়েছে। একই সাথে কবির চাঁদপুরে আগমন, চাঁদপুরে আসার পথে কবির লেখা গান, ৭৩তম জন্মোৎসবে চাঁদপুরে প্রেরিত কবিতা, বিবৃতি ও উল্লেখযোগ্য ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। যুক্ত করা হয়েছে চাঁদপুর-সংশ্লিষ্ট দুর্লভ কয়েকটি ছবি।

এ বইটির ভূমিকা লিখবেন বলে কথা দিয়েছিলেন কবি শঙ্খ ঘোষ। ১০ এপ্রিল ২০২১ তারিখে তিনি পাণ্ডুলিপি দেখেন। কিন্তু করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২১ এপ্রিল তিনি অমৃতলোকে পাড়ি জমান। তাঁর মতো বিনয়ী মানুষ আমরা খুব কমই পেয়েছি। তাঁর স্মৃতি ও কর্মের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই।

বইটি প্রকাশনার দায়িত্ব নিয়েছে চাঁদপুর পৌরসভা। এজন্য পৌরসভার মেয়র মো. জিল্লুর রহমান জুয়েলকে অশেষ ধন্যবাদ জানাই। বইটির কাজে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন রবীন্দ্র-গবেষক ভূঁইয়া ইকবাল, ড. সমীর কুমার সাহা, চাঁদপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অসিত বরণ দাশ, সাবেক অধ্যক্ষ ড. এ এস এম দেলওয়ার হোসেন, সমাজকর্মী আঁখি সীমা কায়সার, লেখক তৃপ্তি সাহা, জমির হোসেন জনি ও সংগীতশিল্পী স্বর্ণালী দাশ। তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা।

রবীন্দ্রনাথ চাঁদপুর এসেছেন ১৯২৬ সালে। আর ‘রবীন্দ্রনাথ ও চাঁদপুরের মানুষেরা’ গ্রন্থটি প্রকাশ হচ্ছে প্রায় একশ বছর পর ২০২১ সালে। দীর্ঘসময় পরে হলেও আশা করি, আগ্রহী পাঠক গ্রন্থপাঠে রবীন্দ্রনাথ ও চাঁদপুর প্রসঙ্গে একটি পরিচ্ছন্ন ধারণা পাবেন। আর এমনটি হলেই আমার পরিশ্রম সার্থক বলে মনে করবো।

বইটির প্রচ্ছদ করেছেন আইয়ুব আল আমিন। ৯৬ পৃষ্ঠা গ্রন্থটির মূল্য রাখা হয়েছে ২৫০ টাকা।