আজ জাপানে সরকারি ছুটি। কারণ আজ থেকে শুরু হল হেমন্ত ঋতু।
সেপ্টেম্বর মাসের ২৩ তারিখকে বলা হয় ‘শুনবুন নো হি’ অর্থাৎ আনুষ্ঠানিকভাবে বা জাতীয় বর্ষপঞ্জিমতে ‘হেমন্ত ঋতুর জন্মদিন’ যা প্রাচীনকালের রীতি অনুসারে ১৯৪৮ সালে আইন দ্বারা স্বীকৃত হয়। এই সময় থেকে দিন-রাত্রির স্থায়িত্ব সমান হতে থাকে। সকালবেলা একটু হিম হিম, দুপুরে গরম, সন্ধেবেলা ও রাতে শীতের আমেজ। ঝড় ও বৃষ্টি থাকে প্রায়শ। আকাশের রং বোঝা মুশকিল তাই প্রবচন আছে: ‘ওননা গোকোরো তো আকি নো সোরা’ অর্থাৎ ‘নারীর মন আর হেমন্তের আকাশ’ ঘন ঘন বদলায়। তাছাড়া হেমন্তকে নিয়ে আরও প্রবচন রয়েছে যেমন ‘আকি কাজে গা ফুকু’ অর্থাৎ ‘নারীপুরুষের সম্পর্ক যখন শীতল’ হয়ে যায়, ‘ইচিজিৎসু ছেন শুউ’ অর্থাৎ ‘একদিন দেখা না হাওয়া যেন বহুদিন দেখা না হওয়া!’ ইত্যাদি।
অক্টোবর মাসের ৮ তারিখ থেকে শুরু ‘কানরো’ অর্থাৎ ‘হিমকুয়াশা’র আগমন। হেমন্তর রূপ একটু একটু করে উদ্ভাসিত হতে থাকে। পাহাড়ে পাহাড়ে দেখা যায় বেশ হিমশীতল কুয়াশার বিস্তার। এখানে সেখানে কায়েদে বা মোমিজি (মেপল বৃক্ষ), সাকুরা, ইচোও প্রভৃতি বৃক্ষের পাতাগুলো লালচে-হলদে রঙে রূপান্তরিত শুরু করে, সাদা কুয়াশার আড়ালে-আড়ালে অস্পষ্ট রঙের ছোপ জানান দেয় জাপানি ঋতুর সুসজ্জিতা রাজকন্যা হেমন্তিকা সমাগত। তাই গাছগুলো প্রকৃতির সবুজাবরণকে খসিয়ে ফেলার উৎসবে মেতে উঠতে থাকে লালরঙা পোশাকে সেজে হেমন্তের পায়ে লুটিয়ে পড়ার জন্য। এ রং আসলে লজ্জার নয়–এ রং যেন পাতাঝরা রক্তিম মৃত্যুর চরণে শেষ নৈবেদ্য। কারণ ডিসেম্বরেই তো প্রচণ্ড শৈত্যপ্রবাহের নির্মম স্পর্শে নিষ্পত্র বৈরাগী হবে সব বৃক্ষ দীর্ঘ সময়ের জন্য। তথাপি অক্টোবরে হেমন্ত ঋতুর অন্যতম প্রতীক ‘নানাকুসা’ বা ‘সপ্ত কুসুম’ ফোটা শুরু করে। বনে বনে, উদ্যানে, নদীতীরে, জলাশয়ের ধারে ধারে শুভ্র সাদা ‘সুসুকি’ বা ‘কাশফুলে’ ছেয়ে যায়। দোল খায় মৃদুমন্দ বাতাসে। রোদালো দুপুরে ফুলে ফুলে ‘আকা তোনবো’ বা ‘লাল ফড়িং’ আর বিচিত্র রঙের প্রজাপতির ওড়াওড়ি এবং সন্ধেবেলা ঝাঁকে ঝাঁকে জোনাকির সবুজাভ ঝিলিমিলি দেখার মতো অপরূপ!
নোট: অসমাপ্ত। “জাপানের হেমন্ত” নাম মূল প্রবন্ধটি প্রকাশিতব্য “জানা অজানা জাপান” গ্রন্থের ৪র্থ খণ্ডে অন্তর্ভুক্ত থাকবে।