শরৎ অপরাহ্ল ॥ মনিকা আহমেদ


আগামীকাল খুব ভোরে ঘর ছেড়ে বেরুব। দূরে। অনেক দূরে যেতে হবে। আজ হাতের সব কাজ শেষ করবো। আর অপেক্ষা করবো।

অপেক্ষা আমাকে যত্ন করে টেনে রাখে। আমি অপেক্ষার গায়ে হেলান দিয়ে অপেক্ষা করি। ব্যালকনি বা ছাদে বসে, চায়ের মগে চুমুক দিতে দিতে, গালিব-মির্জা গালিবের লেখা গজল- শ্রীজাতের অনুবাদে শুভমিতার গালিবনামা শুনতে শুনতে অপেক্ষা করি।

আকাশে মেঘের সাথে মেঘের লুটোপুটি দেখতে দেখতে অপেক্ষা করি। জারবার নতুন চারাগুলো রমনীয় হয়ে একদিন ফুলে ভরে উঠবে, আমি ফুল ফোটার জন্য অপেক্ষা করি।করোনাকালীন অপেক্ষাতে অপেক্ষাতে সময়ের সাথে হাঁটি।সময়কে তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করি।সময় ছুটছে।

আমি ছুটছি।জীবন ছুটছে।আমাদের নিয়তি ছুটছে। কোথাও কারো সম্পর্ক ভাঙছে।কারো সাথে বন্ধুত্ব দূরবর্তী হচ্ছে।কেউ কেউ কতটা নিকটে তবু.. একদিন সব অপেক্ষা শেষ হবে।

অপেক্ষা আমার হাত ধরে রাখে।অপেক্ষা আমায় ছেড়ে যায় না কখনো। অপেক্ষার সাথে জড়াজড়ি প্রেম আমার দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়..

২.
শরত এসেছে । বাতাসের সাথে কাশবনের শুভ্রশাদা ফুলের জড়াজড়ি প্রেম। আহা এ প্রেম কী সুন্দর।ল্যাবণ্যময়।কাশফুল সাদা পালকের পোশাক পড়ে আছে, বাতাস ইচ্ছে মতো হেলেদুলে পড়ছে গায়ে যখন তখন,ওরা হাসছে নীল আকাশের দিকে মুখ উজিয়ে।বাতাসে কাশফুলের তীব্র গন্ধ।আমাকে তুমুল ডাকছে। সেই টানে উড়ে যেতে ইচ্ছে হয় নদীর কাছে।আমার নদী আমায় প্রাণ ছুঁয়ে ডাকে।ইচ্ছে করে, নৌকো ছুটিয়ে অনেক দূরে চলে যাই..

এই মেঘ ।এই রোদ্দুরের ছায়াপটে আমারও ইচ্ছে হয় কারো প্রিয় ছবি হয়ে রয়ে যাই মননের একান্ত কোণে।তবুও জটিলতা।তবুও দূরে কোথাও গান বেজে ওঠে। কবিতার পঙতি ওড়ে বাতাসের গায়ে। সূর্যও প্রতিদিন ওঠে। চোখ রাঙায়, আমি বিছানা ছাড়ি।দরজায় কেউ কড়া নাড়ে। কেউ এলো।কে এলো! কে–

অপেক্ষাও আমার সাথে হাঁটে।আমরা হেঁটে যাই। দৌঁড়াই।দীর্ঘ অভ্যেসে..

২৬, সেপ্টেম্বর ২০২১