গত ৭,৮ জানুয়ারি ২০২২ যশোরের আর.আর.এফ টার্কয়ে অনুষ্ঠিত হলো দুদিন ব্যাপী পূর্বপশ্চিম সাহিত্য উৎসব। বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের একটি যৌথ সাহিত্যমঞ্চ পূর্বপশ্চিমের যাত্রা শুরু হয়েছিলো ২০১৪ সনের ২৩ সেপ্টেম্বর। কবি আশরাফ জুয়েল, কবি ইকবাল রাশেদীন, চঞ্চল কবীর, উজ্জ্বল চৌধুরী, পশ্চিম বঙ্গের কবি অমিত গোস্বামীসহ আরও কয়েকজন উদ্যমী মেধাবী কবি সাহিত্যিকের নেতৃত্বে পূর্বপশ্চিম মুক্তচিন্তার সাহিত্যচর্চার একটা সংগঠন হিসেবে তার পরিধি ব্যাপ্ত করে চলেছে। প্রকাশিত হয়ে চলেছে পূর্বপশ্চিম নামে একটি সমৃদ্ধ ছোটকাগজ। ২০১৭ সনে পূর্বপশ্চিম সাহিত্য পুরস্কারের প্রচলন হয়। সেবার কলকাতায় একটি চমৎকার সাহিত্য উৎসবে এ পুরস্কার প্রদান করা হয়।
আমার সৌভাগ্য সেবার প্রতিচিত্রী কাব্য চন্দ্রদহনের জন্য এ পুরস্কার পেয়েছিলাম আমি। এবারও অত্যন্ত জমজমাট পরিবেশে সম্পন্ন হলো পূর্ব-পশ্চিম সাহিত্য উৎসব। যদিও করোনা পরিস্থিতির কারণে ভারতে ভিসা বন্ধ থাকায় পশ্চিম বঙ্গের কোনো কবি-সাহিত্যিকের পক্ষে যোগ দেওয়া সম্ভব হয়নি তার পরেও আমাদের সাহিত্যাঙ্গনের স্বনামখ্যাত এবং মেধাবী কবি সাহিত্যিকের একটি মিলনমেলায় পরিণত হয়েছিলো যশোরের আরআরএফ টার্ক প্রাঙ্গণ।
দুদিনের এই উৎসবে বিষয়ভিত্তিক আলোচনা, স্বরচিত কবিতা পাঠ, গল্প পাঠ, পুরস্কার প্রদান ( এ বছর সাহিত্যের নানা শাখায় কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, সেলিনা হোসেন, আনোয়ারা সৈয়দ হক, হোসেন উদ্দীন হোসেন, আহমাদ মোস্তাফা কামাল, তপন বাগচী, আমিনুল ইসলাম, সেজুতি বড়ুয়া, আবদুল্লাহ আল ইমরান, মাহবুব ময়ূখ রিশাদ, মোট ১০ জন কবিসাহিত্যিক পূর্বপশ্চিম সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন), পুরস্কৃত ব্যক্তিত্বের অনুভূতি প্রকাশ ইত্যাদি মিলিয়ে মোট সতেরেটি সেশনের সব কটিই সুচারুরূপে সম্পন্ন হয়েছে।
আলোচনার বিষয়বস্তুও ছিলো গুরুত্বপূর্ণ এবং সময়োপযোগী।প্রতিটি সেশনই ছিলো প্রাণবন্ত। ভালো লেগেছে কবিদের পড়া কবিতা, বিশেষ করে কয়েকজন তরুণ কবির কবিতা খুব ভালো লেগেছে। অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেছেন কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক। তবে তিনি ছাড়া কবি মুহম্মদ নূরুল হুদাসহ আরও অনেক আমন্ত্রিত কবি সাহিত্যিকই ৭ তারিখেই যশোরে যান, ফলে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হতে স্বাভাবিকভাবেই খানিকটা দেরি হয়। তাই আমি প্রায় নিশ্চিত ছিলাম, এতগুলো সেশন যথাসময়ে সম্পন্ন করা অসম্ভব হবে। কিন্তু তা সম্ভব হয়েছে এবং সুচারুভাবেই! দুদিনের তিনটি সেশনে আমাকে অংশগ্রহণ করার সুযোগ দেওয়ার জন্য আয়োজককে জানাই অন্তর্ময় ধন্যবাদ। এই সেশনগুলো হলো কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হকের সভাপতিত্বে লেখকের স্বাধীনতা প্রসঙ্গ নারী, কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের সভাপতিত্বে বঙ্গবন্ধুর সাহিত্য ভাবনা এবং কবি আসাদ মান্নানের সভাপতিত্বে কবিতা পাঠ।
পূর্ব পশ্চিম সাহিত্য উৎসবে যোগদান না করলে সত্যিই আমি দুটো চমৎকার দিনের অভিজ্ঞতা থেকে বঞ্চিত হতাম! এই দুদিনে প্রতিটি সেশনে কত বিদ্বজনের কথা ও কবিতা উপভোগ করলাম, কত নতুন লেখক কবির সাথে আলাপ হলো, কতজনের সাথে সরাসরি দেখা হলো, দুদিনের এই সম্মিলন ছিলো প্রাণের উত্তাপে উষ্ণ! অন্যদেকে আরআরএফ এর চমৎকার নিসর্গশোভা মণ্ডিত প্রাঙ্গণ ছিল অতিরিক্ত পাওনা। থাকা খাওয়ার ব্যবস্থার কোথাও কোনো ত্রুটি ছিলো না।সবার সাহচর্য ছিলে আন্তরিকতায় ভরা।মনে হচ্ছিল আরও দুটো দিন কাটাতে পারলে ভালো হতো।টানা সেশনের কারণে শুধু দল বেঁধে বসে মুক্ত আড্ডাটা মিস করেছি। এমন চমৎকার একটি সাহিত্য উৎসবের আয়োজন করার জন্য এবং সেখানে আমাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য পূর্বপশ্চিমকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
[লেখাটি লেখকের ফেসবুক থেকে নেওয়া। বানান রীতি লেখকের]