পর্ব-৭
বাড়িতে একজন বড়লোক মেয়ে এসেছিলো তন্ময়ের খোঁজে, এই খবরে তন্ময়ের বড় দুই ভাই শাওন ও সৌরভ উৎকর্ণ হলো। মেয়ে দেখতে কেমন। কয় ভাইবোন। বাবার কি কি আছে! ভাইদের সব প্রশ্নের উত্তরই দুই বউ ঠিকঠাক না বললেও কাছাকাছি বলতে পারছে।যা তখন বুবলিকে তারা জানতে চেয়ে যে উত্তর পেয়েছিলো, তাই যার যার স্বামীর কাছে কাঁচামাটির মতো লাগিয়ে দিচ্ছে।আর প্রতিধ্বনি হয়ে পাশের ঘরে এসে সেসব কথা কানে পশে যাচ্ছে আকলিমা খানম ও তন্ময়ের।
ফোন নেই বলে নাম্বারও নেই।তাই তন্ময়ের কারো সাথে যোগাযোগও হচ্ছে না।এর ভেতর তার মনে হলো, ভালোই হয়েছে এ সময় ওর ফোন না থেকে।ফোন থাকলে বুবলি ওদের বাড়িতে আসার আতিশয্যে অনেক বেশি কথা বলা হয়ে যেতো।তার ওপর মাকে যদি সোনার চুড়ি দুটো না নিয়ে যেতো।
তন্ময় ভেবে দেখেছে, এখন ওর আনন্দিত হওয়ার চেয়ে কষ্টের বোধটাই ভালো লাগে। সেই অর্থে ফোনটা হারিয়েও ভালোই লাগছে!ফোনের কোনো অভাবই সে বোধ করছে না। এর ভেতর ক’দিন বাড়ি থেকে না বেরোতে দেখে আকলিমা খানম বললেন, তুই যে একেবারে ঘরোয়া হয়ে গেলি, কারণ কি?
মায়ের কথায় তন্ময় কৌতুক করে বললো, বেশি আনন্দ আমাকে ভারাক্রান্ত করে ফেলেছে মা!
: কী সে আনন্দ?
:ওই যে বুবলি তোমাকে চুড়ি দিয়ে গেলো।এত বছর পরে মেয়েটা বসন্তের বাতাসের মতো এসে তোমার প্রাণটা জুড়িয়ে দিয়ে গেলো, যা আমরা বাড়ির এতোগুলো প্রাণির কেউ পারিনি!
:সেই জন্য ঘরে আটতে থাকতে হবে?
:ভাবছি, এখন যদি বের হই, আর বুবলির সাথে দেখা হয় তাকে আমার ধন্যবাদ দিতে হবে।চকচকে চোখে তাকাতে হবে। নাহলে ভাববে ফিলিংলেস। তার থেকে বাপু আমি বাড়ি থেকে বেরই হবো না আপাতত!
তন্ময়কে বাড়ি থেকে ক’দিন না বেরোতে দেখে বড় বউ বললো, মানুষ প্রেমে পড়লে অস্থির হয়। কিন্তু তুমি দেখি একেবারে স্থিতধী হয়ে গেলে!
মেজো বড় বললো, বড় প্রেম যে!
তন্ময় দুই ভাবীর উত্তর একসাথে দিলো, আমি আসলে কম্পিউটারে কাজ শিখছি।অন্যের কাছ থেকে কিছু বই-পত্রিকা চেয়ে এনেছি, সেগুলোও পড়ে শেষ করতে হবে।’ তারপর মনে মনে বললো, সবই করছি ঠিকই।কিন্তু নিজেকে ঘরে আটকাতেই করছি।
মনটা উতলা হলেও তাকে শাসন করার শক্তি তন্ময়ের আছে।তবে বাড়ির অন্য কেউ তখনো আবিষ্কার করতে পারেনি যে তার বাবার হাতের মোবাইলটা তন্ময় হারিয়ে ফেলেছে, বাড়ির সাথে বাড়ির ছোট ছেলের এমনি তার সম্পর্ক।
শাওন ও সৌরভের বাড়ি ছাড়ার দির ঘনিয়ে আসছে।বাড়ি থেকে তাদের নেওয়ার তেমন কিছু নেই।ফেলে যাবে কি কি সারাক্ষণ দুই বউয়ের মুখে ফেনা উঠছে সেসব নিয়ে।তবে দুজনই একবাড়িতে যাচ্ছে না।কাছাকাছিও না।যার যার শ্বশুরের বাসার কাছাকাছি সেই সেই বাসা ভাড়া করেছে। যেন বিপদে শ্বশুরবাড়ির হেল্প পায়।এতোদিন মার থেকে যা পেয়ে এসেছে, তা যেন সেবা নয়, সহযোগিতা, অনুদান কিচ্ছুটি নয়।দুই বউ বাড়ি থেকে কী নেবে আর ফেলে যাবে, ফেলে যাবে মানে, সেসব পুরনো ফার্নিচার কেনা লোকেএনে বার দুযেক করে দেখানোও হয়ে গেছে, কত হলে তারা খাট ড্রেসিং টেবিল খুচরো খাচরা জিনিস কিনে নেবে।
তন্ময়ের রোজগারের কোনো অবলম্বন নেই জেনেও ছেলে দুটির একটিও মাকে আশ্বাস দেয়নি, কে কত মাসোহারা দেবে। বরং কটকট করে একটি কথাই বাজিয়েছে, আমরা দুভাই যে দুই রুমে থাকতাম সে দুটো রুম ভাড়া দিয়ে তুমি চলবে। আর তন্ময়কে বলো ভালো করে রোজগারের চেষ্টা করতে!
আকলিমা খানমের বলা উচিৎ আমার কথা বাদ দাও, তন্ময়কে ঠিকমতো টিউশন ফি দিতে পারিনি বলে ও লেখাপড়ায় নিরুৎসাহিত হয়ে গেলো। তোমার বাবার রেখে যাওয়া নগদ টাকায় তোমরা পড়েছো, ওর একটা কিছু উপায় হওয়া পর্যন্ত তোমরা ওকে হাত খরচ দিতে বাধ্য। কিন্তু বলেন না। বরং ভাবেন, গাদাগাদি করে হলে এই যে ছেলে দুটি একবাড়িতে ছিলো, দুজনে হিসেব করে প্রতিদিন বাজারের টাকা দিতো তিনি নিজে বুঝে বাজার করে সংসারটা টেনে নিয়েছেন।এখন আলাদা বাসায় গিয়ে বেতনের বড় একটা অংশ দুজনেরই বেরিয়ে যাবে।তা দিয়ে কী করে চলবে, তিনি নিজের কথা ভুলে তাদের কথা ভাবেন। ভাবেন, কি করে বড় বৌমা দুটো বাচ্চাকে একসাথে সামলাবেন।সৌরভের ছেলেটা বড় বেশি চঞ্চল।দিনের ভেতর কতবার যে তিনি তাকে পড়ে যাওয়া থেকে ঠেকান।ছোট বৌমার দুপুরে ঘুমানো অভ্যাস।বাচ্চাটা তার সাথে ঘুমিয়ে না পড়লে ভীষণ মারে। আর তখন তিনি তাকে এনে নিজের কাছে রক্ষা করেন।
ছুটির দিন। সবাই আজ বাসায়। দুপুরের পর শাওন কিছু জিনিসপত্র রেখে আসতে যাবে।তারপর ফিরে এসে সন্ধ্যার দিকে বউ বাচ্চা নিয়ে যাবে। আকলিমা খানম চোখের জল ফেলতে ফেলতে রান্না শুরু করে দিয়েছেন। এর ভেতর গেটে শব্দ।তন্ময় গেছে গেট খুলতে।আকলিমা খানম রান্নাঘর থেকে মুখ বাড়িয়ে আছেন কে এসেছে দেখতে। বুবলিকে দেখে তিনি তাড়াতাড়ি বেরিয়ে এলেন তন্ময়কে লজ্জা পাওয়া থেকে রেহাই দিতে।কারণ তার খালি গা। বুবলির সাথে আরেকটা লোক ঢুকলো। তার হাতে অনেকগুলো প্যাকেট। প্যাকেটগুলো রুমে ঢুকিয়ে বুবলি লোকটিকে বললো, তাড়াতাড়ি গাড়ির কাছে যাও।তারপর তন্ময়ের দিকে চেয়ে বললো, আজ গাড়িতে করে এসেছি। রাস্তার পুলিশকে দুইশো টাকা দিয়ে বলে এসেছি পনের মিনিটের জন্য গাড়িটা দেখে রাখতে।
তন্ময় বুবলির দিকে রাগী দৃষ্টিতে চেয়ে বললো, তুমি রোজ রোজ কী শুরু করেছো বলো তো!
: রোজ রোজ মানে? দশদিন আগে এসেছিলাম।এর ভেতর তুমিও তো আমার খোঁজ নাওনি। জ্বর ছিলো খুব। ভাবছিলাম ডেঙ্গু হলো কি না। আজ একটু ভালো লাগছে। তারপর হঠাৎ লিমা আন্টির চায়ের কথা মনে পড়ে গেল।বুবলির আওয়াজ পেয়ে বড় বউ মেজো বউও ছুটে এলো।আকলিমা খানম রান্না থামিয়ে আগেই চলে এসেছিলেন।তন্ময়ের সাথে বুবলির কথা শেষ হলে তিনি বুবলিকে বললেন, এতো কি নিয়ে এসেছো মা? আমি কিন্তু খুবই বিব্রত বোধ করছি।
বুবলি বললো, আপনার চায়ের পিপাসা আমাকে ছুটিয়ে এনেছে লিমা আন্টি। তারপর তালতলা মার্কেট দেখে মনে হলো কখনো তো এই মার্কেটে ঢুকিনি। আর কারো জন্য কিছু কিনে দেয়ার মতো আমার কেউ নেই।কিন্তু আমার কাছে প্রতি মাসে আমাদের ফার্ম থেকে কিছু টাকা আমার অ্যাকাউন্টে জমা হয়। তা খরচের কোনো খাত নেই।আগে যখন নিজের টাকা ছিলো না, তখন মার থেকে টাকা নিয়ে মার জন্য এটাওটা কিনতাম।তাই ভাবলাম আজ আপনার কাছে যখন আসছি,আপনার জন্য কয়েকটা শাড়ি কিনি! তমালের কাছে শুনেছি, তন্ময়ের মোবাইলটা নাকি হারিয়ে গেছে।কিন্তু তা জানা সত্বেও আমি ওর জন্য মোবাইল কিনিনি!কারণ কে যে কিসে অহংকার বোধ করে, সেই সব বিষয়ে টোকা না দেয়াই ভালো।
বুবলি মিষ্টির ডাউস প্যাকেটটি বড় বউয়ের হাতে তুলে দিয়ে বললো, এসব আপনাদের জন্য।তারপর শাড়িগুলো ভাঁজ খুলে সোফার ওপর মেলে মেলে রাখলো।বললো, সব টাঙ্গাইলের সুতির শাড়ি। আমার মা এরকম শাড়ি পরতেন। আমি জীবনে এই প্রথম শাড়ি কিনলাম, পছন্দ হয়েছে, লিমা আন্টি?
আকলিমা খানম বললেন, তন্ময়ের বাবা বেশি বড় চাকরি করতেন না। তাই বলে না খেয়ে থাকিনি কোনোদিন।কিন্তু একসাথে পাঁচখানা শাড়ি, তাও আবার এত দামি শাড়ি আমি কিছু বলতে কথা খুঁজে পাচ্ছি না।শেষে তুমি না মনে করো, আমি তোমার থেকে তোমার শাড়ি-চুড়িকে বেশি ভালবাসি!
: লিমা আন্টি, মানুষকে প্রতিদিন চিনতে হয় না।যা চেনার তা একদিনেই চেনা হয়ে যায়।বাকি জীবন তাকে প্রতিবার নতুন বইয়ের মতো পড়তে হয়।এটা আমার মায়ের কথা। আমার মা খুব বিদুষী একজন নারী ছিলেন। যতই আমি বখে যাই, আমি তো সেই মায়েরই মেয়ে।
আকলিমা খানম বুবলিকে বললেন,একটা কথা বলি মা?
: বলেন!
: শাড়িগুলো তুমি আমার জন্যে এনেছো, আমি আমার দুই বউমাকে এখান থেকে দু’খানা শাড়ি দিই?
: অবশ্যই। আপনার জিনিস আপনি যাকে খুশি দেয়ার অধিকার রাখেন।
বুবলির অনুমতি পেয়ে আকলিমা খানম বউদের ইশারা দিলেন, তোমার দুজন দু’খানা তুলে নাও।’
দুই বউ একত্রে শাড়ির ওপর ঝুঁকতেই বুবলি তাদের থামিয়ে দিয়ে বললেন, আমি দিচ্ছি’ বলে সে নিজে দুজনের হাতে দুখানা শাড়ি তুলে দিলো। তারপর দুই বউ একত্রে বললো, ‘আমি এইখানাই নিতাম!’
দুই বউয়ের এককথার উত্তরে বুবলি বললো, জানি তো!
বউয়েরা সরে গেলে তন্ময় বললো, আজ তুমি এসে ভালো করেছো। আমি তো আর তোমাকে বলতে পারি না। আশা করারও সাহস নেই…!
এসে কেন ভালো করেছি বলো তো?
: আজ বড় ভাই চলে যাচ্ছে বিকেল নাগাদ। ক’দিন ধরেই মার কান্না আমার পাঁজরে এসে লাগছে। মা মনে করেন তিনি গোপনে কাঁদছেন। কিন্তু পাশের ঘরে থেকে যদি আমি শুনতে পারি, আর দুখানা ঘরও তো তার ঘরের থেকে দূরে নয়! আমার দুঃখ কোথায় জানো?
আমি তো ছোট মানুষ নই। আমি একাই থাকতে পারি। মা’র দুটো ছেলের একটি ছেলেও তাকে একটিবারের জন্যও বলছে না, আমাদের সাথে চলো, তুমি ক’দিন অন্তত থেকে আসো। ছেলেমেয়ে নিয়ে ওরা বেরিয়ে গেলে এ বাড়ি তো তার জন্য খোঁয়াড় হয়ে যাবে! শেষে না কাঁদতে কাঁদতে মরেই না যায়!
বুবলি বললো, অপেক্ষা করো, আমি একটা প্রতিশোধ নিই!
কি প্রতিশোধ?
তন্ময়ের কথার উত্তর দেয়ার আগে আকলিমা খানম দুজনের জন্য চা নিয়ে ড্রয়িংরুমে ঢুকলেন।বুবলি তাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, আমি একটা কথা বলবো, শুনতে হবে আপনাকে!
:কি কথা?
: আমার সাথে বেরোতে হবে!
: বড় ছেলেটা চলে যাবে আজ। রান্না বসিয়েছি।
: রান্না আপনার বউমারা করুক। আপনি যান সাবান দিয়ে হাতমুখ ধুয়ে আসেন!
: কতক্ষণ লাগবে ফিরে আসতে?
: বেশিক্ষণ না।
বুবলি বউদের ডেকে বলে এলো, এই যে ভাবিরা, এইবেলা রান্নাটা আপনারা চালিয়ে নেন। আমি লিমা আন্টিকে নিয়ে একটু বাইরে থেকে আসছি। বুবলিকে দেখতে শাওন, সৌরভ যার যার ঘর থেকে মোটাদাগের উঁকি দিলো।বুবলি টের পেয়েও তাদের দিকে ফিরে তাকায়নি।
আকলিমা খানম বাইরের কল থেকে হাতমুখ ধুয়ে এলে বুবলি তাকে বাকি তিনখানা শাড়ি থেকে বেছে একখানা শাড়ি হাতে তুলে দিলো। বললো, এটা পরলে আপনাকে একেবারে অপর্ণা সেনের মতো লাগবে!
আকলিমা বললেন, একেবারে নতুন শাড়ি পরে বেরোবো? সামাল দিতে পারবো তো কুচিটুচি?
: আপনি না পারলে কে পারবে? আপনাকে আরো অনেক কিছু পারতে হবে এবং সেটা আজকে থেকে শুরু হলো!’ কথাগুলো বুবলি বেশ গলা চড়িয়ে বললো, যে শাওন ও সৌরভের কান পর্যন্ত যায়।বউ দুটিকে বুবলি প্রথম দিন থেকেই কাউন্ট করছে না!কারণ মেয়েমানুষকে বুবলির একটু বেশিই মানুষ মনে হয়।কিন্তু এই বউ দুটিকে বুবলির মনে হয়েছে ফিলিংলেস! অর্ধেক মানুষ। অর্ধেক না মানুষ! না হলে তাদের স্বামীরা না বলুক, তারা দুজন তো শাশুড়িকে বুঝিয়ে বলবে, বেশি দূরে তো যাচ্ছি না। আপনিও বেড়াতে যাবেন আমরাও এসে এসে আপনার কাছে থাকবো।’ তাতেও তো শাশুড়ি-বউদের একটা নৈকট্য তৈরি হয়!
আকলিমা বেগম তৈরি হয়ে আসতে আসতে বুবলি তন্ময়কে বললো, একটা কলম আর কাগজ দিতে পারো? তন্ময় কাগজ-কলম এগিয়ে দিলে বুবলি এমন মগ্ন হয়ে লিখতে বসলো, যেন যাকে লিখছে সে বহুদূরে থাকে!
আকলিমা খানম রেডি হয়ে সামনে এলে বুবলি তন্ময়ের দিকে তাকিয়ে বললো, দেখেছো, বলেছিলাম না, লিমা আন্টিকে এই শাড়িতে অপর্ণা সেনের মতো লাগবে!
তন্ময় বললো, এক্ষেত্রে আমি সুচিত্রা সেনের সাথে যতো তুলনা করতে শুনেছি। অপর্ণা সেনের সাথে তুলনা এই প্রথম শুনলাম!
: আরে সবাই তো আন্দাজে বলে! আর বুবলি যাচাই করে বলে! আর আমার কাছে কিন্তু সুচিত্রা সেনের থেকে অপর্ণা সেনকে বেশি ভালোলাগে। অপর্ণা সেনের কত কাজ।কত মেধাবী তিনি! আর সুচিত্রা সেন ছিলেন একমাত্রিক। শুধু অভিনয়ই জানতেন এবং তিনি খুব অহংকারী এবং জেদী ছিলেন।’ বলতে বলতে বুবলি খাতাটা তন্ময়ের হাতে দিয়ে বললো, আমরা যখন তোমাদের এই কানাগলির মাঝামাঝি গেছি অনুমান করবে, তখন এই খাতার ভেতরের লেখাটুকু পড়বে।
তন্ময় বললো, কী লিখে যাচ্ছো, আল্লাহ্ জানেন!
আকলিমা খানমকে নিয়ে বেরিয়ে আসতে বুবলি টের পেলো সবাই তাদের গমন পথের দিকে তাকিয়ে আছে।
বুবলি যেমনটি বলেছিলো, তন্ময় আরো পরে খাতাটি খুললো।কারণ সে এখন নিজের ধৈর্যের চর্চা বাড়িয়ে নিচ্ছে।
বুবলি লিখেছে-তন্ময়,একসাথে চলাফেরা করা ক’জন মানুষের থেকে একজন হঠাৎ উধাও হয়ে গেলে তার খোঁজ নেয়াটা আমার পারিবারিক শিক্ষা।তাই সেদিন তোমার খোঁজে এসেছিলাম। কিন্তু আজ সত্যিই আমি লিমা আন্টিকে দেখতে এসেছিলাম। আমার মনে হচ্ছিলো উনি ভালো নেই। তুমি বা তোমার পরিবার কখনো যেন আবিষ্কার না করো, আমি তোমার প্রতি দুর্বল! বরং দুর্বল তোমার মায়ের প্রতি। তিনি সেদিন ভেজা চোখে বলেছিলেন, আমার একটি মেয়ে নেই, সে শূন্যতা আমার কোনোদিনই ছিলো না। কিন্তু তোমাকে দেখার পর মনে হচ্ছে, আমার যদি একটি মেয়ে থাকতো!’ কথাটি খুবই মূল্যবান।অন্তত আমার মতো একটি মাতৃহারা সন্তানের জন্য।
আর আমি তোমার জন্য একটি জিনিস এনেছি।বালিশের তলায় দেখো।ওটা নিজের করে ভাবতে না পারলেও ব্যবহার করতে থাকো।যখন তোমার সঙ্গতি হবে, দামটা শোধ দিয়ে দিও।বাবার কাছে বলেছি তোমার কথা। তাকে বলেছি, তুমি যা পারো তেমন একটি পোস্ট তোমার জন্য ক্রিয়েট করা হবে।’ চিঠিখানা পড়া শেষ হলে তন্ময় দ্রুত বালিশ উঁচু করে দেখলো একটি দামি মোবাইলের প্যাকেট। বুবলি চিঠিতে যা লিখেছে তা পড়ার পর শক্তহাতে প্যাকেট খুলে মোবাইলটি বের করতে তার আর খারাপ লাগলো না।