– তো এই ফাইনাল কথা হলো।
– কী?
– তুমি আসবে না এই মাসে?
– ওহ।
– এলেই কী? না এলেই কী?
-কেন?
– তুমি তো বিজি?
– কি নিয়ে?
– কত কিছু নিয়েই তো দেখছি।
– আজ গলদা চিংড়ি কিনেছিলাম।তোমাকে মিস করেছি।
– কেন মজা হয়নি?
– কী?
– রান্না!
– ওহ।হ্যাঁ, মাস্ট মজা হয়েছে।তিন তিন তিন তিন-তিরিক্কি নয়টি চিংড়ি রান্না করেছি।মাথার আঁশ ফেলে, বুকের লম্বা সাঁড়াশি লোম রেখে, পিঠের আঁশ খুলে, পায়ের নখ ঝুলিয়ে হাঁটুর উপরের শক্ত আবরণ ফেলে তিন তিরিক্কি নয়টা সুন্দর নধর উত্তম চিংড়িকে ভালো করে সাইজ করেছি।
-তাই বুঝি? চিংড়ির ময়লা কিন্ত থাকে মাথায়? ওর মগজে।
-মানুষের মতন কিছুটা।ঘাড় ত্যাড়া চিংড়িগুলো।জানো, ওদের সচ্ছ্ব গুটি-গুটি চোখ ফেলে কুটুস করে মাথা বরাবর কাঁচি চালিয়ে দিলাম, এক ক্যাচক্যাচিতে মাথা ফাঁক করে ঘ্যাচাং করে কেটে দিলাম মুহূর্তে, ওই ত্যাড়া ত্যাড়া ঘাড় থেকে রগ টেনে ছিড়ে বের করলাম, বেরিয়ে গেলো মাথা থেকে সোনালী প্রেম আর কমলা জেলি, দারুণ লাগছিলো এই কাজটুকু- এক পাকা কসাই যেন আমি।
– হুম।বাঙালি মাছ কাটতে পারে ভালো।
মনও কেটে ফেলে।প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে।
-তুমি এইসব ভাবো।আজ সারাদিন একবার ফোন দিলে না।আর ভুলে গ্যালে, দায় সব আমার, তাই তো!
-এই তো রুটিন।তোমার আমার।তুমি চিংড়ির কল্লা ফালা করবে। আমার হৃদয় ছিন্ন করবে। আর প্রচুর কমপ্লেইন সারাদিন, রাতভর ঘ্যান ঘ্যান।
-চিংড়িগুলো কিভাবে রাধলাম, শুনবে না?
– বলো।তেমন ইচ্ছে নেই শোনার।তবু তুমি তো বলবেই।
-থাক।
– নাহ বলো।আবার রাগ দেখানো হচ্ছে।
– আজ বাজার করেছিলাম।কিন্তু ভালো ধনেপাতা পাইনি।শেষে এক মাইল হেঁটে এক ভ্যানের উপর দারুণ কিছু দেশি পাতার সন্ধান মিলল। নিয়েই ভো-হন্টন। ঘরে ফিরে ধোয়া মাছ, সাথে দেশি পেঁয়াজ জুলিয়ান কাট আর লম্বা কাঁচা মরিচের পেট ফেড়ে দিয়ে, একটা প্যানে ঝাঁঝালো শর্ষে তেল ঢেলে দিলাম পুরো এক কাপ।
-এক কাপ! কি বলছো।নয়টি চিংড়িকে তেল সমুদ্রে ডুবিয়ে কবর দিতে। চিংড়িগুলোর শান্তি নেই, সমুদ্র থেকে তোমার উনুনে প্রবেশ করেও, ডুবেই মরতে হবে দ্বিতীয়বার, রক্ষা নেই আমার মতন।
-যেমন তুমি মরছ।আমার থেকে দূরে থেকে।
-তুমি দূরে রেখেছো কেনো আমাকে? আমার কি দোষ? তুমিই চাওনা আমি কাছে কাছে থাকি।কাছে এলে রাজ্যির ঝগড়া বাধাও সারাক্ষণ।
– আচ্ছা।ঝগড়া থাক।শোনো তো এইবার চিংড়িগুলো কিভাবে ভুনলাম। শোনোই না!
-শুনছিই তো।তোমার কথা কি তুমি না বলে ছাড়বে! বলতে থাকো।
-তেল ছ্যাত ছ্যাত করে ধোয়ায় কিচেন ভরে গেলো।
পেঁয়াজ, মরিচ আর চিংড়ি একসাথে ছেড়ে দিলাম।
এরপর সামান্য কালো গোল মরিচের গুড়া আর জিরা ভাঙ্গা।
-মসলা না কষা করে, আগেই চিংড়ি ছেড়ে দিলে?
মাছ তো শক্ত হয়ে গ্যাছে, এই মাছ বিস্বাদ হয়ে যাবে, রাবারের মতন। তোমার স্বভাবের,তোমার রান্নাও তেমন।বাজে।খুব বাজে।
– নাহ। নাহ।এই রেসিপিটা দারুণ।শোনোই না!
-রুচি নেই আমার।
-আরি শোনো তো টুইমুই পাখি, ওই বাচ্চাদের মা।
এরপর আধ-চামচ হলুদ গুড়ো, মরিচ আর ধনিয়া গুড়ো সাথে কুচি করে কেটে রাখা তাজা লাল রসালো টমেটো ছেড়ে দিলাম। ঠিক পাঁচ মিনিট পরে এত সুন্দর একটা সুবাস এলো, তুমি যখন প্রতিমাসে ঘরে ফেরো, যেই হাসিটা দাও দরজায় দাঁড়িয়ে, সেই রকমের একটা সুবাস আর সুন্দর চেহারা ফুটে উঠলো আমার প্যানের মধ্যে।ধনেপাতা ছড়িয়ে ঢাকনা দিয়ে ওখানেই আরো পাঁচ মিনিট দাঁড়িয়ে রইলাম।মন তোমার কাছে, শরীর এইখানে।এত অদ্ভুত এই জীবন। প্লিজ, ফিরে এসো এবার, দ্রুত।
-এই মাসে আসা হবে না আমার।
-কেন?
– উত্তর দিতে ইচ্ছে করছে না। রাখলাম এখন।
– তোমাকে ছাড়া খেতে ভালো লাগেনি।কিছুটা রান্না তুলে রেখেছি।আমি জানি তুমি আসবেই।