আসো প্লিজ ॥ নাসরিন জে রানি


চিত্রশিল্পী: কাজী জহিরুল ইসলাম

-ফোন দিলে না যে!
আজকাল লাভ য়্যু বলো না, একবারও।
– LOVE YOU.
– শেষ কবে চুমু খেয়েছো মনে আছে?
– চারদিন আগে। দুপুরে। লাঞ্চটাইমে।
-আমি তখন কি করছিলাম?
– ইন্টারকমে সিকিউরিটি-গার্ডের সাথে চেঁচাচ্ছিলে কিছু বলে বলে।
– সেই সময়ে তুমি চুমু খেয়েছো? বলছো!! কই আমি জানি না তো!
– তুমি তো কতকিছুই জানো না আমার।কোনো খোঁজ রাখো আজকাল? আগে অনেক কেয়ার নিতে, বিয়ের পরপরই অবশ্য।সব পুরুষরাই তাই থাকে; এরপর প্রেম মরে যায় শীতের সূর্যের মতন।

-প্রেম মরেনি আমার।
-তোমার প্রেম পচনশীল মাংসল কিছু, আজকাল।
-তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করে।
-দেখো।
-না এভাবে না।কবে ফিরবে?
– জানি না।এ মাসে আসা হবে না।
-কেন?
– খুব কাজের চাপ।ফিল্ড-ভিজিটে যেতে হবে।ছুটি ক্যানসেল।
-তোমার কলিগ কেউ সাথে যাবে?
-কোথায়?
-ভিজিটে।
-গেলে কী? আর না গেলে কী হবে?
-কিছু না।
-তাহলে জিজ্ঞেস করছো কেন?
-এমনি।

– আজ কখন ফিরেছো? রান্না করেছো? রাতে কী খাবে?
-আজ বিকেলেই চলে এসেছি।কাজ শেষ হয়ে গেলেএকটু বাজার করলাম। গরুর মাংস কিনলাম।মাংস খেতে হবে।প্রচুর শক্তি দরকার।পুষ্টি ছাড়া প্রেম আসে না।
-হুম।চুমু আসে না।ফোন আসে না।লাভ য়্যু আসে না রাতে।
-হা হা হা।তোমার ভুজুং-ভাজ ভালোবাসা পালায়।ভালো লাগাগুলো হারিয়ে যায়।ঘ্যান-ঘ্যান বাড়ে।আজেবাজে ঝগড়া হয়।অভিযোগের পাহাড় ওঠে।
– হুম।মনের ভেতরে অভিমানের বন্যা হয়।খরা হয় হৃদয়ে।পিপাসা লাগে খুব।পেতে ইচ্ছে করে সারাক্ষণ।নরম ঠোট।ছোট্ট থুতনি। গাল,নেলপলিশ মাখা আংগুল মুখে পুরে রাখতে ইচ্ছে করে। খেলতে ইচ্ছে করে মাথার খোলা চুল নিয়ে।তোমার প্রচুর চুল ছিলো আগে।সব ঝরছে এখন।
-উমম! পাগল করা চুমু খেতে ইচ্ছে করে।শুধু চুমু আর চুমু খেতে ইচ্ছে করে।দিনরাত চুমু খেতে ইচ্ছে করে।সন্ধ্যাগুলো তোমার গায়ে লেগে থেকে ঘুম ঘোরে থাকতে ভালো লাগে।

তোমার ভূড়ির উপর নেলপলিশ দেওয়া আংগুল ফেলে রাখতে ইচ্ছে করে।তুমি হাত নিয়ে খেলছো দেখতে খুব সুখ লাগে।

-সিগারেটের তৃষা বাড়ছে।প্যাকেট পোড়াই,পুড়ি।তোমাকে কাছে পাই না। আগুন, ছুঁতে পাই না, আংগুলে ছ্যাকা লাগে।কলিজা পুড়ছে আমার।
-তোমার মাথাটা গ্যাছে।যাই রান্না চড়াই।গরুর মাংসের জন্য মসলা করতে হবে।আমার বাটনার সরঞ্জাম নেই, নতুন ফ্ল্যাটে উঠেছি। আগের হোস্টেলটা ভালো ছিলো, বুয়া সব করে দিত। এখন নিজেরই সব করতে হয়।আজ প্রচণ্ড শীত লাগছে।কিছু করতে ভালো লাগে না আমার।ইস! যদি কেউ সব করে দিত, আর আমি এইসব বিকালগুলো ঘুমোতে পারতাম!

– আমার ইচ্ছে হচ্ছে তোমার বাড়ি এসে সবকিছু গুছিয়ে দিয়ে যাই। কেনাকাটা করে দিই।কেমন এক পুরুষ আমি, মন চাইলেও পা দুটো চলে না আমার।কেন যে আমাকে বিয়ে করলে তুমি! ঠকে গেলে, একেবারেই ধরা খেয়েছো।
-উফ! আবার ঘ্যান-ঘ্যান শুরু হলো।আমার কাজ আছে।ময়লা কাপড় ভিজিয়ে রেখে বেরিয়েছিলাম সক্কাল সক্কাল।এত শীত এখানে, কুয়াশায় আমার মাথা ভার ভার লাগে।সোয়েটার আর চাদর মুড়ি দিয়েও রক্ষা নেই।মেয়েদের অনেক জ্বালা।সবকাজ একা হাতে করতে হয়।আমার এত কাজ করতে ভালো লাগে না।ইচ্ছে হয় সকালটা ঘুমিয়ে কাটাই।এত ঘুম পায়।দাঁড়িয়ে ঘুমাই,বসেও।সুখ নেই।তাই বলে অতটা দুঃখও নেই।তবে প্রচুর কষ্ট আছে।কষ্টগুলো জমাট বাঁধছে।

-আমার শুধু প্রেম করতে ইচ্ছে করে।ভোরে এ পাশ ফিরি, আঁতিপাঁতি করে খুঁজি তোমাকে।হাতের মধ্যে পাইনা আজকাল।এত প্রেম নিয়ে মরছি প্রতিদিন।নেওয়ার ফুরসতই নেই তোমার।রাক্ষস হতে ইচ্ছে করে, তোমাকে হালুম করে গিলে ফেলবো এবার বাড়ি ফিরে এলে।
-ইস! শখ কত! আর ফাও আলাপের টাইম নাই আমার।এখন বাই।ফোন রাখছি।
-আরি! শালীর বেটি হেডফোন কানে রেখেও তো ফোনে কথা বলা যায়। ফোন কাটবি-না।খবরদার।
-কাটলে কি করবি তুই? শালার পুত।একশবার কাটবো।
-খুন করে ফেলবো।
-খুন হওয়ার টাইম নাই সোনা।বাই এখন।
-নাহ!
-উফ! কাজের সময় বিরক্ত করো কেন এতো!! যাও নিজের কাজ করো। আমি রান্না করবো।এরপর ফ্রেশ হয়ে, মজা করে খাবো।নতুন একটা মুভি নামিয়েছি।ওইটা দেখে ঘুমুতে যাবো।মাকে একটা ফোন করতে হবে।অনেকদিন কথা হয় না।
-নাহ! ফোন কাটবা-না।খবরদার।লাইভে আসো।একটু আদর করি।
– উফ! এখন সম্ভব না। যাও তো।বিরক্ত করো না।
-আসবা।নাইলে খবর আছে কিন্তু।
– থাক খবর।ফোন কাটছি।

-এই কাটলি কেন তুই? আমাকে ভালো লাগে না আর?
-এরপর?
-তোর প্রেম মরে গেছে।আজকাল ভালো করে কথাও বলিস না।
– হুম।
– হুমের গুষ্টি কিলাই।
– আচ্ছা, কিলাও।
– প্লিজ কাছে আসো।একটা চুমু খাবো।

-শোনো আমি মাংসটা রান্না করি।রান্না হতে সময় লাগবে।তোমার মিস্টি বউটা সকাল থেকে না খেয়ে আছে।এভাবে কী প্রেম করে মজা পাওয়া যাবে?
-দুপুরে খাও নাই আজ?
– নাহ।আজকে খাবার নষ্ট হয়ে গেছে।মিটিং ছিলো, তাই লাঞ্চ করতে দেরি হয়েছে।সকালবেলা তাড়াহুড়া করে বেরুনোর সময় ফ্রিজ থেকে খাবার বের করে ওভেনে গরম করে নিয়ে গিয়েছিলাম।এতবেলা পর্যন্ত খাবার ভালো থাকে নাকি!
-আচ্ছা যাও রান্না করো।ফোন কাটবা-না।লাউডস্পিকারে দাও।
-আরি! রান্নাঘরে অন্য মানুষ থাকবে।সেখানে এভাবে কথা বলা যাবে না।তোমার বউ তো একা থাকে না, অন্য মেয়েরাও তো আছে।এখন রাখি সোনা।
– নাহ!
-প্লিইইইজ!!

– তোমার গলা খুব মিস্টি জানো! খালি শুনতে ইচ্ছে করে।
– তাই? আচ্ছা।
– হুম।তুমি যখন কথা বলো, আমার কানের ভেতরে আরাম লাগে। তোমার ঠোঁট নরম, চুষতে মজা লাগে আমার।
– হইছে।এখন থাকো।আমার খিদা লাগছে তো।কিছু না খাইলে মইরা যাবো।
-আমারও ক্ষুধা পায় সারাক্ষণ।

-গরুর মাংস রান্নাটা ভালো হচ্ছে।যা সুন্দর ঘ্রাণ বেরুচ্ছে, আহ,দারুণ। এসো, চলে এসো তুমি।
মাত্র তো আট ঘণ্টা লাগে বাসে।আমি বসে থাকবো তোমার জন্য।তুমি এলে একসাথে ভাত খাবো।গরম ভাত।ধোঁয়া ওঠা নাজির চালের ভাত আর ঝাল ঝাল গরুর মাংস, মেখে তোমার মুখে তুলে খাইয়ে দেব। আসো।
-তুমি খাও।আমার খিদে নেই।
-আসো।একসাথে ভাত খাই, এক থালায়।আসো প্লিজ।মুখে তুলে খাইয়ে দেবো। আসো প্লিজ।

আরও পড়ুন: আমি জানি তুমি আসবেই