চারটি কবিতা ॥ নুসরাত সুলতানা


বেচা-কেনা
জোছনার এত শক্তি নেই যে-আমাকে বিবাগী করে।
এতটা জোর নেই প্রেমের যে আমার রাতকে জাগিয়ে রাখে।
আমি পাহাড়ের কাছে শিখেছি অবিচল হতে।
বৃক্ষ শিখিয়েছে পরার্থপরতা।
তাই তো আত্মায় বুনেছি মানবতা নামক ধানের বীজ।
মননে-মগজে বুনেছি মাতৃত্বের চারা গাছ।
আমাকে চটুল প্রেমের দামে কিনতে এসো না-
হে সংস্কৃতিহীন সভ্য প্রেমিক।

প্রলম্বিত বিচ্ছেদ
বিচ্ছেদকে অযথা প্রলম্বিত করো না প্রেমী,
প্রেমের অমর্যাদা হয় যে তাতে
মাধুর্য হারানো প্রেমকে বিদায় জানাতে হয়-
স্টেশনে দাঁড়িয়ে ছেড়ে দেওয়া ট্রেনের মতোই।
যখন দেখবে চোখ বন্ধ করলে-
তুমি আর প্রিয় মানুষটির বুকে নেই
যখন আর তার গায়ের গন্ধে তুমি
মাতাল হবে না।
মানুষটিকে মনে পড়লে আর
তেষ্টায় বুক ফেটে যাবে না,
বুঝে নেবে ক্লান্ত পাখির ডানা।
ওড়ার সাধ, সাধ্য কোনোটা আর নেই।
তখন কেবল শেষ চুম্বনে তাকে বলে দাও-
ভালো থেকো বোহেমিয়ান,
তুমি আমাকে নন্দনতত্ত্ব শিখিয়েছ।

পাবে না
আমাকে পাবে না তুমি
আমাকে পেয়েছে ভোরের আযান,
পেয়েছে টুপটাপ খসে যাওয়া তারা।
আমাকে পেয়েছে কৃষ্ণচুড়ার চিরল পাতা।
আমাকে পেয়েছে আমার পুত্র-কন্যা।
আমাকে পাবে না মাৎসর্য আর মদ,
পেয়েছে আমাকে মায়ের পোষা ধবলীর দুধ।
আমাকে পেয়েছে আমার প্রার্থনা,
আমাকে পাবে না লোভাতুর, ছদ্মবেশী প্রেমিক,
পেয়েছে মহাকাল।

স্তন
ঐ বুকে শুধু কামনা খুঁজো না প্রেমিক।
খুঁজো না মাংসের গন্ধ,
ঐ বুকে জলপাই ঘ্রাণ।
ঐ খয়েরী বোটায় তোমার অনাগত শিশুর
জীবন ধারণের অমিয় রসদ।
যা পান করে তুমি আজ শিশু থেকে পুরুষ!
স্তন কামনার নয়, ভালোবাসার
এ শুধু প্রেমিকার উন্মত্ত বুক নয়
মাতৃত্বের বিমূর্ত রূপ!
আত্মার অংশ খাইয়ে
মানব শিশুকে বড় করতে
অঙ্গীকারবদ্ধ এক জোড়া নারী অঙ্গ!
তাকে কেবলই ভেবো না কামনার
আর ভোগের প্রেক্ষিত!
এ যে তোমার মর্তে পাওয়া মাতৃস্বর্গ