‘লেখালেখি ছিল দায়িত্ব, ভাবিনি একজন লেখক হিসেবে আমার পরিচয় গড়ে ওঠবে’


আনি এরনো। ছবি: বিবিসি

চলতি বছর সাহিত্যে নোবেল ২০২২ পুরস্কার পেলেন ফরাসি নাগরিক আনি এরনো। স্টকহোমে সুইডিশ একাডেমি স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) ২০২২ সালে সাহিত্যে নোবেলজয়ী হিসেবে তার নাম ঘোষণা করে।

সাহিত্যে নোবেল পাওয়া প্রথম ফরাসি নারী আনি এরনো। সুইডিশ সম্প্রচারমাধ্যম এসভিটিকে তিনি বলেছেন, ‘লেখালেখি ছিল একটি দায়িত্ব। আমি খুবই বিস্মিত হয়েছিলাম। আমি কখনো ভাবিনি একজন লেখক হিসেবে আমার পরিচয় গড়ে উঠবে। এটা একটি গুরু দায়িত্ব, সবকিছু তুলে ধরা, তা শুধু আমার লেখার ক্ষেত্রেই নয়, বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্কের বিচারে ন্যায়পরায়ণতা ও যথার্থতার নিরিখে উপস্থাপন করাটা।’

৮২ বছর বয়সী আনি এরনোকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে তার ৪০ বছরের ‘আপসহীন’ লেখার জন্য। যেখানে লিঙ্গ, ভাষা ও শ্রেণিগত কারণে বিপুল বৈষম্যের শিকার হওয়া জীবনকে তিনি তুলে ধরেছেন অনমনীয় ঋজুতায় এবং দ্ব্যর্থহীনভাবে। আনি এরনো ব্যক্তিগত স্মৃতির গহনে পুঞ্জিভূত হয়ে থাকা অবদমন আর বিচ্ছিন্নতাবোধ উন্মোচনে সিদ্ধহস্ত, শেকড় খোঁড়ার সাহসিকতা তার শিখরতুল্য।আনি তার লেখায় ‘সাহস এবং তীব্র নির্লিপ্ততার’ সমাবেশ ঘটিয়েছেন এবং এর সাহায্যে ব্যক্তিগত স্মৃতির শিকড় থেকে জীবনবোধের বিচ্ছিন্নতা, সংযম এবং অন্যান্য বিষয় উন্মোচন করার জন্যই তাকে এই পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে নোবেল কমিটি।

নোবেল কমিটির চেয়ারপারসন অধ্যাপক কার্ল হেনরিক হেলডিন বলেছেন, তার কাজ সত্যিই প্রশংসনীয়, সেগুলো টিকে থাকবে।

আনি এরনোর জন্ম ১৯৪০ সালে ফ্রান্সের নর্মান্ডিতে এক শ্রমজীবী পরিবারে। রুয়েঁ এবং বোর্দো বিশ্ববিদ্যালয়ে সাহিত্য নিয়ে পাঠগ্রহণের পরে তিনি সাহিত্য জগতে প্রবেশ করেন। তার লেখা মূলত আত্মজৈবনিক বা স্মৃতিকথন। প্রথম জীবনে কিছু আখ্যানধর্মী লেখা লিখলেও পরে তিনি সরে আসেন স্মৃতিকথায়। এক নারীর বড় হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে বদলে যাওয়া পৃথিবী এবং পরিপার্শ্ব তার লেখায় বার বার ছায়া ফেলে। ব্যক্তিগত সময়ের সঙ্গে বাঁধা পড়ে নৈর্ব্যক্তিক সমাজ বা বৃহত্তর পরিসরের মানুষের কাহিনিও। কখনও তার লেখায় উঠে আসে তার নিজের গর্ভপাতের প্রসঙ্গ, আসে মাতৃবিয়োগ, অ্যালঝাইমার্স বা ক্যানসারের কথাও।

তার বই ‘আ উওম্যান’স স্টোরি, আ ম্যান’স প্লেস’, ‘সিম্পল প্লেস’ বা ‘আই রিমেন ইন ডার্কনেস’ ইতিমধ্যেই পাঠকের নজর কেড়েছে, আদায় করেছে আলোচকদের শ্রদ্ধা। ‘প্যাসন সিম্পল’ গ্রন্থে এক পূর্ব ইউরোপীয় পুরুষের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক বহুমাত্রিক বর্ণালির ভালোবাসাকে উপস্থাপন করে।

আনি এরনোর বেশ কয়েকটি বিখ্যাত উপন্যাস রয়েছে। ১৯৭৪ সালে তার লেখা প্রথম বই ‘লে আখঁমখে ভিদ’ প্রকাশিত হয়। ১৯৯০ সালে ‘ক্লিনড আউট’ নামে বইটির ইংরেজি সংস্করণ প্রকাশিত হয়। ১৯৮৩ সালে তার উপন্যাস ‘লা প্লাস’ প্রকাশিত হয়। ১৯৯২ সালে এর ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশিত হয় ‘আ ম্যানস প্যালেস’ শিরোনামে। এই উপন্যাস বিপুল পাঠকপ্রিয়তা পায়।

আনি এরনোর ‘দ্য ইয়ার্স’ ২০১৯ সালে ম্যান বুকার পুরস্কারের জন্য সংক্ষিপ্ত তালিকায় ছিল। এই গ্রন্থকে ফরাসি জীবনের স্মৃতিচারণার ‘মাস্টারপিস’ বলেন সাহিত্য সমালোচকেরা। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাময়িকী দ্য নিউইয়র্কার ২০২০ সালে লিখেছিল, আনি এরনো তার ২০টির বেশি বইয়ে শুধু একটি কাজ করেছেন: নিজের জীবনের খুঁটিনাটি তুলে আনা।

নোবেল পুরস্কারের আর্থিক সম্মাননা হিসেবে এরনক্স পাবেন এক কোটি সুইডিশ ক্রোনার

সূত্র: নোবেলপ্রাইজ ডটওআরজি, বিবিসি