বিনোদন মিডিয়া চরকিতে মুক্তি পাওয়া সাত পর্বের সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ দেখলাম।এই সিরিজের নামকরণের ব্যাপারটি হচ্ছে স্বপন নামের কেন্দ্রীয় চরিত্রটি শুধু নিজেকে নিয়েই ভাবে।সে একজন একক মানুষ এই পৃথিবীতে, নিজেকে ছাড়া আর কারো জন্য তার ভেতরে কোনো মমতা কাজ করে না।অশিক্ষিত স্বপন ইংরেজিতে কথা বলার চেষ্টা করে ডায়ালগ দেয়, মাইশেলফ এলোন, স্বপন। অর্থ্যাৎ, আমি একা একজন, স্বপন।
কিন্তু ভুল ইংলিশে সেটি শোনা যায়, মাইশেলফ অ্যালেন।ওয়েব সিরিজটি রচনা ও পরিচালনা করেছেন নির্মাতা শিহাব শাহীন, প্রযোজনা করেছেন রেদোয়ান রনি।
বাংলাদেশি সিরিজ।সিরিজের শুরুতে এবং পরেও অনেকবার চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে।চট্টগ্রামের ভাষা আমার পরিচিত নয়, তবু সংলাপ বুঝতে সমস্যা হয়নি কারণ সাথে চলিত বাংলার সাবটাইটেল দেওয়া আছে।
স্বপন চরিত্রে অভিনয় করেছেন নাসির উদ্দিন খান।অনবদ্য অভিনয়। টিভি পর্দায় একটা খারাপ মানুষকে দেখে দর্শকের মনে যেমন ঘৃণা তৈরি হওয়া দরকার, নাসির উদ্দিন খানের কুৎসিত হাসিটি দেখে সত্যি গা রি রি করে উঠেছে। ইয়াবার মাদক ব্যবসায়ীর চরিত্রের সঙ্গে দারুণ মানিয়েছেন নিজেকে অভিনেতা নাসির উদ্দিন খান।
দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছে মিথিলা।আমি সাধারণত মিথিলার নাটক এড়িয়ে চলি, কারণ বেশি নরম বেশি ন্যাকা লাগে আমার কাছে মিথিলার অভিনয়।এই সিরিজে মিথিলাকে বেশ দৃঢ় লেগেছে। সুন্দর অভিনয় করেছেন স্ত্রী আর মায়ের ভূমিকায়। তবে মিথিলার বদলে আরো স্ট্রং চরিত্রের কাউকে নির্বাচন করলে সিরিজের জন্য ভালো হতো।
অ্যালেন স্বপন এর ছেলে যাদুর চরিত্রে সেন্টুর অভিনয় আর মুখের অভিব্যক্তি অসাধারণ লেগেছে।
ঈদুল ফিতরে মুক্তি পাওয়া এই সিরিজটি জনপ্রিয়তায় চরকির সমস্ত রেকর্ড ভেঙেছে। কিছু নেতিবাচক আলোচনাও হয়েছে সিরিজটিকে নিয়ে।
প্রথমত মিথিলার মেয়ের চরিত্রে একটি নয় দশ বছরের শিশু ছিল, কেউ কেউ বলছেন এই সিরিজে শিশুদের উপস্থিতি খারাপভাবে দেখানো হয়েছে।আমার কাছে মনে হয়েছে, সিরিজের শেষ পর্বে মাদক চোরাচালানকারী দলের কয়েকটি মাস্তানের মধ্যে শিশু মেয়েটিকে উপস্থিত না করলেই ভালো হতো।কারণ অশ্রাব্য গালাগালি, শারীরিক আঘাত, হত্যা সমস্তটাই ঘটেছে শিশুটির সামনে।এবং মাকে ধরে দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া ওর আর কোনো ভূমিকাই ছিল না।
আরেকটি দুর্বল দিক হচ্ছে শেষ পর্বে চোরাচালানকারী স্বপনকে ধরে আনার পর থেকে সন্ত্রাসীদের ব্যবহার আর অভিনয়ের সময়কালটুকু পুরো সিরিজটাকে কিছুটা দুর্বল করে দিয়েছে। হয়তো সেই দৃশ্যের চিত্রায়ন কিংবা সংলাপের কারণে।এই দিকে আরেকটু মনোযোগী হওয়া দরকার ছিল।
সবচেয়ে বেশি আলোচিত কিংবা সমালোচিত হচ্ছে ‘তৈ তৈ তৈ আমার বৈয়ম ফাকি কই,’ স্বপনের মুখে উচ্চারিত এই সংলাপ এবং গানের কলিটি। নাসির উদ্দিন খান নিজেই গেয়েছেন গানটি। স্বপন তার স্ত্রীকে আদর করে ডাকে বৈয়ম পাখি।স্বপনের প্রাণ ভোমরা তার স্ত্রী, যেন একটি বৈয়ম অর্থ্যাৎ বোতলের মধ্যে রাখা আছে। আমাদের গ্রামাঞ্চলে তৈ তৈ তৈ করে হাঁস আর হাঁসের বাচ্চাদেরকে ডাকা হলেও এখানে অভিনবভাবে ব্যবহার করা হয়েছে শব্দটিকে।মানুষ ব্যতিক্রম ভালোবাসে।ব্যতিক্রম উপস্থাপনার এই গানটিকে অশালীন আর অসহ্য লাগলেও মানুষের মনের মধ্যে গেঁথে গেছে শব্দটি তৈ তৈ তৈ… ইউটিউবে কিংবা ফেসবুকে বৈয়াম পাখি গানের সঙ্গে যে ভিডিওটি সবাই দেখেন, সেটি কিন্তু মূল সিরিজে নেই।হয়তো শুধুমাত্র সিরিজের প্রচারের জন্যই বানানো হয়েছে সেই ভিডিওটি।
বাংলা চলচিত্রের নির্মাণে ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ একটি ব্যতিক্রমী নির্মাণ।গল্পের বাস্তবাদী প্লট মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত জগৎ সম্পর্কে একটি ধারণা দেয় দর্শকের মনে।বাংলাদেশ আর বার্মার বর্ডার এলাকার সত্যিকার মাদক চোরাচালান কারবারের ইমেজ পাওয়া যায় এই সিরিজে। ইউটিউবে দেখলাম বেশ কিছু ভিডিও চলে এসেছে পুরো ৭টি সিরিজের। কিন্তু সাউন্ড আর প্রিন্ট খুব খারাপ। তাই সম্ভব হলে অরিজিনাল চরকির ভিডিওটি দেখবেন। অবশ্যই ছোট দর্শকদের সামনে নয়। কারণ সিরিজটি ১৮+। সবগুলো পর্ব দেখতে সাড়ে তিন ঘণ্টার কম সময় লাগবে।
একনজরে
বিভাগ : অপরাধ
পরিচালক : শিহাব শাহীন
প্রযোজক : রেদওয়ান রনি
পরিবেশক : চরকি
প্রধান অভিনেতা-অভিনেত্রী
নাসির উদ্দিন খান : অ্যালেন স্বপন/সিদ্দিকুর রহমান স্বপন/শামসুর রহমান তপন
রাফিয়াথ রশিদ মিথিলা : শায়লা
সুমন আনোয়ার : তানজিল
রাফিউল কাদের রুবেল : বদু
আবদুল্লাহ আল সেন্টু : জাদু
মিশকাত মাহমুদ : রোজি
আইমন শিমলা : অ্যালেন স্বপনের স্ত্রী
কাজী আনিসুল হক বরুণ : মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা