ভোর কতদূর ॥ বিতস্তা ঘোষাল


ছবি ও অলঙ্করণ: লংরিড

বিছানায় শুয়ে তুমি
তোমার যন্ত্রণাবিদ্ধ মুখ
চোখে বিষণ্নতা–
অয়েল ক্লথে শুয়ে তুমি
ম্যাক্সির নিচে ডায়পার।

চরম শূচীবাই তুমি
সকালে উঠেই শাড়ি বদলানো
তোমার অভ্যাস
চুল অগোছালো!
রান্নায় না কি চুল পরে !
ছিঃ ছিঃ বড় ঘেন্নার।

তোমার শাড়ির ভাঁজে হলুদ মিশে
পাঁচফোড়ন কড়াইয়ে ছেড়েই তোমার চিৎকার-
“যহ্মিণী”তে “খ” নয় “হ্ম”
ব্যকরণ আর শ্লোক-
যেন বিষয়টা জল-ভাত।

তোমার চোখেতে প্রেম সৌধ
শাহাজাহান বানায় তাজমহল
মমতাজ বিরহ ! নাকি সূতিকাগারে
সন্তান প্রসবে মরেছিল অনাদরে
প্রশ্ন ঘোরে মাথায় অনর্গল।

ঠিক সাড়ে দশটায় স্কুলে তুমি
ইংরেজি দিদিমণি ,পড়া ভুল হলে
বাড়িতে ধমকানি।
ফেল করা যত মেয়েদের নিয়ে তোমার বিশেষ ক্লাস
যে করেই হোক পাওয়াতে হবেই
তাদের বি +।

তোমার গল্পে পরী নেমে আসে
আমাদের ঘরজোড়া খাটে-
নিঝুম রাত–জ্যোৎস্না মাখে
বেঁটে বামন তখন পাতাল বিছানো
চুলে রাজকন্যা বেঁধে রাখে।
কোন সে রাজা ! কোন সে রানী!
কোন সুদূরের যক্ষ্ম পুরী
প্রাণ ভ্রমরা লুকিয়ে কোথায় !
পাছে ঘুম ভেঙে যায় ,বুঝি তাই
তারারাও ফিসফিস কথা বলে …
শুধু চাঁদ বুড়ি চরকা বোনে…
বুনেই চলে…।

লহ্মীবারে লহ্মী পুজো তোমার হাত ধরে
সিঁদুর শাখা ত্রয়োস্ত্রীর ধর্ম মানি না
সপ্তডিঙা ভেসে যায়…
লহ্মী নামে না এ পোড়া শহরে
তবু পাঁচালি পড়ি নিয়ম করে…।

আলু পোস্ত বিউলির ডাল কিম্বা চচ্চড়ি
কোনো কিছুই হয়না তোমার মতো-
কবে যেন বড় হয়ে গেছি
বুকের মধ্যে বেড়ে উঠছে ক্ষত ।

চেলাকাঠ দিয়ে মারের পর
ছাল ওঠা পিঠে
তুমি দিতে উষ্ণতার লেপ
মন জুড়ে কেবল রক্ত ঝরে
চোখের তলায় কাজলের গাঢ় প্রলেপ।

কাকে বলব খিদে পেয়েছে !
কাকে বলব পারব না !
মন জুগিয়ে চলতে চলতে মাগো
বুকের মধ্যে জমিয়ে রাখি না বলা যন্ত্রণা ।

ধামসা মাদল ঘুঙুর নুপূ্র বাজে না
বিষণ্ন রাধা একাকী গায়-
চারপাশে তার সর্বনাশা ঢেউ
সহস্র নাগ জেগে উঠেছে –
মাগো ঘোর কলিযুগ।হা কৃষ্ণ!
কোথা কৃষ্ণ ! কৃষ্ণ আসে না আর।

গত জন্ম পর জন্ম–জানি না কিছুই
আছেন কী ঈশ্বর !
পিতা ধর্ম পিতা স্বর্গর পাশাপাশি
বুঝেছি তুমিই দুর্গা তুমিই চন্ডী
আত্মা অবিনশ্বর।

পরের শীত নামার আগে
ফিরে যেতে চাই তোমার গহন জঠরে
ঘন অরণ্যের গাঢ় অন্ধকার ; যেখানে
আজো বাতাস বয় নির্জনে ।
কথা দিচ্ছি ,মাগো–প্রজাপতি আলো মেখে
চুপটি করে শুয়ে থাকব সেইখানে।
দেখব মাগো বৃষ্টি এলো এলোচুলে ,
বাসনের টুংটাং ;তোমার চোখে ক্লান্তি নামে–
অতিথি তখন তোমার ঘরে পথ ভুলে।
মাগো তোমার পেটে আগুন জ্বলে।

আমার চোখের পাতায় দুঃখ নেই
নেই বিরহের সুর–
অজস্র ভালোবাসা হীন ভালোবাসায়
বাঁধা পরে আছি।না চাইতেই শ্রাবণ ধারা;
বড় পিছুটান –
মাগো ঘুম আসছে
রাত নামছে চোখের পাতায়…

ভোর কতদূর ? মাগো স্বর্গ কতদূর ?