একগুচ্ছ কবিতা ॥ নূরুদ্দিন জাহাঙ্গীর


ছবি: ফেসবুক

খুঁজে পাই না
আমি কোথায় আছি জানি না, খুঁজে বেড়াই কিন্তু পাই না কোথাও
কেউ কি আছেন যিনি আমার দেখা পান?
ইতিহাসের পাতায় থাকার কথা, দেখি সেখানে নাই-
সম্রাটের নামও যে ইতিহাসের পাতা থেকে মুছে যায়-আমি জানতাম না
ভাবলাম অতীত ইতিহাসে না পেলেও বর্তমান ভূগোলে তো অবশ্যই আছি
বেঁচে থাকলে কোথাও না কোথাও আমার থাকার কথা-সেটা ঘরে বাইরে হাসপাতালে এমন কি জেলখানায় হলেও।

ভূগোল তন্ন তন্ন করে খুঁজি-রাষ্ট্রে খুঁজি, সমাজে খুঁজি কিন্তু কোথাও আমি নাই!
আমি আরও ক্ষুদ্রতর পরিসরে আমাকে খুঁজতে থাকি-
নগরের অলিগলিতে ফুটপাতে যেখানে যেখানে অর্থহীন ঘুরে বেড়াই-
কোথাও না পেয়ে শৈশবের চেনা গ্রামে যাই
ঘুরি ফিরি মেঠোপথে ক্ষেতের আলে, বাঁশঝাড়ের তলে খালে আর বিলে-
যেখানে যেখানে আমার থাকার কথা, আমাকে ডাকলেই পাওয়া যায়, সেখানেও আমার কোনো অস্তিত্ব আজ নেই!
বস্তুত আমি নিজেকে কোথাও খুঁজে পাই না, কোথাও না।

পথচলা
রবীন্দ্রনাথও জানতে চেয়েছিলেন পথের শেষ কোথায়
আমি ভেবেছি কখনো, ওই তো পথের শেষ দেখা যায়!
তবুও পথের শেষ দেখা পাই নাই, আঁধারও কাটে নাই
আমি জেনেছি তিমির ভেদি মানবের চলার শেষ নাই
তবুও মানব পথ হারায়, তবু্ও আমি বারবার পথ হারাই
জীবন শেষে মনে হয় এক জীবন পথ চলেছি, অযথাই।
১১ জুন ২০২৩

মা মাটি এবং আমি
পাখির ছানারা উড়তে শিখে গেলে আর মায়ের কাছে থাকে না
দূরের বন ওদের ডাকে ওরা ডানা মেলে আকাশে ওড়ে;
এ দেশে ছেলেরা বড় হয়ে গেলে আর মায়ের কাছে থাকে না
ওদের আমেরিকা ইউরোপ হাতছানি দেয়
আমার মা নেই, মাটির বুকে ঘুমিয়ে আছে
তবুও আমি মায়ের কাছে আছি
এই মাটিতে ছড়িয়ে আছে আমার মায়ের দেহ-সুবাস
আমি মাটি ছেড়ে কোথাও যাই নি, যেতেও চাই না;
এই মাটিতে মিশে যাব একদিন-
ঘুমিয়ে প্রশান্ত হব মায়ের কাছে।
৮ জুন ২০২৩

মোহ কিংবা মোক্ষ
কখনো কখনো পথ না চিনেও ভুল মানুষ হাঁটে ভুল পথে
ভুল করেও কেউ পৌঁছে যায় সঠিক ঠিকানায়, ভুল রথে।
কখনো কখনো ভুল মানুষও ভুল করে তীর্থে পৌঁছে যায়
চেতনায় যদি থাকে গণ্ডগোল তবুও বুঝি সর্গ পাওয়া যায়?
যে মানুষ সর্গ মর্ত্য খোঁজে না, বোঝে না সে তবে কী পায়?

ফিরে যাওয়ার আগে কিছুই থাকে না
ধীরে ধীরে মুছে যায় সবকিছু তোমার কিছুই থাকে না সঞ্চয়
প্রেম আরও যা কিছু ছিল সবই মুছে যায়
তুমি যা ধরে রেখেছিলে অমূল্য ভেবে শৈশবের আধুলির মতো
সেই স্মৃতিও কখন হারিয়ে যায় তুমি জানতেও পার না।

যেভাবে বাঁচতে চেয়েছিলাম
আমার প্রিয় নদীর মতো তোমাকে চেয়েছিলাম
প্রিয় আকাশের মতো ভেবেছিলাম তোমাকে
তোমার প্রিয় মেঘ হয়ে কাছে যেতে চেয়েছিলাম
ভিজিয়ে দিতে চেয়েছিলাম অঝোর বৃষ্টি ধারায়
ভেবেছিলাম বাতাস হয়ে তোমার আঁচল উড়াব
প্রিয় ফুল হয়ে সুবাস ছড়াব তোমার খোঁপায় নেব ঠাঁই
প্রিয় পাখি হয়ে ভোরের গান গাইব জাগাব তোমায়।
তোমাকে পাব ভেবে নদীর কাছে গিয়েছিলাম
দেখেছি প্রিয় নদীর বুক শুকিয়ে ধূ-ধূ বালুচর
মেঘ হতে গিয়ে দাবদাহে নিঃশেষ হয়ে গেছি
তোমায় ভালোবাসার জন্য অক্সিজেন কোথায় পাই?
তোমার খোঁপায় গুঁজে দেবার জন্য কোথাও ফুল নাই
যে পাখির গান তোমার জন্য চাই সেও হারিয়ে গেছে হায়!
আমি আর কী করে বাঁচি বলো এমন ঊষর বৈরিতায়!