একদিন আমি বসে আছি গাছতলে
ছোটো এক পাখি পাখনা দুলিয়ে বলে,
খুব তো মানুষ নিজেকে শ্রেষ্ঠ বলো,
পথে ঘাটে দেখি বক্ষ ফুলিয়ে চলো
পারো যদি তুমি মেলো তো আকাশে ডানা
মেঘের ওপারে দেখো কার আস্তানা
কী সহজে দেখো আকাশে বেড়াই ভেসে
মাল্যবৃত্তে সভা করি হেসে হেসে
উড়তেই যদি না পারো মানুষ তুমি
শ্রেষ্ঠত্বের কেন এ-গোয়ার্তুমি?
মুখ ভার করে গাছতলা থেকে ফিরি
পুকুরের জলে নেমে গেছে এক সিঁড়ি
হেঁটে হেঁটে আমি ওইখানে গিয়ে বসি
সোনালী মৃগেল যেন এক উর্বশী
লাফ দিয়ে মাছ দেখায় সোনার দেহ
বলবে কিছু সে নেই কোনো সন্দেহ
আমিও তখন জলের নিকটে যাই
হেলে দুলে মাছ কাছে এলো সহসাই।
কী হে খোকাবাবু মুখ ভার কেন আজ?
আব্বু বকেছে, আম্মা দিয়েছে কাজ?
আমি বলি না-গো রূপসী মৃগেল, শোনো
বকেনি তো কেউ, বোঝাও দেয়নি কোনো।
ছোটো এক পাখি নাচিয়ে হলুদ পুচ্ছ
বলে সে মানুষ জগতে বড়ই তুচ্ছ।
ডানা নেই তার পারে না সে ছুঁতে নীল
দম্ভের দাঁতে হাসে শুধু খিলখিল।
এই কথা শুনে মাছ বলে হায় হায়
জলের অতলে সেরারাই সাঁতরায়?
পাখি ও মানুষ সাগরের তলদেশে
গিয়েছে কখনো নিজগুণে অক্লেশে?
তোমাদের বুঝি এখনো হলো না হুশ
শ্রেষ্ঠ তো মাছ, নয় পাখি, না মানুষ।
দ্বিগুণ দুঃখে বাড়ির পেছনে যাই
স্যাঁতস্যাঁতে মাটি, পড়ে আছে ভেজা ছাই
কেঁচো এক উঠে পদপাশে গড়াগড়ি
কাঁদে আর বলে হায় হায় কী-যে করি।
শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই হয়েছে শুরু
অথচ এখনও চিনলো না কে যে গুরু।
মাটি খুঁড়ে খুঁড়ে মাটির ভেতরে থাকি
জ্যান্ত থেকেও মাটি দিয়ে দেহ ঢাকি
কে আছে জগতে কেঁচোদের মত বড়ো
শ্রেষ্ঠত্বের পুঁজো কেঁচোকেই করো।
সন্ধ্যা নেমেছে বনভূমি কালো করে
ভাবতে ভাবতে ফিরে যাই আমি ঘরে
তখনই হঠাৎ হিজলের মগডালে
কুভিক জড়ালো আবেগের মায়াজালে
আঁধার ঘনালো নিভে গেছে সন্ধ্যাও
কণ্ঠ পাল্টে বলে, খোকা শুনে যাও,
মানুষই শ্রেষ্ঠ এই কথা মিছে নয়
মানুষ গড়েছে কত কত বিস্ময়।
বিমানের ডানা সুবিশাল এক পাখি
উড়ার স্বপ্ন কোথায় রইল বাকি?
ডুবো জাহাজ কি যায়নি সাগরতলে
খনি শ্রমিকেরা গভীরের অঞ্চলে
মাটি খুঁড়ে খুঁড়ে তুলে আনে হিরে-সোনা
মানুষ-কীর্তি কখনো কি যায় গোনা?
মনে মনে ভাবী আজ থেকে আমি জানি
এই পৃথিবীতে পেঁচারাই হলো জ্ঞানী।
ম্যানহাটন, নিউইয়র্ক। ১ আগস্ট ২০২৩