দেখে এলাম ১৯৭১ সেই সব দিন।ড. এনামুল হকের লেখা উপন্যাস অবলম্বনে সিনেমা।উপন্যাস নিয়ে মন্তব্য করাটা স্পর্ধা।তবে ছবি নিয়ে অনেক কিছু বলা যায়।
ছবিতে অনেক কাজ করা যেতো। শুরুটা বেশ ভালো লেগেছে।শেখ মুজিবের ভাষণ, টিক্কা খান আসলো, পঁচিশে মার্চ একটা আতঙ্ক গোলাগুলি, মানুষজন বাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছে গ্রামে গিয়ে আশ্রয় নিচ্ছে। চারিদিকে আগুন আর আগুন।এসব দুর্দান্ত ছিল।কিন্তু এপ্রিল-মে তে যখন মূল যুদ্ধ শুরু হলো, তখন কাহিনির ধারাবাহিকতায় পড়তির দিকে মনে হলো।
যে বাড়ির দুই ভাই রঞ্জু সঞ্জু মুক্তিযুদ্ধে গেছে সে বাড়ির অন্তঃসত্ত্বা পূত্রবধূ আর্মিদের সাথে পার্টিতে যাচ্ছে তথ্য সংগ্রহে! কেউ তাকে হ্যারাস করছে না, সন্দেহ করছে না। আবার সঞ্জু বউয়ের সাথে দেখা করতে এসে অনেকদিন থেকে গেলো, ধরা পড়লো না, যেখানে একাত্তরের চিঠি বইটি পড়ে জেনেছি কিভাবে রাজাকাররা নজরদারি করে।
মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং সেশনে দেখা গেলো ট্রেনিং দিচ্ছে ইউনিভার্সিটির শিক্ষক সঞ্জু। কিন্তু আমাদের বীরশ্রেষ্ঠ, বীর উত্তমরা বিভিন্ন বাহিনীর ডিফেন্স পিউপলদের কোনো ভূমিকা পেলাম না।যুদ্ধের ট্রেনিং দিয়েছিলেন তারা।এগারটি সেক্টরের সেক্টর কমান্ডাররা।শিক্ষক তো ট্রেনিং দিতে পারে না, ট্রেনিং দেবে সৈনিক!
প্রচুর গানে ভরা ছিলো। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের যে গান ঐগুলো ছিল না।বেতারের কোনো ভূমিকাই দেখানো হয়নি। রঞ্জুর প্রেমিকা এক সিনে দেখা গেলো বাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছেন, অন্য সিনে দেখা গেলো বাড়িতে! বিষয়টা বুঝিনি।
একটা মেয়েকে তুলে নিয়ে গেলো।নন্দিনী মেয়েটার ছদ্ম নাম ছিল। তারপর কি হল? টর্চার সেলের কোন বিষয় দেখানো হয়নি। তবে নায়কের কাছের বন্ধু রাজাকার রায়হান।তার বিশ্বাসঘাতকতা আর ভূমিকাটুকু ভালো লেগেছে।
মুভিটি নিয়ে খায়রুল বাসার নির্ঝর লিখেছেন, ‘‘১৯৭১ সেই সব দিন’ পিরিওডিক্যাল সিনেমা। এ সময়ে দাঁড়িয়ে ৫২ বছর আগেকার দৃশ্য ক্যামেরায় তুলে আনা সহজ কাজ নয়। এই দীর্ঘ সময়ে তো শুধু শহরের আদলই বদলায়নি, মানুষের নিত্য অনুষঙ্গ, ফ্যাশন—বদলেছে সবই। শুটিংয়ে খুটিনাটি কোনো কিছু একটু এদিক-সেদিক হলেই বিপত্তি। তবে হৃদি হক এই কঠিন চ্যালেঞ্জ ভালোভাবেই মোকাবিলা করতে পেরেছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময়কার চিত্র এত নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন যে মনেই হয় না এটা নির্মাতার প্রথম সিনেমা।জনপ্রিয় অনেক অভিনয়শিল্পীর সম্মিলন ঘটেছে সিনেমায়। তবে ফেরদৌসের কথা আলাদাভাবে বলতে হয়। সঞ্জু চরিত্রে সিনেমার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যে অনবদ্য অভিনয় করলেন তিনি, তা দর্শকের চোখে লেগে থাকবে বহু বছর। উল্লেখ করতে হয় সজল, প্রীতি ও লিটু আনামের কথাও। নির্মাতা হৃদি হক একই সঙ্গে পরিচালনা আর অভিনয় করতে গিয়ে খানিকটা খেই হারিয়ে ফেললেন কি? প্রশ্ন থেকেই গেল।’
বুদ্ধিজীবী হত্যার ঘটনাও আছে।শেষটায় অনেক প্রশ্ন জমে আছে।শেষ হয়ে ও হলো না শেষ।রঞ্জু সঞ্জুর আরেক ভাই লিটু আনাম (নাম ভুলে গেছি) কই? বিন্তির কি হলো? ব্যক্তিগত রেটিং ৫.৫/১০।পরিশেষে বলব, যুদ্ধের মুভি আরও আরও চাই।আমাদের মুক্তিযুদ্ধ আমাদের ইতিহাস। আমাদের সম্পদ। প্রজন্মের কাছে এটাকে বার বার তুলে ধরা আমাদের দায়িত্ব।
১৯৭১ সেই সব দিন
অভিনয়: ফেরদৌস, সজল, লিটু আনাম, মিলন, তারিন, সানজিদা প্রীতি, সাজু খাদেম প্রমুখ।
পরিচালক: হৃদি হক
সংগীত: দেবজ্যোতি মিশ্র
মুক্তি: ১৮ আগস্ট, ২০২৩