জীবন বড় সুন্দর ॥ সালমা তালুকদার


জীবন বড় সুন্দর

জীবিকার জন্য হোক আর সময়ের প্রয়োজনেই হোক,
লেখাপড়াটার ওপর জোর দিয়েছিলাম
অনেক বেশি।
সেশনজট এর পাল্লায় পড়ে
শিক্ষা জীবনের পরিসমাপ্তিটা বোধ করি
বড্ড দেরিতেই আসলো।
যতদিন স্যারদের লেকচার শুনেছি
আর রুমে ফিরে পড়ায় ডুবে যাওয়ার আগে ভেবেছি,
আহ! জীবন কত সুন্দর।

কিংবা ক্লাসের ফাঁকে
ক্যান্টিনে বসে আড্ডা দিয়েছি আর ভেবেছি,
আহ! জীবনটা কতই মধুর।

হয়তো বা টিএসসিতে বসে
আসর মাতিয়ে রেখেছি,
আর মাঝখানে চিৎকার করে বলেছি
‌‌মামা, ১০ কাপ কফি রেডি করেন’
তখন জীবনটা এত কঠিন ভাবিনি।

একুশে ফেব্রুয়ারি,পহেলা ফাল্গুন,
পহেলা বৈশাখ
এরকম কতো বিশেষ দিনে
শাড়ি,রেশমি চুড়ি পরে,
ঘণ্টার পর ঘণ্টা, রাস্তার পর রাস্তা
হেঁটে বেড়িয়েছি বন্ধুদের সাথে।

হাঁটতে হাঁটতে কখনো হয়তো বন্ধুর থেকে আনা জুতোর ফিতেটা ছিঁড়ে গেলো
মন খারাপ করে বললাম,
‌সখি তোর জুতোটা কানা করে দিলাম।’
সখি মিষ্টি করে হেসে বলল,‌ তাতে কি! যখন বড় ব্যাংকে চাকরি করবি,
তখন না হয়
নতুন দু-জোড়া জুতোর সাথে
পুরোনো এই জুতোটাও দিয়ে দিস। মনে থাকবে।”
হাসতে হাসতে সখীরা আমরা
গড়াগড়ি খাই।

ছেঁড়া স্যান্ডেলটা হাতে নিয়েই আবার হাঁটতে থাকি।
ভেবেছি,আহ! জীবন কত সুন্দর।

পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর
যে যার যার জীবিকার সন্ধানে চলে গেল।
কারো বিয়ে হয়ে গেলো,
হয়তো কারো কঠিন অসুখে
মৃত্যু হয়ে গেলো।

আর আমি!
ভার্সিটির ক্লাস, ক্যান্টিন আর পরীক্ষার
খাতায় ঝড় তোলা মেয়েটি।
সারা জীবনের সঞ্চয় করা
সার্টিফিকেটের ফাইলটা বুকে নিয়ে
হেঁটে বেড়াই।
আর, এক অফিস থেকে অন্য অফিসের দরজায় কড়া নাড়ি।
আজও হাঁটতে হাঁটতে আমার স্যান্ডেলের
ফিতে ছিঁড়ে যায়।
টিউশনির টাকায় ফুটপাত থেকে
কেনা সস্তার স্যান্ডেল।

আজ আর কোনো সখীর সাথে দেখা হয় না,
দেখা হলেও স্যান্ডেল ধার করার কথা
মনে হয় না।
আগের ধারই যে শোধ করা বাকি।
মা, খালা বিয়ের জন্য পাত্র খুঁজতে গিয়ে
আজ বড্ড ক্লান্ত।
ছেলেরা নাকি কচি খুকি চায়,
বুঝদার বুড়ি খুকি নাকি তাদের
মাথা চিবিয়ে খায়।

এখন একটাই আশা
স্যান্ডেলের তলা ক্ষয় হয় হোক,
পায়ের তলা যেন ক্ষয় না হয়।
একটা রুটি রুজির ব্যবস্থা করতে গিয়ে
পায়ের তলার চামড়া ক্ষয় হলে,
স্বনামধন্য ডাক্তারের পকেট ভরতে
আজ আর কেউ এগিয়ে আসবে না।