আপনার জন্মদিন
আপনার জন্মদিনটাকে নিজের জন্মদিন ভেবে ভুল করি
ভুল করি নাকি ঠিক করি
আমার তো কেবলই মনে হয় আপনার জন্মদিনটাই আমার জন্মদিন
আমাদের সকলের জন্মদিন
প্রতিটি বাঙালির জন্মদিন
আমাদের এই সোনার বাংলার জন্মদিন
এমনিতে আমি রাত দশটায় ঘুমিয়ে পড়ি
ঘুমে আমার দুচোখ লাল হয়ে আসে
কিছুতেই জেগে থাকতে পারি না রাত জাগার প্রগাঢ় প্রবর্তনায়
অথচ সতেরোই মার্চ রাত বারোটাতেও আমার সাদাকালো চোখ থাকে নিদ্রার নিয়ন্ত্রণমুক্ত
আমার স্বাধীন রক্তপ্রবাহ থাকে বর্ষার প্রমত্তা পদ্মার স্বভাবে প্রগলভ
শরীরের প্রতি কোষে কোষে বাজে শরতের বাঁশি
হৃদয় নন্দনবন রঙিন হয়ে ওঠে বসন্তের প্রিয় পুষ্পগুচ্ছে
এ রাতে তিথি না-থাকলেও চাঁদ তার পূর্ণিমারূপ মেলে ধরে
রাত পোয়ালে শিশুসূর্য এসে উঁকি দেয় শ্যামল বাংলাদেশের দক্ষিণ জানালায়
প্রতি কণ্ঠে বাজে রবীন্দ্র সংগীত
যেদিন ঘরে ঘরে খুলে যায় দ্বার
যেদিন সূর্য-ওঠা সফল হয় সবার
না, সেদিন শুধু আপনার জন্মদিন নয়
সেদিন আমারও জন্মদিন
সেদিন আমাদের সম্মিলিত জন্মদিন
আপনার জন্মদিন মানে
আঁধার পার হয়ে অভিষেক স্বাধীনতার
আপনার জন্মদিন মানে
সোনার ঘটে আলোক ভরে অভিষেক মানবতার
পুরোনো ছন্দ
গোধূলিতে ওড়ে না ধুলো আর
চোখে পড়ে না গরুর পাল
ওলানে দুধের ধারা নিয়ে ঝিমোয় খামার
রাখাল কাকে বলে জানে না মাঠের দুপুর
কপাট বন্ধ করে ঘুমোয় যুবতীরা
আজকাল পুকুরঘাট স্মৃতির জলে ভাসে
জলেভাসা সাবানের ঘ্রাণে অনিদ্রায় ভোগে না রাত্রি
কথা আছে,কবিতাও
তবু কেউ কেউ একা ঘরে খিল তুলে দিয়ে মিশে যায় শেষ কুয়াশায়
অথবা বৃষ্টিতে ফুটে থাকে কদমগুচ্ছে
আজব জন্তুরা এসে ঘিরে ধরে সময়ের চৌহদ্দি
গন্ধের পিছু তাড়া করে স্বাদ
আগরের ধোঁয়ায় চেনা মুখ অচেনা হয়ে যায়
তবু হঠাৎ মাঝরাতে ফিরে আসে পুরোনো ছন্দ
সংগীতের কনিষ্ঠ আঙুল ধরে হয়তো পৃথিবী নিজেকে খুঁজে পায়
হারানো হিয়ার নিকুঞ্জ পথে।
যদি তুমি ভুলে যাও
নিন্দুকেরাও আমার স্মরণ শক্তিকে স্বীকার না-করে পারে না
আজও ভুলিনি সিলেটে শৈশবে রেডিওতে শোনা প্রথম প্রিয় গান
সেই কবে হবিগঞ্জে কোন কিশোরী আমাকে কী লিখেছিল
হুবহু মনে আছে তার ভুল বানানগুলোসহ
মনে পড়ে ফেনীতে নির্জন দুপুরে খালি বাসায়
পাড়াতুতো বড়বোনের তপ্ত চুম্বন আমার তরুণ গালে
বিস্মৃত হইনি যৌবনের প্রারম্ভে কুমিল্লায় রানির দীঘির পাড়ে
বন্ধুদের আড্ডার অজস্র সংলাপ
কিন্তু তা বলে ভেবো না ভুলে যাওয়ার সামর্থ আমার নেই
আমিও ভুলে যেতে পারি
যদি তুমি ভুলে যাও
অলঙ্করণ: নূরুল আসাদ