বিশ্বজুড়ে চলছে কোভিড-১৯ এর দ্বিতীয় ঢেউ। নতুন রোগী শনাক্তের হার বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি সমানতালে বেড়ে চলেছে মৃত্যুর সংখ্যা।স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে ইতোমধ্যে দশ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। করোনায় বদলে গেছে বিশ্ব। বদলেছে মানুষের জীবনযাপন। শিল্প-সংস্কৃতিতেও এর প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে। এ নিয়ে যােগসূত্রের এ আয়োজন। এবারের সাক্ষাৎকার পর্বে পড়ুন কথাসাহিত্যিক ইশরাত তানিয়ার লেখালেখি নিয়ে।
যােগসূত্র: লকডাউনে কী পড়ছেন, কী লিখছেন?
ইশরাত তানিয়া: প্যান্ডেমিকের দ্বিতীয় ঢেউ যে এতটা তীব্র হবে ভাবিনি। মৃত্যুর মহাস্রোত কাকে যে কখন খড়কুটোর মতো ভাসিয়ে নিয়ে যাবে কেউ জানে না। এত মৃত্যু, অক্সিজেন আর আইসিইউয়ের জন্য হাহাকার এসবের মধ্যে পড়ায় মন বসানো কঠিন। আবার এটাও সত্য দুশ্চিন্তা আর উদ্বিগ্নতা থেকে মনটাকে সরিয়ে আনতে হলে পড়া বা লেখায় মগ্ন হওয়ার বিকল্প নেই। সদ্য পড়ে শেষ করলাম অধাপক ও গবেষক সোনিয়া নিশাত আমিনের ‘বাঙালি মুসলিম নারীর আধুনিকায়ন’। বইটির অনুবাদ করেছেন পাপড়িন নাহার। নোবেলজয়ী সাহিত্যিক জ্যঁ মারি গুস্তাভ লা ক্লিজিও’র উপন্যাস ‘দি আফ্রিকান’ পড়া শুরু করেছি। এর সাথে পড়ছি চিনুয়া আচেবের গল্প। লিখছি গল্প আর প্রবন্ধ। যখন যেটা লিখতে মন চায়। তবে এই লকডাউনে পড়ার তুলনায় লেখাটা কম হচ্ছে।
যােগসূত্র: কীভাবে কাটাচ্ছেন লকডাউনের দিনগুলো?
ইশরাত তানিয়া: লকডাউন বলে আমার আলাদা কোনো ছুটি নেই। এক বছর ধরেই তো অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছি। লকডাউনের আগেও নিতান্ত প্রয়োজন না হলে ঘরের বাইরে যাইনি। তাই এই লকডাউনে নতুন করে কোনো কিছুর সাথে সামঞ্জস্য করতে হয়নি। তবু একটা চাপা উদ্বেগ তো আছেই। নিজের জন্য যতটা, সন্তান ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের জন্য তারচেয়ে কম উদ্বিগ্ন নই। এক নাগাড়ে হোম অফিসের সুযোগ সবার নেই। লকডাউনও দফায় দফায় বাড়ানো হবে। সব মিলিয়ে মানসিকভাবে সুস্থির থাকা কঠিন। তবুও সময় আর জীবন থেমে নেই। অনলাইন ক্লাস, পরিবারের সাথে সময় কাটানো, পড়া আর লেখাতেই মূলত সময় কাটছে। আর ঘরের কাজ তো অফুরান। এর কোনো শেষ নেই।
মানুষের দুর্দশা দেখে স্বস্তি উড়ে গেছে। এই প্যান্ডেমিক পরিস্থিতিতে লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে কিভাবে যাকাত দিলে অধিক কার্যকর হবে এ নিয়ে পরিকল্পনা করছি। সম্ভব হলে ঈদে শুধু বাচ্চাদের জন্য অনলাইনে জামা কিনব। নতুন পোশাক না হয় ঘরবন্দী বাচ্চাগুলোকে সামান্য আনন্দ দিক।
যােগসূত্র: কোভিড-১৯ শিল্প-সংস্কৃতিতে কী প্রভাব ফলেছে?
ইশরাত তানিয়া: জনজীবনের এমন কোনো দিন নেই যেখানে কোভিড- ১৯ প্রভাব ফেলতে পারেনি। কোভিড আক্রান্তদের শারীরিকভাবে লড়াই করতে হচ্ছে। মানসিকভাবে তো বটেই ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক কোনো দিক থেকেই কোভিড ছাড় দেয়নি। শিল্প-সাংস্কৃতিক সব আয়োজন এক বছরের বেশি সময় ধরে কার্যত বন্ধ। সীমিত পরিসরে বাস্তবায়ন আর কতটুকু কার্যকর হয়? অনলাইনে কতটুকুই বা সম্ভব? ব্যক্তিগতভাবে মানুষ যে দুর্দশায় পড়েছে এতে সৃজনশীলতার ক্ষতি হয়েছে। চাকরি হারিয়ে কিংবা চাকরি থাকলেও অনিয়মিত বেতনে, আংশিক বেতনে সৃজনশীলতার চর্চা ও বিকাশ সম্ভব বলে মনে করি না।
যােগসূত্র: কীভাবে করোনা থেকে উত্তরণ সম্ভব?
ইশরাত তানিয়া: এ প্রশ্নের উত্তর যদি মানব সমাজের জানা থাকত তাহলে এই ভয়াবহ দুর্দিন দেখতে হতো না। এবার শীতের শেষে রাস্তাঘাটে মানুষের ঢল দেখে শঙ্কিত হয়েছিলাম। সামান্যতম স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই। মাস্ক পরা, হাত ধোয়া, স্যানিটাইজ করা থেকে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিল। ফল তো এখন সবাই ভুগছি! আদৌ কি দু-চার বছরে উত্তরণ সম্ভব? মনে হয় না। আগামী দু বছরের জন্য মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে করোনাভাইরাস সংক্রমণের গতি যদি কিছুটা কমে! নিও নর্মাল জীবনের সাথে অভ্যস্ত হতে হবে। এছাড়া উপায় দেখি না।
যোগসূত্র: ধন্যবাদ সময় দেওয়ার জন্য
ইশরাত তানিয়া: যোগসূত্রকে ধন্যবাদ জানাই।