কোভিড-১৯ চিন্তার জগতে তরঙ্গ তুলেছে, লেখকের ব্যক্তিগত জগতেও ॥ জাহেদ সরওয়ার


বিশ্বজুড়ে চলছে কোভিড-১৯ এর দ্বিতীয় ঢেউ। নতুন রোগী শনাক্তের হার বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি সমানতালে বেড়ে চলেছে মৃত্যুর সংখ্যা।স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে ইতোমধ্যে দশ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। করোনায় বদলে গেছে বিশ্ব। বদলেছে মানুষের জীবনযাপন। শিল্প-সংস্কৃতিতেও এর প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে। এ নিয়ে যােগসূত্রের এ আয়োজন। এবারের সাক্ষাৎকার পর্বে পড়ুন কবি, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক জাহেদ সরওয়ারের লেখালেখি নিয়ে।

যোগসূত্র: লকডাউনে কী পড়ছেন, কী লিখছেন?
জাহেদ সরওয়ার: লকডাউন না সবসময়ই তো কিছু না কিছু পড়তেই থাকি। বই তো জীবনের অংশ হয়ে গেছে। তবে সম্প্রতি পড়া দুইটি ভালো বইয়ের নাম বলা যেতে পারে। পরমাভাষার সংকেত। লেখক কলিম খান। আরেকটা রবিশঙ্কর বলের আয়নাজীবন উপন্যাস। ইউক্লিডের এলিমেন্টস পড়ছি এখন।

লেখার মধ্যে কিছু কবিতা লেখা হলো। কয়েকটা প্রবন্ধ লিখলাম। ঘটনা হচ্ছে লকডাউনে কিছু করার নাই বলে ছুটিয়ে লেখাপড়া করা যাবে এমনই ধারণা। কিন্তু সারাক্ষণ মহামারির দুশ্চিন্তা আমাদের তাড়া করছে। ফলে লেখা বা পড়ার জন্য যে মনোযোগ বা মেজাজের দরকার সেটা পাওয়া যাচ্ছে না।

যোগসূত্র: কীভাবে কাটাচ্ছেন লকডাউনের দিনগুলো?
জাহেদ সরওয়ার: ইউটিউবের জন্য কিছু কন্টেন্ট ক্রিয়েট করি। জীবিকার জন্য দুশ্চিন্তা করি। দেশ দুনিয়া মানুষের জন্য দুশ্চিন্তা করি। যেকোনো দুর্যোগে কিছু মানুষ নৈরাজ্যিক হয়ে যায়, অপরাধ প্রবণতা বেড়ে যায়। এসব থেকে কিভাবে বাঁচা যায়, তাই ভাবছি। কিছুটা সময় শরীরচর্চা করি। ইদানিং কারাওকেতে গানও চর্চা করছি। সবই ভালো থাকার ছল।

যোগসূত্র: কোভিড-১৯ শিল্প-সংস্কৃতিতে কী প্রভাব ফলেছে?
জাহেদ সরওয়ার: প্লেগ মহামারি নিয়ে সাউথের লেখক ইউ আর অনন্ত মূর্তির ‘সংস্কারা’ বলে অসামান্য একটা উপন্যাস পড়েছিলাম। ক্যামুর প্লেগ আছে। মহামারি নিয়ে অনেক সাহিত্য শিল্পকর্ম আছে। কিন্তু সেসব মহামারির ভেতর রচিত হয়নি। হয়েছিল মহামারি স্তিমিত হবার পর। যে যতই বলুক কোভিড- ১৯ আমাদের কাঁপিয়েছে, কাঁপাচ্ছে এখনো। তার মানে সে চিন্তার জগতে ব্যাপক তরঙ্গ তুলেছে। লেখকের ব্যক্তিগত জগতেও। লেখকরা তরঙ্গায়িত হলে খুব বেশি কাজ করতে পারে না। এখন এই তরঙ্গায়িত সময়ে হয়তো কাজ হবে না। যদি কখনো এটা থামে তখন নিশ্চয়ই ভালো কিছু কাজ দেখতে পাবো আমরা। শিল্প-সংস্কৃতির যে প্রোডাকশন প্রসেস, ডিস্ট্রিবিউশন প্রসেস এসবেও ব্যাপক প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে।

যোগসূত্র: কীভাবে করোনা থেকে উত্তরণ সম্ভব?
জাহেদ সরওয়ার:এই প্রশ্ন আসলে নীতি-নির্ধারকদের জন্য। একজন কবি বা সাহিত্যিক এই প্রশ্নের জবাব দিতে পারে না। এটা কোনাে ঝাড়ফুক, তুকতাকের ব্যাপার নয়। পৃথিবীতে বায়ুমণ্ডলে নানারকম পরিবর্তন আসছে। পরিবেশ বদলে যাচ্ছে। আমরা আরও নানা ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হতে পারি। মানববসতি বিপন্ন হতে পারে। মানুষের আত্মবিশ্বাস কতটুকু বাকি আছে হয়তো সেসব পরীক্ষা দেওয়ার সময় ঘনিয়ে আসছে।