মেঘলা আকাশ ॥ আনোয়ার রশীদ সাগর


এপিঠ-ওপিঠ

প্রণয়ের এই বরষায় মেঘের কোলে কুর্নিশ ঠেকিয়ে কেঁদে ওঠে আকাশ
বিষণ্ন নগরের চোখে চারিদিকে জলের ঢেউ,
মেঘের এই ক্ষরণে কারো চোখে কান্না কারো চোখে আনন্দ বন্যা।
কিশোরী চাঁদ মাঝে মাঝে উঁকি দেয় প্রেম আলিঙ্গনে
মাঝে মাঝে আড়াল হয় ঘনমেঘের ভিড়ে
এও এক মহালুকোচুরি যেন, গাঁয়ের নববধূটি
প্রণয়ের আনন্দ ছেড়ে মায়ের আঁচলে মুখ লুকোতে চায়।

বৃষ্টিভিড়ে সবুজবন হেসে হেসে দোল খায়,
কোথাও জলবন্যায় হাবুডুবু খায় বেঁচে থাকার আকুতি;
ছেড়া পালকে পাখি পাতার আড়ালে শিশু বাঁচাতে মরিয়া,
কীটপতঙ্গ শিকারের আনন্দে দোয়েল দোলে মেঘবরষায়।
কোথাও ধূসর ব্যথা কোথাও সুখ পায়রা
এও এক জীবনের উল্থান-পতন।

রোদহীন মাঠে হেসে ওঠে কচি ধানের বেড়ে ওঠা
ছুঁতে চায় আকাশ,
পায়ের নিচে আগাছার আহাজারি বন্যা বন্যা গো।
জীবনজুড়েই জলউল্লাস আর বিষণ্নতার মাঝে
আনন্দ-সুখ-সঙ্গমও থাকে লুকিয়ে
লুকিয়ে থাকে জয়ধ্বনি পাওয়ার পূর্ব পরিশ্রম।

মেঘলা আকাশ
বেদনার আকাশ থেকে মেঘ ভেঙে, বৃষ্টি ঝরে ঝরঝর;
চার দেওয়ালের ভিতর কবুতরের ডানা ঝাপটানো শুরু হয়,
শুরু হয় স্মৃতিময় দুপুর, হতে হতে হারিয়ে যায়
ডানকানা মাছের খেলায়,ডাঙগুলির গুলি ছোঁড়া,নদীর বুকে ঝাপড় খেলা-
খেলতে খেলতে কখন যে চলে আসি কলেজ মাঠে মনে থাকে না,
মনে থাকে না-ঘরে বসে বৃষ্টিঝরা দেখি।

দেখি সন্ধ্যাতারার মেলা, উঠোন ভর্তি জীবনের গান
গানে গানে বিরহসুর এসে, কানে কানে বলে যায়
তুমি শুধুই স্মৃতি,
স্মৃতি-মাঠ থেকে ঘোলা পানি নেমে যাওয়ার কলকল শব্দ
পুটি মাছের ঝাকের দাপাদাপি, ট্যাংরা মাছের পালিয়ে যাওয়ার স্মৃতি।
কলেজ মাঠের সেগুন গাছর গল্প,
গল্পে গল্পে জীবন হয় উপন্যাসের পাণ্ডুলিপি
জীবন হয় কবিতার পাণ্ডুলিপি।

কখন মেঘ চলে যায়, আকাশে সূর্য বীরত্ত্ব দেখায়;
কাছিম মুখে লুকিয়ে পড়ি সংসারে-
ঝালের টাকা,মাছের টাকা,পটলের টাকা, মুরগির টাকা,
বিদ্যুৎবিল, ছেলের বেতনের টাকা।টাকা-টাকা-টাকা?
বলো এত্তসব মনে রাখি কী করে !
ভাবতে ভাবতে ডুবে যায় তোমাকে নিয়ে
আশ্চার্য এক বিস্ময়, ঠিক তখনই তুমি ফোন করো
ফোনে ফোনে কথা ও কবিতায় ভালোই যেতে থাকে সময়।
হঠাৎ ছায়া এসে দাঁড়িয়ে থাকে, দরজায়।
কষ্ট জমতে থাকে আমার আকাশে
থেমে যায় স্রোতের সুর,
তুমিও বলে ফেলো আল্লাহ হাফেজ।

আচ্ছা তুমি কী দূর থেকে বুঝতে পারো
আমার আকাশে মেঘ জমেছে?
তা না হলে কেন মধুময় আলাপন থেমে যায়
কেন কারো আগমনে ফোন কেটে দাও?
কত প্রশ্ন
মেঘলা দিনে
করে যায় মনে মনে
সে কথা কেউ জানে না।
তুমিই কী জানো-
চলমান নদী,আকাশ অথবা প্রখর দুপুর?