উপ-বিকল্প সম্পাদকীয় ॥ মোহাম্মদ নূরুল হক


স্রোতের নামতা

ডালিম দানার মত লাল লাল কামুক সূর্যাস্তে
লাফিয়ে উঠুক মুঠোবন্দী রাধিকার স্তন। আর—
সমস্ত আকাশ সেই শিক্ষিত মন্থন দৃশ্য দেখে
নাক্ষত্রিক বেদনায় কেঁদে কেঁদে উঠুক এবার।

জ্বলন্ত সূর্যের ঠোঁটে চুম্বন এঁকেছি চণ্ডিদাস।
আয় রজকিনী ঘাটে—রসের দীঘিতে আমি ঢেউ।
নদী নদী জল এনে—আয় তৃষ্ণা মেটাবি দিঘির।

জানি তোর কোমরের কলসে প্রেমের বিষ নাচে
তোর চুলের বেণীতে ফণা তোলা সাপের নিশ্বাস
তোর চোখের তৃষ্ণায় পুড়ে খাক সহস্র সমুদ্র
চান্দের আন্ধারে নামে গেলাশ গেলাশ প্রিয়ঘুম
আমি ঘুম পান করি—রাত খাই কালান্ধ সন্ধ্যায়
বয়স্করাতের দীঘি ঢেউ তোলে শরীরে আমার।

তোর গতরের নদী স্রোতের নামতা শেখে নাই?

লাল মাছি
একটি লাল মাছির গান শুনে জেগে উঠে দেখি
আমার সামনে তুমি—
অন্ধনদীর সতিন হয়ে বসে আছ একা একা!
আমি স্রোতের নামতা ভুল করে গেয়ে উঠলাম
তোমার নামে নিটোল কোনও সন্ধ্যার স্বরলিপি।

আমাদের দক্ষিণের বারান্দায় নাকি বহুদিন
ঘুমিয়েছিল সম্ভ্রান্ত রাত
অথচ রাত্রির গানে কোনওদিন সুর সাধিনি!

আমি বাউল ছিলাম; তেপান্তরে হাঁটিনি কখনও
অথচ তোমরা শুধু শুনে গেলে তীব্র পদধ্বনি!
অন্ধ রাতের মগজে সূর্য ডুবে গেলে—
আমি একা পার হব লাল মাছি জেগে থাকা মাঠ?

কাউকে চাই না আজ সূর্যকান্ত রাতের শয্যায়!

জলের অক্ষরে লেখা রূপকথাগুলো
কেবলই স্বপ্ন আর বাস্তবের তুমুল অমিলে
পৃথিবী ও হৃদয়ের দূরত্ব মেপেছি
ভেবেছি—মৃত্যুর দিন মানুষেরা পতঙ্গস্বভাবে
ঘুরে ঘুরে স্বপ্ন দেখে তরল রাত্রির।

আকাশে উড়ন্ত নদী ডানার পালক গিলে খায়
কুমারী স্তনের মতো থরোথরো রোদের অসুখ
বহুদিন বৃষ্টি নেই মাঠে মাঠে গলিত আগুন
আমাদের দৃষ্টি তবু সূর্য ভালোবাসে!

চারিদিকে রোদের মিছিল
বাতাসেরা উড়ে উড়ে মেঘের সন্ত্রাস
চোখের কোটরে নামে ফালি ফালি লাল তরমুজ
ত্রিভুজ বাতাসে ভাসে রোদের পালক
আর ফেরারি যৌবন
শিমুল তুলার মতো নেমে আসে বয়স্ক দুপুরে

আমাদের মনে হতে থাকে
এখানে শ্রাবণ ছিল—বৃষ্টি হতো প্রার্থনার মতো
অবিকল প্লাবনের দিন—
লখিন্দর দেখেছিল গাঙভরা মৃতের ভাসান
মনে হতে থাকে—
এভাবে নীল কমল ফুঁসে উঠেছিল
ক্রোধের আগুন তার জ্বলেছিল রক্তের ভেতর।

উপ-বিকল্প সম্পাদকীয়
হঠাৎ ক্ষেপে উঠলে মনে হয় পৃথিবীটা আস্ত বানচোদ
চারিদিকে কেবল স্বার্থের হোলি।

আবাল্য গ্রামে ছিলাম—মাঠের রাখাল
শ্লীল-অশ্লীল বুঝিনি
হঠাৎ ক্ষেপে উঠলে—দিয়েছি গর্জন
আমার গর্জনে কেঁপে কেঁপে উঠেছিল
তেপান্তরের মাঠ—শান্ত দিঘি, দুরন্ত নদীও।

নগরে এসেছি বলে
ভুলে যাইনি আজও সেই সমুদ্রের ডাক
কেউ লাঠি হাতে সামনে দাঁড়ালে
আজও নির্ভয়ে বলে দিতে পারি—কাউরে চুদি না।

মানুষের কত গল্প থাকে
মানুষের কত রকমের গল্প থাকে
কারও বন্ধুর গল্প—
কারও কারও থাকে পূর্বপূরুষের
বীরত্বের গাথা—সমুদ্রজয়ের কথা!

কারও কারও পূর্বপূরুষ ছিলেন
বাবা আদমের মতো
কারও বা আলেকজান্ডার।
এসবই তারা অতীতের গল্পচ্ছলে
বলে।

আর বর্তমান? আরও নাকি উজ্জ্বল।
কারও বন্ধুরা র‌্যাবে আছে,
কারও বন্ধু আর্মিতে
কেউ কেউ ম্যাজিস্ট্রেট
কারও কারও বন্ধু আবার সচিব
এমপি-মন্ত্রীর পুত্র।

এই বন্ধুভাগ্যঅলা যুবকেরা ঠিক
সন্ধ্যার আন্ধারে বসে
এইখানে ঝিলপাড়ে
করে গল্প, নিজেদের আর প্রেমিকার
আর করে বন্ধুদের নানা বীরত্বের।
আমি চুপচাপ শুনি।

আমার কোনও বন্ধু নেই
না সচিবালয়ে না পুলিশে—আর্মি—র‌্যাবে
তাই আমার কোনো গল্প থাকে না
এসব আড্ডায়।

আমার থাকে পেছনে
মেঘের কার্নিশ বেয়ে নেমে আসা
মাইল মাইল রাত্রি—গাঢ় অন্ধকার
আর থাকে—
রূঢ় বর্তমান—সূর্যকে কপালে রেখে
উদয়াস্ত হেঁটে চলা গন্তব্যের দিকে।
আর থাকে
নির্বান্ধব পিচ্ছিল রাত্রির দীর্ঘশ্বাস!