বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক পদে আলোচনায় যারা


সেলিনা হোসেন, মুহম্মদ নূরুল হুদা (মাঝখানে), বিশ্বজিৎ ঘোষ

কে হচ্ছেন বাংলা একাডেমির নতুন মহাপরিচালক- এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক নেই এক মাস দুই দিন। চলছে ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক দিয়ে। দায়িত্ব পালন করছেন একাডেমির সচিব এএইচএম লোকমান।

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে সর্বশেষ ছিলেন কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী। কোলন ক্যানসারে আক্রান্ত তিনি গত ২৪ মে (২০২১) মারা যাওয়ার পর থেকে গুরুত্বপূর্ণ পদটির জন্যে সংস্কৃতি অঙ্গনের অনেকের নাম শোনা যাচ্ছে।

যারা আলোচনায়
গত ২৬ জুন প্রকাশিত দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকার অনলাইনে এক প্রতিবেদন বলছে, যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তাদের মধ্যে শীর্ষে আছেন বাংলা একাডেমির সাবেক পরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। তিনি ষাটের দশকের শক্তিমান কবি হিসেবে সারাদেশে পরিচিত। এর আগে নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ও জাতীয় পর্যায়ে নজরুল জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন কমিটির শীর্ষ দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।

ডেইলি স্টার জানায়, আলোচনায় আছেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ। তিনি প্রাবন্ধিক ও গবেষক। ১৯৮৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। ২০১৭ সালের ১১ জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাকে চার বছরের জন্য রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেয়। গত ১০ জুন তার মেয়াদ শেষ হয়।

আলোচনায় আছেন কথ্যসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। তিনি ১৯৭০ সালে বাংলা একাডেমির গবেষণা সহকারী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৯৭ সালে বাংলা একাডেমির প্রথম নারী পরিচালক হন। ২০০৪ সালের ১৪ জুন চাকরি থেকে অবসর নেন। তবে, তিনি মহাপরিচালক হলে বাংলা একাডেমির ইতিহাসের দ্বিতীয় নারী মহাপরিচালক হবেন। প্রথম নারী মহাপরিচালক ছিলেন ড. নীলিমা ইব্রাহিম।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র ইংরেজি অনুবাদক ফকরুল আলমের নামও শোনা যাচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সাবেক ও ইউজিসি অধ্যাপক ড. ফকরুল আলম বিশ্ববিদ্যালয়ে নবপ্রতিষ্ঠিত ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর পিস অ্যান্ড লিবার্টি’র পরিচালক হিসেবে ২০২০ সালের ৬ অক্টোবর থেকে দায়িত্ব পালন করছেন।

আলোচনায় আছেন নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ আজিজুল হক ও জাতীয় কবিতা পরিষদের সেক্রেটারি কবি তারিক সুজাতও।

ডেইলি স্টারের প্রতিবেদনে বলা হয়, এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক এএইচএম লোকমান বলেন, ‘নিয়োগে আর বেশি সময় লাগবে না বলেই মনে হচ্ছে। তবে, কে আসবে জানি না। কারণ, আমরা একাডেমি থেকে কারো নামও প্রস্তাব করি না। এটি সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব।’

সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, ‘খুব দ্রুত বিষয়টি চূড়ান্ত হবে। আমরা প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়েছি। তিনি তাদের মধ্য থেকে যোগ্য ব্যক্তিকে মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেবেন।’

বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সম্প্রতি আমরা তিন জনকে হারিয়েছি। যাতে বাংলা একাডেমির অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। বাংলাদেশের জন্যেও তারা গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন। এমন মেধা-মননের মানুষ আর পাব কি না, সন্দেহ।’

‘এখন তাদের স্থানে কারা আসবে জানি না। প্রত্যাশা করব যোগ্য লোকই পাবে বাংলা একাডেমি’, বলেন তিনি।

উল্লেখ্য, এর আগে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হয়েছেন অধ্যাপক মযহারুল ইসলাম, ড. নীলিমা ইব্রাহিম, ড. মুস্তাফা নূরউল ইসলাম, ড. আশরাফ সিদ্দিকী, কাজী মুহম্মদ মনজুরে মওলা, অধ্যাপক আবু হেনা মোস্তফা কামাল, অধ্যাপক মাহমুদ শাহ কোরেশী, অধ্যাপক মোহাম্মদ হারুন-উর-রশিদ, অধ্যাপক আবুল মনসুর মুহম্মদ আবু মুসা, অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম (বর্তমানে বাংলা একাডেমির সভাপতি), অধ্যাপক ড. আবুল কালাম মনজুর মোরশেদ, অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ, শামসুজ্জামান খান এবং হাবীবুল্লাহ সিরাজী।

তথ্যসূত্র:
১। ডেইলি স্টার, জুন ২৬, ২০২১
২। বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর, জুন ১, ২০২১